
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: কালিগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে ১৭৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার মামলায় কালিগঞ্জের বহুল আলোচিত কাশেম হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে পুলিশকে ব্যবহার করে নিজেরা ফেন্সিডিল রেখে অস্ত্র মাদক ব্যবসায়ী আকবর গংরা ফাঁসিয়েছে হত্যা মামলার বাদী আব্দুল্লাহ পাড়কে। বহুল আলোচিত মাদক অস্ত্র ব্যবসায়ী সহ একাধিক মাদক ও হত্যা মামলার আসামী আকবর, খোকন, আলী হায়দার গংরা বাদী আব্দুল্লাকে মাদক মামলায় আসমী করতে পেরে উল্লাস সহ বাদীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে বাড়ী ছাড়া করেছে। কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতি নদী ঘেষা কামদেবপুর, খারহাট এলাকা দিয়ে র্দীঘদিন ধরে মাদক স¤্রাট আকবর গংরা নিয়মিত ভারত হতে ইছামতি নদী পার করে মাদকের চালান এনে থাকে। মামলা থেকে বাঁচতে বাদীকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা গত সপ্তাহে থানা পুলিশের ফেন্সিডিলের আনা-নেওয়ার খবর দেয়। সেই মোতাবেক গত বুধবার সন্ধার পর একটি বস্তায় ১৭৩ বোতল ফেন্সিডিল এনে কামদেবপুর ওয়াপদা ভেঁড়ি বাধে নিচে দুলাল দাশের মৎস্য ঘেরের ভেঁড়ি বাধে রেখে থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক রুপক শাহাকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে সহকারী উপ-পরিদর্শক রুপক সাহা এবং উপ-পরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষন রাত আনুমনিক সাড়ে ৭ টার সময় দুলাল দাশের মৎস্য ঘেরের ভেঁড়ি বাধ হতে ১৭৩ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলের একটি বস্তা উদ্ধার করলেও কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে পারিনি। উক্ত ঘটনায় বুধবার রাতে সহকারী উপ-পরিদর্শক রুপক সাহা বাদী হয়ে কাশেম হত্যা মামলার বাদী আব্দুল্লাকে আসামী করে থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করে। তবে এ ব্যাপারে মামলার বাদী এ এস আই রুপক সাহাকে জিঞ্জাসা করলে তিনি বলেন আসামী আব্দুল্লাহ যে একটি হত্যা মামলার বাদী বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি ঘটনা মিথ্যা হয় তদন্ত করে ঠিক করা হবে। মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক গোবিন্দ আর্কষন বলেন যেহেতু আমি এই থানায় নতুন যে কারণে অনেক কিছুই আমার অজানা। বিষয়টি আমি তদন্ত করে মূল রহস্য উৎঘটন করবো। তবে মাদক মামলার আসামী আব্দুল্লা পাড় এ প্রতিনিধিকে বলেন আমি মাদক ব্যবসা করিনা। তাছাড়াও ২০১৭ সালে মার্চ মাসে পুলিশ সুপারের ঘোষনায় কালিগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে তৎকালীন অফিসার্স ইনচার্জ লস্কার জায়াদুল হকের নিকট আত্মসমর্পন করি। অনেক বছর আগে হায়দার , আকবর, খোকন, তাদের অপকর্ম ফাঁস হওয়ার ভয় দেখিয়ে নিজেরা ফেন্সিডিল দিয়ে ব্যবসা করিয়েছে। আবার তৎকালীন থানার ক্যশিয়ার এবং খোকনকে দিয়ে ফেন্সিডিল সহ ধরিয়ে মামলায় মাদক ব্যবসায়ী বানিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে আমি মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃত্ত ছিলাম না। আমার ভাই কাশেম হত্যা মামলায় আকবর, হায়দার, শিরিন, খোকন, আসামী হওযায় এবং উক্ত হত্যা মামলায় আমি বাদী হওয়ার কারণে তারা আমাকে পুশিকে ম্যানেজ করে ফেন্সিডিল রেখে মামলায় ঢুকিয়েছে। আসলে আমি এই ফেন্সিডিল সর্ম্পকে আমি কিছুই জানিনা। প্রকৃত ঘটনা হল কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রামের দুর্লভ পাড় ওরফে দুলালের পুত্র আবুল কাশেম এবং তার স্ত্রী শিরিনা সুলতানা ওরফে ঝর্নাকে নিয়ে পেটের দায়ে ভারতে যায় কাজ করতে। ওই সময় আগে থেকেই ভাড়াশিলা গ্রামের শেখ আহম্মদ আলীর পুত্র মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী আলী হায়দার (৩৫), কামদেরপুর গ্রামের নুর-উদ্দীন গাজীর পুত্র মাদক ব্যবসায়ী আকবর আলী আগে থেকেই ভারতের বশিরহাট ভাওখালী নামক গ্রামে ফেন্সিডিলের কারখানা করে বাংলাদেশি মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করে আসছিল। বশিরহাটে হায়দার এবং আকবর এর সাথে দেখা হলে কাজের জন্য তাদের কারখানায় নিয়ে যায়। সেখানে হায়দার এবং আকবরের কু-দৃষ্টি পড়ে কাশেমের স্ত্রী শিরিনার উপর। এর পর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে বিষয়টি কাশেম বুঝতে পেরে স্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে পাঠানোকে কেন্দ্র করে হায়দার এবং আকবর কাশেমকে বেধড়ক পিটিয়ে বেধে রাখে। সুযোগ বুঝে কাশেম পালিয়ে বাংলাদেশে আসলে ফাঁস হওয়ার ভয়ে আকবর এবং হায়দার দেশে চলে আসে। চলে এসে কাশেমের শশুর বাড়ী দঃ শ্রীপুর সিদ্দিক মোড়লের বাড়ী যেয়ে শিরিনার সঙ্গে আকবর এবং হায়দার দেখা করে তাকে দিয়ে ঢাকায় অস্ত্র ও ফেন্সিডিলের ব্যবসা শুরু করে। কাশেম বিষয়টি তৎকালীন থানার ডি.