সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি থেকে: চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না। তেমনি চকচক করলেই চাল ভাল হয় না। কাটিং ও পালিশ করা চিকন চকচকে ভেজাল চাল হরহামেশা আশাশুনির বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতারণা বন্ধে কোন উদ্যোগ নেই। ফলে ভেজালকারী চাল ব্যবসায়ীদের দৌরত্মা ক্রমশ বাড়ছে। এরা আঙ্গুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ হলেও প্রতারিত হচ্ছে সাধারন ভোক্তারা। তাছাড়া শরীরে ক্যান্সার প্রতিষেধক কার্বোহাইড্রেড প্রাপ্তি হতেও বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তারা। জানা যায়, বাজারে মিনিকেট বলে পালিশ ও কাটিং করা চিকন যে চাল বিক্রি হয় তার বেশীর ভাগই ভেজাল। ভূক্তভোগী ক্রেতারা জানান, এই চালের ভাত খেয়ে কোন স্বাদতো পাওয়া যায়ই না, বেশিদিন ঘরে রাখলে চাল নষ্ট হয়ে যায়। এই নিয়ে প্রায়ই বিক্রেতাদের সাথে ক্রেতাদের কথা কাটাকাটি হতে দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, আমরা মোকাম থেকে চাল কিনে এনে বিক্রি করি। স্বাদ আছে কিনা এবং বেশিদিন ঘরে থাকবে কিনা আমাদের জানা নেই। অধিক লাভের আশায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মিনিকেট চালের সাথে ইরি বিআর-৫, বিণা-৭, বিআর-২৮, বিআর-২৯ চাল মিশিয়ে প্রসেস মিলে চাল ঘষে চিকন ও পালিশ করে বেশি দামে বাজারজাত করছে। প্রসেস মিলে প্রথমে চাল নেটিং করে খুদ, ময়লা ও মরা চাল পৃথক করা হয়। পরে চাল পানি দিয়ে ধুয়ে হুইটারে ঘষে চিকন ও পিচ্ছিল করা হয়। পিচ্ছিল ও চিকন করার সময় চালের উপরের আস্তরণ উঠে যায়। এই আস্তরণে কার্বোহাইড্রেড থাকে বলে জানা গেছে। পুষ্টবিদরা বলছেন, চালের পুষ্টির মূল উৎসই উপরের আস্তরণ। এতে কার্বোহাইড্রেড থাকে। যা মানব দেহে ক্যানসার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। চালের পালিশ রাইস ব্রাণ ওয়েল মিলে এবং অন্যান্য উপকরণ পশু খাদ্য হিসেবে চড়া দামে বিক্রি হয়। অর্থাৎ চাল প্রসেস করার পর ঘাটতি তো হয়ই না উপোরন্ত বেশি পাওয়া যায় এবং উপজাত দ্রব্যও বেশি দাম বিক্রি হয়। চাল প্রসেস করতে কেজিতে ১.০০ হারে খরচ দিতে হয়। আশাশুনি বিভিন্ন হাটবাজারে মিনিকেট প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকপ্রতি বস্তা ৫০ কেজি বস্তা আতপ-২৮৫০,সিদ্ধ ৩০৪০ প্রতিবস্তা,২৮ চাল চিকন আতপ ২৮০০টাকা সিদ্ধ ৩০৫০টাকা, ১০ চাল আলো ২৮০০ টাকা বস্তা বিক্রয় হচ্ছে। অর্থাৎ মিনিকেট চালের সাথে কমদামের চালের দামের পার্থক্য কেজিতে ১০ থেকে ১১ টাকা। সূত্র জানায়, সকল খরচ-খরচা বাদ দিয়ে গড়ে কেজিতে ৮-৯ টাকা লাভ হয়। হিসেব করলে দেখা যায়, শুধু মোটা চাল প্রসেস করার পর ৮৪ কেজি ওজনের ১৫০ বস্তার এক ট্রাক চাল বিক্রি করলে লক্ষাধিক টাকা অতিরিক্ত লাভ হয়। তবে মিনিকেট বলে বিক্রয় করলে লাভের পরিমান বেশী হয়।এই বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জনের আশায় কেউ কেউ ব্যবসা পরিবর্তন করে নেমে পড়েছে চালের ব্যবসায়।আর এ চাল গুলো সাধারনত উত্তর অঞ্চালের অবস্থিত বিভিন্ন চাল কল থেকে এ অঞ্চলের বিক্রেতা রা ক্রয় করে এনে বিক্রয় করছে বলে জানা গেছে। প্রসেস মিলগুলো শুধু অন্যের চালই প্রসেস করছে না। নিজেরাও চালকল হতে চাল কিনে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধেই ব্যবসায়ীদের অনেকেই রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ভেজাল মিশ্রিত চিকন পালিশ করা এই চাল খেয়ে প্রতারিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি চালে পুষ্টির মূল উপাদান কার্বোহাইড্রেডসহ অন্যান্য পুষ্টি প্রাপ্তি হতেও বঞ্চিত হচ্ছে। এই বিষয় প্রতিরোধে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহন না করা হলে সাধারণ মানুষের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং দেশের মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে।