
হাফিজুর রহমানঃ- কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে কঠোর লকডাউন, লুকোচুরি, চোর-পুলিশ ঢিলেঢালা ভাব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশের গাড়ি দেখলে বন্ধ দোকান, চলে গেলে খোলা। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসায়ী দোকানদাররা। ভোর হতে দোকার,বিপণি-বিতান খুলে মালামাল কেনাবেচা করতে থাকে। সকাল ১০ টার পরে ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি আসার অপেক্ষায় থাকে। বিশেষ করে উপজেলা সদরে অবস্থিত সব থেকে বড় বাজার নাজিমগঞ্জ বাজার। ( ২৭-জুলাই) মঙ্গলবার সকাল ৮টার সময় সরেজমিনে বাজারে গেলে দেখা যায়, বাজারের কাপড়ের পট্টি সহ প্রায় সকল বিপণি-বিতানে কেনা-বেচা করছে। সাংবাদিক দেখে অনেকেই দোকানের শাটার টেনে বন্ধ করে বাইরে ডিউটি করছে।
কখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক আসবে। এছাড়া কাঁচা বাজার, মাছের বাজারে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দূরত্ব মুখে মাক্স এর কোনও বালাই নাই। অনেকে জিজ্ঞাসা করলে দায়সারা উত্তর ছাড়া কিছুই বলতে পারেনা। চায়ের দোকানের পিছনে গোপন কক্ষে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছে। বাজারে ঘুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। উপরন্তঃ করোনা এক্সপার্ট টিমের কোন সদস্যকে চোখে পড়েনি। আবার অনেক এলাকায় করণা এক্সপার্ট টিমের সদস্যরা এই সুযোগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাস্তায় চলাচল বিভিন্ন যান বহনের চালকদের নিকট হতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে গত সোমবার তারালি ইউনিয়ন করোনা এক্সপার্ট টিমের সদস্যদের অপসারণ করা হয়েছে। কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনে কালীগঞ্জ উপজেলায় ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রবেশ পথ দিয়ে কারণে-অকারণে অসংখ্য মানুষ পায়ে হেঁটে রিকশা-ভ্যান ইজিবাইক সহ বিভিন্ন যানবাহনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রবেশ করছে। উপজেলা সদরে ফুলতলা গোল চত্তর, তারালী চৌরাস্তা এলাকায় যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে। সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন মোটরসাইকেল, ভ্যান, প্রাইভেট, মাইক্রো তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। উপজেলার নাজিমগঞ্জ বাজারে ভোর হতে দোকানপাট খোলা রেখেছে ব্যবসায়ীরা। দোকানের শাটার বন্ধ রেখে সামনে কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে থাকছেন। ক্রেতা এলে শাটার খুলে ভেতরে তাকে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ১০ টার পরে পুলিশ, সেনা টহল গাড়ি দেখলে দোকানপাট বন্ধ হচ্ছে। আবার চলে গেলে একটু পর খুলে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক দেখে দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনার প্রভাবে দেড় বছর পুঁজি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন নাজিমগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা। টানা লকডাউন ও বিধি নিষেধ একদিকে দোকানে বেচা-কেনা বন্ধ। অপরদিকে ঘর, ভাড়া বিদ্যুৎ বিল, সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে নিয়মিত। অনেকে দোকানের কাজ হারিয়ে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের দেওয়া হয়নি সরকারি কোনো সহায়তা। তাহলে চলবে কি করে। লকডাউনে তো পেট চলে না। ফুলতলা কাঁচাবাজার, মাছের বাজারে নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার রতনপুর, কদমতলা,মৌতলা,বাঁশতলা, বিষ্ণুপুর,বেলেডাঙ্গা, উত্তর কালিগঞ্জ,তারালী, উজির পুর, কালিবাড়ি, নলতা বাজার গুলোতে। সরেজমিনে নলতা হাটখোলা মোড়, তারালী মোড়, ফুলতলা, মৌতলা সহ বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে অহেতুক মানুষের চলাচল বেড়ে চলেছে। মূল সড়ক ছাড়া পাড়া-মহল্লায়, অলিগলিতে ইজিবাইক, রিক্সা ভ্যান, মোটর সাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। যে কারণে আবারো সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ শেখ তৈয়েবুর রহমান জানান, মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে ব্যাপকহারে। তিনি মাক্স ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, লকডাউনে ঘরে থাকা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সকালে দোকান খোলার বিষয়টি তিনি জানেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। পূরা উপজেলায একজন ইউএনও, পুলিশ, সেনাবাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। যদি না প্রত্যেকে নিজ নিজ ভাবে সতর্ক না হয়। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জেল জরিমানা করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।