
হাফিজুর রহমান / হাবিবুল্লাহ বাহার ঃ- কালীগঞ্জ উপজেলার বহুল আলোচিত কথিত হোমিও ডাক্তার ঠক, প্রতারক রেজাউল করীম, স্ত্রী কথিত ডাক্তার রীমা আক্তার এবং তার বাবা ভূমি দালাল সামছুর তরফদারের ঠকবাজী ও প্রতারনার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বেলা ১১টার সময় ভুক্তভোগী ও কৃষ্ণনগর সর্বস্তরের জনগনের আয়োজনে কৃষ্ণনগর বাজারে এ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন দুইবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে না পেরে ভুয়া সনদপত্র দিয়ে হোমিও বোর্ডের সনদ নিয়ে উপজেলা কৃষ্ণনগরের পাশে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের পূর্ব দিকে শংকরপুর গ্রামের সামছুর তরফদারের পুত্র রেজাউল করীম ও তার স্ত্রী রীনা আক্তার কোহিনুর হোমিও হল নামক এক ডাক্তারের চেম্বার খুলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেজে কথিত এ্যানালাইজার মেশিনের মাধ্যমে অসহায়, সরল সোজা মানুষের প্রতারনার ফাঁদে ফেলে পরীক্ষা ও রোগ নির্নয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। উক্ত সমাবেশে মহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী আরব আলী, হাফিজুর রহমান, আব্দুস সেলিম, মামুন হোসেন, আরিফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন প্রমূখ। সমাবেশ চলাকালীন সময়ে বাজারের পাশে শংকরপুর গ্রামে কথিত ডাক্তার রেজাউল করীম চেম্বারে বসে বিভিন্ন স্থান হতে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। তার চেম্বারে আসা রোগী শ্রীপুর গ্রামের আছমা খাতুন, দেবহাটার কলিমুদ্দীন, শ্যামনগরের শেফালী পারভীন, প্রতাপ নগরের মহাতাফ সহ একাধিক ব্যক্তি জানান প্রথমে কথিত হোমিও ডাক্তার রেজাউল করীম এবং তার স্ত্রী রীমা আক্তার পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করে ৩শত টাকা ফি নিয়ে রোগ নির্নয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কথিত ডাক্তার রেজাউল করীমের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এ্যানালাইজিজ মেশিনের ফাঁদে ফেলে রোগ নির্নয় করা হয়। পরে রোগীকে মহামারী অসুখের কথা বলে বিভিন্ন ঔষুধের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। তখন ঔষধ না পাওয়ার অযুহাতে কালীগঞ্জ হোমিও হল নামক দোকান হতে ২০ টাকা দিয়ে এক কৌটা বড়ি কিনে তার নিজিস্ব কৌটায় কোহিনুর হোমিও হলের লেভেল লাগিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট হইতে নীচে ৫ থেকে ১০/২০ হাজার টকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এইভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন অ ল থেকে প্রায় ২ শতাধিক রোগী এসে তার আস্তানায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছে বলে জানান। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও থানা হতে আসা রোগীদের রোগ নির্নয়ের সময় মরণ ব্যাধী ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হার্ডের অসুখ, যৌন রোগ, প্যারালাইসিস সহ নানা জটিল রোগের ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে। তবে পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ায় তার বাড়ীর সামনে লাগানো সাইনবোর্ডে ডাক্তার লেখাটি কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তার বাবা একজন জমির দালাল ছাড়াও বিভিন্ন হাট বাজারের চায়ের দোকান এবং রোগীদের স্বজনদের নিকট পুত্রবধু এবং পুত্রের গুনগান করে তার চেম্বারে আসার জন্য প্রলুব্ধ করে। এছাড়াও বাজারের বিভিন্ন ভাড়ায় চালিত ইঞ্জিন ভ্যান, ইজিবাইক, মটরভ্যান, মটরসাইকেল চালকদের কমিশনের লোভ দেখিয়ে রোগী আনা নেওয়ার কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। নিজের অপকর্ম ঢাকতে তার বাবা সামছুর কে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে কথিত অনলাইন সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিদের নিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে চেম্বারে বসে লাইভ করে ঔষধ, সার্টিফিকেট, এ্যানালাইজার মেশিন দেখিয়ে নিজেকে বড়মাপের ডাক্তার বলে জাহির করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাড়ীর পাশে কোহিনুর হোমিও চিকিৎসালয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে সাইনবোর্ডে স্বামী-স্ত্রী ডাক্তার লেখা দেখলে মনে হবে এ কোনো বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ভন্ড কবিরাজদের মাধ্যমে রোগীদেরকে রেফার করে তার চেম্বারে আনা হয়। তাদের চেম্বারে গেলে কোনো সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে নামের আগে ডাক্তার লাগিয়ে বহাল তবীয়াতে অপচিকিৎসা চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নাই। সাংবাদিক দেখে দুদলী গ্রামের রেজাউল এবং তার স্ত্রী জানান তারাও সেখানে প্রতারনার শিকার হয়েছে। একই গ্রামের আল-আমিন বলেন আমার স্ত্রী বেশ কিছুদিন যাবৎ শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলো, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য রেজাউলের বাড়ীতে যাই। ঐসময়ে বিভিন্ন টেষ্ট করার নামে আমার কাছ থেকে ১০হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একই অভিযোগ করেন জনৈক ছাবিনা খাতুন ও সফিকুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি। তারা বলেন পেট ব্যাথা নিরাময়ের জন্য রেজাউল ডাক্তারের বাড়ীতে গেলে একটি মেশিনে পরীক্ষা করে তার লিভার নষ্টের পথে বলে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এইভাবে সকাল থেকে রাত অবধি জানা অজানা বিভিন্ন জেলা, উপজেলা হতে রোগীরা এসে হাজার হাজার টাকা প্রতারনার ফাঁদে দিতে হচ্ছে। এবিষয়ে কথিত ডাক্তার রেজাউল করীমের ব্যবহৃত ০১৭১৪৮৪৭০৯৫ নাম্বারে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সাতনদীকে জানান ২০০৪ সালে কৃষান মজদুর স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেছেন এবং ২০১৪ সালে কালীগঞ্জ কলেজ হতে এইচ.এস.সি পাশ করে সাতক্ষীরা ডিবিখান হোমিও স্কুল থেকে ডিগ্রি এবং এটার্নি করে ডাক্তার হয়েছে। সাইবোর্ডে ডাক্তার শব্দটি লিখতে পারেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে বলেন এখন আমি ডাক্তার লেখা মুছে দিয়েছি। তবে মানুষের সাথে প্রতারণার বিষয়কে অস্বীকার করে বলেন আমি মানুষের রোগ নির্নয় এ্যানালাইজার মেশিনে করে ঔষধ দিয়ে থাকি। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধকে পুুঁজি করে সাংবাদিককে ভুল বুঝিয়ে আমার বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় নিউজ করিয়েছে। আমি আমার বাবাকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জবাব দিয়েছি। আমার সামনে এখন অনেক রোগী এর বেশি কথা বলতে পারবো না।