
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতে ১০ বছরের এক শিশুকে হত্যা মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, কালো জাদুর (ব্ল্যাক ম্যাজিক) মাধ্যমে ওই শিশুকে বলি দেওয়া হয়েছিল। গ্রেফতার তিন জনের দুই জন আবার ওই শিশুর আত্মীয়।
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বাহরাইচ শহরের মাঠে ২৬ মার্চ বিবেক ভার্মার মরদেহ খুঁজে পায় পুলিশ। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সন্দেহ করে বিবেকের চাচাতো ভাই অনুপ ভার্মাকে।
পুলিশ জানায়, অনুপের আড়াই বছরের একটি ছেলে আছে। সে নিয়মিত অসুস্থ থাকে। চিকিৎসায় কোনও কাজ হচ্ছিলো না। তখন তিনি স্থানীয় এক তান্ত্রিকের কাছে যান। সেই তান্ত্রিক সন্তানের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অনুপকে শিশুকে বলি দেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাহরাইচের পুলিশ সুপার প্রশান্ত ভার্মা সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা অনুপ, ওই তান্ত্রিক ও চিন্তারাম নামে তাদের এক আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে। তারা বিবেককে হত্যা করার জন্য বেলচা ব্যবহার করেছিলেন। তিন জনের বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা হয়েছে।
ভারতে কুসংস্কার ও আচার-অনুষ্ঠানমূলক মানুষ বলিদানের ঘটনায় কোনও কেন্দ্রীভূত আইন নেই। তবে প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব কিছু নিয়ম রয়েছে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০৩টি আচারিক বলিদানের রেকর্ড করেছে। বেশিরভাগকেই এই বিশ্বাসে বলি দেওয়া হয়েছিল যে এটি সমৃদ্ধি, উর্বরতা বা নিরাময় নিয়ে আসবে।
ভারতীয় কুসংস্কারবিরোধী কর্মী স্যানাল এদামারুকু বলেন, ‘এই সংখ্যাটা সঠিক নয়। আরও এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলো গোপন থাকে। আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে ১০ বা ২০ গুণ বেশি হতে পারে।’
এদামারুকু বছরের পর বছর ধরে মানুষ বলির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন। কুসংস্কারমূলক আচারগুলোকে দূর করতে শিশু শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
এদামারুকু বলেন, ‘চারপাশে খেয়াল করলে দেখবেন অনেক শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই। তাদের বেশিরভাগই কুসংস্কারমূলক আচার-অনুষ্ঠানের শিকার।’
তিনি বলেন, ‘ভারতে এই অপরাধগুলো নিয়মিত ঘটে। এটি ধর্ম এবং ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।’
ভারতীয় সংস্কৃতির অনেক ক্ষেত্রেই কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাস গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এই প্রবণতা দূর করা খুব সহজ না। ২০১৫ সালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা বিরোধীদের পরাস্ত করতে তাদের প্রধান কার্যালয়ে কালো জাদুর আয়োজন করেছে।
২০২১ সালে একটি দম্পতিকে তাদের মেয়েদের ‘বলিদান’ দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ ছাড়া গত বছর দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে কালো জাদুর আচারের অংশ হিসেবে দুই নারীকে ‘বলি’ দিয়ে তাদের মাংস খাওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অথচ রাজ্যটির শিক্ষার হার অন্য সব প্রদেশ থেকে ঢের বেশি।
২০১৩ সালে বিশিষ্ট কুসংস্কার বিরোধীকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকরকে তার কাজের কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি মানুষ বলির বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্য আলোচিত ছিলেন।
এদামারুকু বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের ঘটনাগুলোর দিকে নজর দিতে হবে, যেমনটা তারা সন্ত্রাসবাদের দিকে রাখে।’
তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্বাস নয়, এটি একটি অপরাধ, এটি বিপজ্জনক। জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে।’ সূত্র: ভাইস ওয়ার্ল্ড নিউজ