
হাফিজুর রহমান /হাবিবুল্লাহ বাহারঃ- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এমপি, উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে জেলা পরিষদের নাকের ডগায় নাজিমগঞ্জ বাজারে সরকারি গরুর হাটের জায়গা প্রভাব খাটিয়ে দখল করে হাত কাটা রনি বাহিনীর বালু ব্যবসায় অতিষ্ট এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারের পেরিপেরি ভুক্ত সরকারি খাস জমির উপর গরুর হাটের জায়গায়। নদী থেকে বালি উত্তোলনের ফলে বাজারে সরকারি জায়গায় বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারগুলো ধুলো এবং পানিতে বাড়ী ঘর ডুবে যাওয়ায় বের হতে না পেরে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। উক্ত ঘটনায় নাজিমগঞ্জ বাজারে বসবাসকারী ভূমিহীন ওয়ারেশের স্ত্রী নূরনেছা, মিজানের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন, আব্দুর রউফের পুত্র নূর আলম, সমশের গাজীর পুত্র আব্দুর রহিম, পুটের পুত্র আবু সাঈদ, মোস্তাফিজুর রহমান, রাবেয়া খাতুন, সাইদুল ইসলাম এবং ওমর ফারুক সহ একাধিক ব্যক্তি গত ২ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে শীতলপুর গ্রামের অজেদ আলীর পুত্র রনি ও কেনা গং এর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এর আগেও হাত কাটা রনি বাহিনীর নামে অভিযোগ দিয়েও রনি নিজেকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে পার পেয়ে উল্টো বসবাসকারীদের নামে অভিযোগ করে উল্টো উচ্ছেদের নোটিশ পাঠায়। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বিষয়টি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জকে বলেন। ওসির নির্দেশে থানার উপ-পরিদর্শক আশিষ হালদার গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে যেয়ে উত্তোলনকৃত বালু ৪ দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেন। রবিবার বেলা ১১টার সময় সরজমিনে নাজিমগঞ্জ গরুর হাট ঘটনাস্থলে গেলে নুরুন্নেছা, নূর আলম, আব্দুস সামাদ, ওমর আলী সহ একাধিক ভূমিহীন সাংবাদিকদের জানায় হাত কাটা রনিকে প্রতিবন্ধী পরিচয়ে সামনের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে এলাকার পোল্ট্রি সেলিম, রনির ভাই রানা সহ একটি সমবদ্ধ প্রতারকচক্র নাজিমগঞ্জ বাজার কমিটি ও আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতাদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে গরুর হাটে সরকারি জায়গায় দখল করে ৭/৮ বছর যাবৎ বালু ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এ অবৈধ ব্যবসা চালানোর জন্য হাত কাটা রনিকে দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে এমপি’র সুপারিশ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং লোকদের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অবৈধ দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছে। বর্তমান নাজিমগঞ্জ হাট বাজার কমিটির সভাপতি মথুরেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমান মিজানুর রহমান গাইনকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে রনি গং গরুর হাটের জায়গায় বালু উত্তোলন করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বলে জানায়। তবে বিষয়টি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান অস্বীকার করে বলেন আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা তবে শাহিনের সঙ্গে কথা বলেন। রনি বাহিনীর মত অবৈধ দখলদাররা দেখাদেখি নাজিমগঞ্জ বাজারের সরকারি পেরিপেরি ভুক্ত জমি একের পর এক দখল করে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল বহুত্বল ভবন সহ দোকান ঘর নির্মান ও পুরা জায়গা এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে। অবৈধ ঘর নির্মানের খবর পেলে স্থানীয় ভূমি অফিসের তহসিলদার ছুটে এসে নগদ নারায়নে তুষ্ট হয়ে ঘর বাধার কাজের সহায়তা করে চলে যায়। বিষয়টি সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যায়। এজন্য উপজেলা ভূমি অফিস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাপলুডু খেলা। এদিকে নাজিমগঞ্জ বাজারের গরুর হাট দখলের পর অনেক ভূমিহীন পরিবার পানি বন্দী হয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। অবৈধ দখল ঠেকাতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমি যোগদান করার আগে থেকেই নাজিমগঞ্জ বাজারে দখল কার্যক্রম চলে আসছে। রনি নামক ব্যক্তি নিজেকে প্রতিবন্ধী পরিচয়ে এবং আওয়ামীলীগ নেতাদের সুপারিশে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে বিষয়টি জানতে পেরে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দিয়েছি। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে মোবাইল কোটের মাধ্যমে উচ্ছেদ সহ জেল হাজতে পাঠানো হবে। থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন বছর দুই আগে নাজিমগঞ্জে কোনো এক অনুষ্ঠানে বালি উত্তোলনের বিষয়টি আমাকে বলায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেলকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলি। এর বেশি কিছু জানিনা। আওয়ামীলীগ নেতা শাহিনুর রহমান শাহিন সাংবাদিকদের জানান ৩/৪ বছর আগে রনি পোল্ট্রি সাইফুল বাজারের বাথরুম সংস্কার এবং মসজিদ সংস্কারের নামে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে জায়গা দখল করে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও এপর্যন্ত টিন এবং জানালা মেরামত বাবদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে আর দেয়নি। বর্তমান বিষয় সম্পর্কে কিছু জানিনা।