২৬টা একাউন্ট তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে দূর্নীতির কালো বেড়াল;
অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ নূরুল হুদা সাতক্ষীরায়;
তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সেল্টারে এসব অপকর্ম করে নির্বাহী প্রকৌশলী;
আহাদুর রহমান (জনি): বিভিন্ন টেন্ডার কাজে অনিয়মের মূল হোতা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্নখাতে অনিয়ম ও দ‚র্ণীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এসব নানা অনিয়ম প্রকাশ করলে দ‚র্বল ঠিকাদারদের বিভিন্ন বাস্তবায়নাধীন ও চলমান প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল আদেশ সহ তাদের ঠিকাদারী লাইসেন্স বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইতোপূর্বে দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকার সহ এলজিইডি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সম্প্রতি সাতক্ষীরার এলজিইডির হিসাবরক্ষক মোঃ মিজানুর রহমানের বদলীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বরূপ আরও উন্মোচিত হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে বদলী হওয়া হিসাবরক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান গত ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। গতকাল থেকে যার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে।
ওয়ান ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখা থেকে ঠিকাদারদের পারফরমেন্স সিকিউরিটির রক্ষিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন সময়ে উত্তোলনের পাশাপাশি গত বছরের ২৫ নভেম্বর এককালিন ৮ লক্ষ টাকা উত্তোলনের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। উক্ত অফিসের বদলী হওয়া হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান কর্তৃক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারই নির্দেশে এই তদন্ত শুরু হয়। মঙ্গলবার বিকালে এসব অভিযোগের তদন্ত করতে বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: নুরুল হুদা সাতক্ষীরায় এসেছেন। গতকাল বুধবার থেকে এলজিইডি সাতক্ষীরার নিজস্ব কার্যালয়ে এই তদন্তকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, “বিভিন্ন সময় অনৈতিক সুবিধা নিয়ে প্রকৃত ঠিকাদার বিহীন বিলে স্বাক্ষর, জামানতের সময় সীমা পার হওয়ার প‚র্বেই জামানত প্রদান, ঠিকাদারি কাজের সময় সীমা পার হলে সময় বর্ধিত না করেই বিল প্রদানে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও উক্ত অফিসের মাস্টার রোল খাতের অফিস সহায়ক আহাদুজ্জামানের নামে ওয়ান ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার ‘বিভিন্ন প্রকল্পের পারফরমেন্স সিকিউরিটি জমা ও ব্যয়িত হিসাব শিরোনামে সঞ্চয়ী হিসাব নং-০৪৬৫৪২১৩০৪০১৯ থেকে ইতোপ‚র্বে ঠিকাদারদের পারফরমেন্স সিকিউরিটির বিপুল অংকের টাকা বিভিন্ন সময়ে উত্তোলন করেছেন। এসব ব্যায়িত অর্থ সমন্বয় করা হয়নি। পাশাপাশি গত বছরের ২৫ নভেম্বর এককালিন ৮ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয় অফিস সহায়ক মাস্টার রোল কর্মচারি আহাদুজ্জামানের নামে। এসময় উক্ত ৮ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ চন্দ্র সরকারকে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার অনুরোধ করলে নির্বাহী প্রকৌশলী চরম নাখোশ হন।
মি: মিজানুর রহমান সাতনদীকে জানান, ‘২০২০ সালের ১ জুলাই হতে অদ্যবদি পর্যন্ত ২৬টি ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট উত্তোলন প‚র্বক হিসাব সমন্বয় করার উদ্যোগ নেন এবং উপস্থাপন করেন। একই সাথে উক্ত ৮লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার অনুরোধ করলে সঞ্চয়ী হিসাবটি বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এসবের জেরধরে এই হিসাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৌশলে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে বদলি করিয়ে দেন। অভিযোগে আরও জানা যায়, এলজিইডি সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে মাষ্টার রোলে কর্মরত পিওন আলমগীরের সহয়তায় নির্বাহী প্রকৌশলী দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ এভাবেই অনিয়ম আর দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছেন। তার অণ্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও তিনি এ ব্যাপারে ভ্রæক্ষেপ করেন না।
মি: মিজান সাতনদীকে আরও বলেন, ‘এভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী আরও কয়েকটি একাউন্ট থেকে ৫০ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন। যা এলজিইডির প্রতিটি ব্যাংক একাউন্ট অডিট করলে বের হয়ে আসবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স‚ত্র জানায়, একজন ঠিকাদারের একটি বিল ছাড় করাতে উক্ত অফিসের ঘাটে ঘাটে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। লাভ হোক আর নাই হোক নির্বাহী প্রকৌশলী ১%, সিনিয়র এ্যাসিসটেন্ট ও এ্যাসিসটেন্ট প্রকৌশলীকে দিতে হবে দশমিক ৫০%, হিসাব শাখাকে দশমিক ২৫%। পাশাপাশি ল্যাব ও ফোরম্যান নামের আরও দুই একটি শাখাকে অর্থ দিতে হয় ঠিকাদারদের। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর এমন দুর্নীতির ফলে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এবিভাগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারিরা।
অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ নূরুল হুদা সাতনদীকে জানান, “বিষয়টি তদন্তাধীন। আমি সবে মাত্র তদন্ত শুরু করলাম। যেহেতু কাগজ পত্রের ব্যাপার তাই এখন মন্তব্য করলে ভুল হতে পারে। তদন্ত শেষ হলে তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। ”
কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মি: হুদা জানান, “ অভিযোগকারী এখান থেকে বদলী হয়ে গেছে। আমি লোক পাঠিয়ে খোজ নিয়েছি তিনি এখন অসুস্থ। তিনি সুস্থ না হলে সঠিকভাবে তদন্ত করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে তদন্ত শেষ হতে ১ মাস সময় লাগতে পারে।”
তবে এবিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকারের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য: নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকার সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ে প্রায় ০২ বছর প‚র্বে তদবীর করে বদলী হয়ে সাতক্ষীরায় আসেন। তারপর থেকেই পর্যায়ক্রমে টেন্ডার কাজে অনিয়ম দুর্নীতি দেখা দেয়। টেন্ডার দাখিলকৃত ঠিকাদারদের মধ্যে লটারীতে প্রাপ্ত ঠিকাদারের বিভিন্ন কাগজপত্র অসুবিধাসহ কাজের প‚র্ব অভিজ্ঞতা সনদপত্রে ডুপ্লিমেসি থাকার দরুন উক্ত ঠিকাদারদের নিকট হইতে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়াও, সাধারন এগ্রিমেন্ট/ কার্যাদেশে চুক্তিম‚ল্যের উপর ০০.২৫% হইতে ০০.৫০% এবং দ‚র্বল ঠিকাদারদের নিকট হইতে ১% হইতে ২% পর্যন্ত মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে থাকেন। এই পার্সেন্টের টাকা নির্বাহী প্রকৌশলী, সিনিয়ির সহকারী প্রকৌশলী,সহকারী প্রকৌশলী এবং মাষ্টাররোল খাতের ল্যাবরেটরী সহকারী আজহারুল ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন। এসব কিছুর মূলে আছেন নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ন চন্দ্র সরকার। আর তার কাছ থেকে কমিশন পেয়ে সব দুর্নীতির গ্রীন কার্ড দেন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম আকবর হোসেন। যার কারনে দিন দিন বে-পরোয়া হয়ে উঠছেন নারায়ান চন্দ্র সরকার।