সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি: জগদ্বাত্রী পূজার ঘট স্থাপন ও সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন মধ্যে দিয়ে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা দ্বাদশ শিবকালী মন্দিরে জগদ্বাত্রী পূজা শুরু হয়েছে। চলবে আগামাী শুক্রবার পর্যন্ত। জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ “জগৎ+ধাত্রী। জগতের (ত্রিভুবনের) ধাত্রী (ধারণকর্ত্রী, পালিকা)।” ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য শক্তিদেবীগণও জগদ্ধাত্রী। তবে শাস্ত্রনির্দিষ্ট জগদ্ধাত্রী রূপের নামকরণের পশ্চাতে রয়েছে সূক্ষতার ধর্মীয় দর্শন। জগদ্ধাত্রী বা জগদ্ধাত্রী দুর্গা হিন্দু শক্তি দেবী। ইনি দেবী দুর্গার অপর রূপ। উপনিষদে এঁর নাম উমা হৈমবতী । বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থেও এঁর উল্লেখ পাওয়া যায়।জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তাঁর হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দন্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উদিয়মান সূর্যের ন্যায়। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা ও তামসিক কালীর পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর। ধ্যান বার স্তবমন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় বাহন সিংহের পদতলে একটি হস্তীমুন্ড থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, জগদ্ধাত্রী দেবী করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ মহাহস্ত রূপী অসুরকে বধ করেছিলেন। এই কারণে দেবী জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী নামে পরিচিত।দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার ঠিক একমাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে। কাত্যায়নীতন্ত্র– এ কার্তিকী শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। জগদ্ধাত্রী পূজা তান্ত্রিক পূজা। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিন দিন জগদ্ধাত্রীর পূজা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও প্রথম বা দ্বিতীয় পূজার পর কুমারী পূজারও আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার ন্যায় জগদ্ধাত্রী পূজাতেও বিসর্জনকৃত্য বিজয়াকৃত্য নামে পরিচিত। এমনকি পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণাম মন্ত্রসহ পূজার অনেক মন্ত্রও দুর্গাপূজার অনুরূপ। বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালি মন্দিরের যুব সংঘের সভাপতি হিরনময় আঢ্য বলেন,আমারা পুজার সমস্ত আয়োজন শেষ করেছি। আগামী শুক্রবার বিসার্জনের মধ্যে দিয়ে পূজার সমাপ্তি ঘটবে। ২০ নভেম্বর সোমবার ঘটস্থাপন, ২১ নভেম্বর সারাদিন ব্যাপী জগদ্ধাত্রী মায়ের পূজা ও অর্চনা।সন্ধ্যায় দেবী মায়ের আরতী। ২২ নভেম্বর বুধনার পূর্বাহ্নে দর্পন বিসর্জ্জন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ ঘটিক বিশিষ্ট ধর্মযাজক বিল্বমঙ্গল দেবনাথের কন্ঠে ভগবত আলোচনা ও ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতারন। শুক্রবার প্রতিমা বিসার্জন। পূজায় পুরোহিত্য করবেন পুরোহিত বাবু সজল ব্যাণার্জী।
আশাশুনির ঐতিহ্যবাহী দ্বাদশ শিবকালী মনিদরে জগদ্বাত্রী পূজা শুরু
পূর্ববর্তী পোস্ট