দুর্নীতিবাজ ও আদর্শহীন শিক্ষকদের সম্মানের পরিবর্তে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করুন। দুর্নীতিবাজ শিক্ষক সমাজকে কিছুই দিতে পারে না। তাদের হাতে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোন ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নহে। তারা শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারে না এবং সমাজ তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করতে পাওে না। তাদেরকে ত্যাগ করে সমাজ থেকে একেবারে আলাদা করে দেওয়াই শ্রেয়। আমরা দেখেছি ৬০/৭০ এর দশকের দিকে একজন শিক্ষক ভাল ভাবে তার সংসার ধর্ম চলাতে পারতেন না, তারা ছাত্রদের কে সঠিক ভাবে পাঠ দান করাতেন এবং তাদের হাতের ছাত্ররা ও মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজ গড়ার কাজে এবং রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান পদে থেকে রাষ্ট্রকে বিশ্বের মানচিত্রে একটা অন্য রকম শিখরে দাঁড় করিয়েছেন এবং সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ সেই শিক্ষকদেরর পরামর্শের উপর নির্ভর করতেন এবং সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন কারন তারা কোন রকম শিক্ষা বা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোন রকম অন্যায় অনিয়ম বা দুর্নীতির সংগে জড়িত ছিলেন না। তাদের ভিতর ছিল আদর্শের গুণাগুন। তাদের নামও আজকের ইতিহাসের পাতায় স্মরনীয় হয়ে আছে। কিন্তু আজকের দিনের অনেক শিক্ষকরা আসলে কি? শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের দূর্ণীতির সংগে এবং অনৈতিক কাজের সংঙ্গে জড়িত। গ্রামগঞ্জের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানো তাদের অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। কিন্তু আমরা কি দেখছি ভর্তির সময়ে, ফরম ফিল আপের সময়ে বিভিন্ন পরীক্ষার নাম ভাঙ্গিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক ধরনের লোভী, স্বার্থপর ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা যেটা চরম অপরাধ। অভিভাবকরা সব সময় শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন কারণ দেশ জাতির বিবেক হচ্ছে শিক্ষকরা এবং তেমনি সমাজ গড়ার কারিগর ও একজন শিক্ষক। আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন অনেকটা শিক্ষকদের উপর নির্ভর করে। ছাত্ররা সাধারণত শিক্ষকদের কাছ থেকে আদর্শ, নীতি, সততা, নৈতিক মূল্যবোধসহ অনেক জ্ঞান মূলক উপদেশ অর্জন করবে। কিন্তু শিক্ষক যদি আদর্শচ্যুত হয় নীতি, নৈতিকতা যদি হারিয়ে ফেলেন এবং লোভ লালসার কারণে অধিক অর্থ উপার্জন করতে হবে এরূপ মনোভাব যদি একজন শিক্ষকের ভিতর থাকে তবে তাকে দিয়ে কোন শিক্ষা ছাত্ররা অর্জন করতে পারে না। শিক্ষকের কাজ শিক্ষকতা করা এবং মেধা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদেও ভালো ফলাফলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। সেটা সম্ভব হলেই শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা শ্রদ্ধার পাত্র হন তেমনি সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন অত্যান্ত সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে। এটাই হওয়া উচিত একজন আদর্শবান শিক্ষক এর। কিন্তু আসলে শিক্ষক হিসাবে আমরা কি করছি? আমাদের মধ্যে অনেকেই মূল শিক্ষার পরিবর্তে অশিক্ষা, কুশিক্ষাই ছাত্রদেরকে দিচ্ছি। এতে কোন সন্দেহ নেই। একেবারে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা শিক্ষার যে পরিবেশ দেখি তার সত্যিই নিন্দনীয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোজ নিলেই সকলের নজরে আসবে কি পরিমান দুর্নীতি অন্যায় ও অনিয়মের সংঙ্গে জড়িত এবং কিছু চাটুকার দালাল টাইপের শিক্ষক আছেন ক্লাস ফাকী দিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সংঙ্গে থেকে তারাও দুর্নীতির সংগে জড়িয়ে পড়ে। তাই এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের কারণে যে সমস্ত আদর্শিক গুনমানের ও নৈতিক মূল্য বোধের শিক্ষকরা এখনও আছেন তারাও