এস.বি ইরমান হোসেনকে জানায়। ঐ সময় কালিগঞ্জ থানার কথিত ক্যাশিয়ার তারালী গ্রামের মোকছেদ আলী গাজীর পুত্র শরিফুল ইসলাম ওরফে খোকন এবং খামার পাড়া গ্রামের ইসলাম জানতে পারে। কারণ মাদক ব্যবসায়ী হায়দার, আকবর, খোকন, ইসলাম পরষ্পর ব্যবসায়ী পাটনার। ডি.এস.বির কাছে বিষয়টি ফাস হওযায় এরা সবাই মিলে কাশেমের স্ত্রীকে নিয়ে কাশেমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক ২০১৩ সালে ২২শে এপ্রিল সন্ধা আনুমানিক ৭টার সময় হায়দার এবং আকবর কাশেমের বাড়ীতে যেয়ে স্ত্রী শিরিনার সঙ্গে মনোমালিন্যোর বিষয়টি মিমাংশা করে দেবে বলে বাড়ী থেকে মটরসাইকেলে তুলে নিয়ে আনে । সেখান থেকে নলতায় মাদক স¤্রাজ্ঞি জরিনার বসায় দিয়ে যায়। সেখান থেকে সবুজ সংকেত নিয়ে কালিগঞ্জ কাঁকশিয়ালী নদীর শশান ঘাট এলাকায় নিয়ে হায়দার, আকবর, খোকন, শিরিনা মিলে তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। কাশেম নিখোজ হওযায় তার পরদিন সাতক্ষীরা ডিবি অফিসে কাশেমের বাবা দুর্লভ পাড় খুজতে গিলেই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী খোকন, হায়দার, আকবরের কথা মতন নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দিলে ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল দেবহাটা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে নদীর চরে একটি লাশ দেখতে পায় বিজিবি সদস্যরা। খবর পেয়ে কাশেমের পরিবারের সদস্যরা লাশ সনাক্ত করে। উক্ত ঘটনায় নিহত কাশেমের পিতা দুর্লভ পাড় ওরফে দুলাল বাদী হয়ে ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল দেবহাটা থানায় মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী আলী হায়দার, আকবর, সিদ্দিক মোড়ল, কাশেমের স্ত্রী শিরিনা ওরফে ঝর্না, মিন্টু গাজী, আল মামুনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা করে। মামলা নং-১৩। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সি, আই,ডির পুলিশ পরিদর্শক লস্কার জায়াদুল হক তদন্ত করে ২০১৪ সালের ৫জুন আদালতে আলী হায়দার, আকবর আলী, কাশেমের স্ত্রী শিরিনা সুলতান, শরিফুল ইসলাম খোকন, ইসমাইল গাজী, রাজু আহম্মেদ ওরফে বাবুকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। উক্ত মামলায় ২০১৩ সালে ১৪ মে কাশেম হত্যা মামলার আসামী মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী আকবর গ্রেপ্তার হয়। জেল থেকে দেড় বছর পর জামিনে এসে আবারও মাদক ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সে তার মাদক ব্যবসা এলকায় সাড়া জাগিয়ে ফেলেছে। বাবার ১০শতক জায়গার উপরে দু’ভাইয়ের বাড়ী ছাড়া এক শতক ও জমি নাই। অথচ মোজায়িক বাড়ী দামী মোটরসাইকেল ও বর্তমান ৩টি ট্র্যাকের মালিক মাদক ব্যবসায়ী আকবর। কাশেম হত্যা মামলা বাদী তার পিতা দুর্লভ পাড় মারা গেলে উক্ত মামলায় আদালতে বাদী শ্রেনী ভুক্ত হয় নিহত কাশেমের ভাই আব্দুল্লাহ পাড় সেই থেকে আসামী আকবর গংরা বাদী আব্দুল্লাহকে শায়েস্থা করতে এ ফেন্সিডিল নাটক সাজানো হয়েছে বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান। মাদক ব্যবসায়ী আকবর আলী বিগত দুই বছরের মধ্যে সাতক্ষীরা, দেবহাটা, খুলনা কালীগঞ্জ এলাকায় একাধিক চালান সহ একাধিক মামলার রয়েছে। আদালত থেকে জামিন নিয়ে তার স্ত্রী শিরিনা সুলতান দঃশ্রীপুর বাবার বাড়ীতে থাকলেও মাদক নিয়ে ঢাকায় আসা-যাওয়ার কাজে ব্যবহার করছে আকবর গং। অন্যদিকে কাশেম খুন হওয়ার পর থেকেই হায়দার আলী ভারতে অবস্থান করে তার নকল ফেন্সিডিল ব্যবসা বাংলাদেশি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বহাল তবিয়াদে চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত দোষিদের খুজে বের করার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।