সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: বিয়ের গেইটসহ সাজানো হয়েছে বিয়ে বাড়ি। প্যান্ডেল হয়েছে, বরযাত্রীসহ প্রায় ৪০০ লোকের রান্নার আয়োজনও করা হয়েছে। কিন্তু বরযাত্রী এলো না। বউ হয়ে আর যাওয়া হলো না সাথী আক্তার বাণীর (২১)। বৃথা গেল সব আয়োজন।
রোববার (৩ জানুয়ারি) এ ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে পাচুখার কান্দি গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে পাচুখার কান্দি গ্রামের দরিদ্র ব্যবসায়ীর মেয়ে সাথী আক্তার বাণী (২১)। এক বছর আগে মোবাইল অ্যাপস ইমোর মাধ্যমে সোহাগ নামে এক যুবকের (২৫) সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর বন্ধুত্ব পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সোহাগ জানান, তিনি রাজশাহী শহরের বাসিন্দা। বাবা বেঁচে নেই। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় চাকরি করছেন।
এক পর্যায়ে ওই যুবক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। পরে ওই তরুণীর পরিবার প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিয়ে সোহাগের সাথে ও তার চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ আলোচনার পর বিয়েতে মত দেন এবং বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ করেন। জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের।
এরই মধ্যে সোহাগ ওই তরুণীকে জানান, তার নাকি আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে। বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। তাই বিয়ের খরচের জন্য দুদিন আগে ওই তরুণীর পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা ধার চান ঐ যুবক। বিয়ের আগে টাকা না পেলে তার বিয়ে করা সম্ভব হবে না।
ওই তরুণীর বাবা তার মেয়ের বিয়ের জন্য তার দুই কড়া জমি বিক্রি করেছিলেন এবং আরও এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সোহাগকে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। বাকি টাকা দিয়ে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। বিয়ের আগের রাত পর্যন্ত ওই তরুণী ও তার পরিবারের সঙ্গে সোহাগের ফোনে যোগাযোগ ছিল। বিয়ের দিন সকাল থেকে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে এবং আত্মীয় স্বজনরা আসতে থাকেন। চলে খাওয়া দাওয়া।
বরযাত্রী কতদূর, তা জানার জন্য ওই তরুণীর পরিবার সোহাগের মোবাইল ফোনে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর একাধিক নম্বর দিয়ে বার বার কল করেও কোনও কাজ হয়নি। বরের মোবাইল ফোন বন্ধ জানতে পেয়ে বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। লোকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বিয়ে বাড়ির আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে থাকে। থেমে যেতে থাকে বিয়ের আয়োজন ও কোলাহল। দিশেহারা হয়ে পড়ে ওই তরুণীর পরিবার।
দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে কিন্তু নেই বরের দেখা। গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরবেশে ওই যুবক আসেননি।
এ ঘটনার পর থেকে প্রতারণার শিকার মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
তরুণী জানায়, ইমো গ্রুপের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর তার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ও আমাদের বলেছে, ওর বাড়ি রাজশাহী শহরে এবং সে নাকি নড়িয়া থানায় পুলিশে চাকরি করে। নড়িয়াতে আমি তার সঙ্গে দুবার দেখাও করেছি। সে আমাকে বিয়ে করবে বলে আমাদের কাছে বিয়ের খরচের জন্য এক লাখ টাকা চেয়েছে। আমরা তার কথায় বিশ্বাস করে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি এবং বিয়ের আয়োজন করেছি। কিন্তু সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি বিচার চাই।
এসময় ওই তরুণী তার মোবাইলে সোহাগ নামের ওই যুবকের একটি ছবি দেখান। ছবিতে দেখা যায় কোনও এক কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ডের ইউনিফর্ম পড়ে আছেন ওই যুবক। ইউনিফর্মে লেখা আছে সোহাগ ও সিকিউরিটি। ০১৯৫০৯৯২১২৮, ০১৩১৫৩৩৯৬৮৩, ০১৩১৪৯৮৪৯০৯ এসব নম্বরে ওই যুবকের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান ওই তরুণী ও তার পরিবার।
ওই তরুণীর বাবা বলেন, আমি গরিব মানুষ। লেখাপড়া জানি না। সহায় সম্পত্তি তেমন কিছুই নাই। দিন আনি দিন খাই। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে আমার এই মেয়েই বড়। দুই কড়া জমি ছিল, তাও মেয়ের বিয়ের জন্য বিক্রি করে দিছি। টাকা পয়সা খুইয়ে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না। আমাদের মানইজ্জত সব গেছে। এখন আমার মেয়ের কী হবে?
ওই তরুণীর মা জানান, আমাদের কী সর্বনাশ হয়ে গেল? এখন আমার মেয়ের কী হবে? সমাজে আমরা মুখ দেখাবো ক্যামনে?
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিয়ের কাবিন বা লিখিত কোনও চুক্তিপত্র না হওয়া পর্যন্ত এখানে আইনগতভাবে কিছুই করার নেই। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারলে ভাল।
এ ঘটনায় এখনও তরুণীর পরিবার জাজিরা থানায় মামলা বা কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাজিরা থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে আইনের আওতায় অনা হবে বলে জানায় পুলিশ।