সমাজের প্রাপ্ত সম্মান পাচ্ছেন না । কারণ সাধারণত জনগণ মনে করেন এরাও দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের মত দুর্নীতি করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য যে, পরিমান বরাদ্ধ থাকে তার অর্ধেক কাজ ও হয় না বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাবদ বড় অংকের অর্থের রশিদ তৈরি করে অর্থ আত্র সাৎ করেন। এগুলো অবশ্য দেখার ও কেই নাই। যখন অডিট ভিজিট বা ইনভেষ্টিগেশন যেটায় হোক না কেন তাদেরকেও বড় অংকের ঘুষ দিয়ে সব কিছু আপডেট করে নেওয়া হয়। এখানেও প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সাথে যুক্ত শিক্ষকদের আরও এক ধরণের বানিজ্য হয় । ঘুষ দেবার জন্য শিক্ষক বা কর্মচারীদের কাছ থেকে বড় অংকের চাঁদা চাওয়া হয়। দুর্নীতিবাজ চরিত্রহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আবারও শিক্ষকদের আদর্শিক গুনাগুন পূনরুদ্ধার করা উচিত। সমাজে যেভাবে তাদের গ্রহন যোগ্যতা ছিল এবং সকল শ্রেণীর মানুষ শিক্ষকদের সম্মান করত সেটা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। গুটি কয়েক অনাদর্শিক শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কারনে গোটা শিক্ষক সমাজ তাদের সম্মান শ্রদ্ধা বিসর্জন দিবে এটা হতে পারে না। এখনই সময় আওয়াজ তোলার। বিশেষ করে সরকার এর কাছে এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে আমাদের আহবান থাকবে যতদ্রুত সম্ভব হয় দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের হাত থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করে সঠিক মেধা ও আদর্শ দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের গড়ে তোলা যায় তার ব্যবস্থা করা। একটা দেশ সাবলম্বী হতে, উন্নত হতে বা বিশ্বে আদর্শিক রাষ্ট্রে পরিনত করতে গেলে শিক্ষকদের ভূমিকা ও যোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্য বোধ একজন মানুষকে আদর্শ মানুষে রুপান্তরিত করে। এই গুনটাই থাকতে হবে শিক্ষকদের মধ্যে। আদর্শহীন শিক্ষককে সমাজ ভালো চোখে দেখে না। সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ তাদেরকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখান করে। তাই আমরা বলবো এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত শিক্ষক ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অপরাধ জগতে আছেন, ফিরে এসে আপনাদের সন্তানদের অর্থাৎ শ্রেনীর ছাত্র বা ছাত্রীদের আপনার মূল্যবান আদর্শও চরিত্র দিয়ে তাদেরকে গড়ে তুলুন এবং আপনাদের সুনাম আবার ফিরিয়ে আনুন। সমাজে এখনও ভাল, মেধাবী এবং আদর্শিক মূল্য বোধের শিক্ষক আছেন যাদের হাত দিয়ে এখন ও হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে এবং দেশ গড়ার বিভিন্ন কর্ম কান্ডে অংশ গ্রহন করছে এবং তাদের মনের মতো শিক্ষকদের আদর্শ বক্ষে ধারন করে সমাজে সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নিঃশ্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যদি জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা ইত্যাদি দেশের উন্নত জাতির কথা বিবেচনা করি তাহলে আমরা দেখব, তাদের উন্নতির পিছনে মূল যে কারন সেটা নৈতিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের আদর্শিক গুরুত্ব ও ভূমিকা। নৈতিক শিক্ষা, কোন প্রতিষ্ঠানে একজন দূর্নীতিবাজ শিক্ষক দিতে পারেন না। তার হাত দিয়ে যে শিক্ষা দেওয়া হবে সেটা হবে কুশিক্ষা ও অশিক্ষা। তাই আজ আমাদরে সকলকে একটাই বিবেচনায় আনতে হবে সেটা হচ্ছে অদর্শিক শিক্ষক গড়ে তোলা। শিক্ষকরা আদর্শবান ও নীতিবান হলে একটা সমাজ ও পরিবর্তন হবে দেশ ও দেশের ভাবমূর্তি পৃথিবীতে আরও উজ্বল হবে, আমরা মাথা তুলে দাড়াতে পারবো এবং সকল শিক্ষকরা আবারো মর্যাদার আসনে বসতে পারবো। দুর্নিতীবাজ শিক্ষকদের আমরা চিরদিনের জন্য ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করবো। কখনও সম্মান করবো না। এটাই হোক আজকের আমাদের অঙ্গীকার।
লেখক:
সহঃ অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।