
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আগামীর ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর দু’গ্রুপের মাঝে মারমুখী অবস্থানের ঘটনা ঘটেছে। দুদুকে মামলা, সংবাদ সম্মেলন, পত্রিকা বিলি বন্টনের কারনে ১ জনকে মারপিট করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের ৪টি মোটর সাইকেল আটক করেছে অপর পক্ষ। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আনুলিয়ার বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন এবং আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন ইউপি সদস্য শাহাবুদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেন ও সমাজসেবক আব্দুল বারিক। আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান লিটনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাজ করছেন তারা। চেয়ারম্যান লিটন তার ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্ধের যে সমস্ত উন্নয়ন মূলক কাজ করছেন তাতে বিভিন্ন সময় অনিয়ম ও দূর্নিতির অভিযোগ করে আসছেন ঐ ইউনিয়নের মেম্বর শাহাবুদ্দিন, ফারুক হোসেন সহ বিভিন্ন লোকজন। অভিযোগের বিষয়ে দূর্নিতি দমন কমিশন (দুদক) এ একটি মামলাও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তাছাড়া অভিযোগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মির্জাপুর গ্রামের মৃত সামছুর রহমান সানার ছেলে ওই ইউপি’র ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ সাহাবুদ্দিন সানা, যা “সাতক্ষীরায় দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে আনুলিয়া ইউপিচেয়ারম্যান লিটনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মেম্বরের সংবাদ সম্মেলন” সহ বিভিন্ন শিরোনামে পত্র পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের রশিদুল আলমের ছেলে আলমগীর আলম লিটন ২০১১ ও ২০১৬ সালে ৯নং আনুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরে গড়ে তুলেছেন আলিশান চারতলা বাড়ি। পাশেই কিনেছেন আরো একটি প¬ট। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ খরচ করে এলাকায় গড়ে তুলেছেন এক সন্ত্রাসী বাহিনী। ফলে তার এই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বললে তাকে মারপিট করার পাশাপাশি থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। সে কারনে তার ভয়ে এলাকার মানুষ সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।
শাহাবুদ্দীন সানা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্প, কাবিটা, কাবিখা, এলজি,এসপি, এডিপি সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্টির আত্মসামাজিক উন্নয়নের লক্ষে বর্তমান সরকার কর্তক বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা চেয়ারম্যান অসাধু সরকারি কর্মচারীদের যোগসাজসে উলে¬খিত প্রকল্পের টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে নামমাত্র আবার কখনো কাজ না করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
সূত্রে জানা গেছে, এর প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাছাড়া এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান পক্ষের কিছু কিছু লোকজন সাতক্ষীরায় সংবাদ সম্মেলকারীদের বিরদ্ধে বিরুপ মন্তব্যে করে বেড়াচ্ছিলেন।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজনের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষ নিজেদের অধিপত্য প্রদর্শনের লক্ষ্যে পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।
তবে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, দুদুকে মামলা করায় এবং সাতক্ষীরায় সংবাদ সম্মেলন করায় চেয়ারম্যান লিটন পক্ষের এটিএম বাহিনী গতকাল সন্ধ্যার পর মোটর সাইকেল সহ লাঠি শোটা নিয়ে আনুলিয়া হাজী মার্কেটে মহড়া দিতে থাকে এবং মেম্বর শাহাবুদ্দীনকে খুঁজতে থাকে। পরে মেম্বর শাহাবুদ্দিন, আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী ফারুক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী বারিক পক্ষের বহু লোকজন হয়ে সেখানে উপস্থিত হলে এটিএম বাহিনী সেখান থেকে ফিরে যায়। এর ১৫/ ২০ মিনিট পর চেয়ারম্যান লিটন তার পক্ষের লোকজন নিয়ে সেখানে গেলে বারিক-শাবাবুদ্দীন গ্রুপের লোকজন সেখান থেকে ফিরে যায়। ঘটনা জানাজানি হলে বাজারের আশপাশে এলাকার বহু উৎসুক লোকজন সেখানে সমবেত হয়।
এ বিষয়ে জানতে মেম্বর শাহাবুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করি। উক্ত সংবাদ সম্মেলনের প্রকাশিত নিউজের পত্রিকা আমার পক্ষের খলিল, রইজুল সহ কয়েকজন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পৌছে দিতে গেলে চেয়ারম্যান লিটন সমর্থক এটিএম সহ কয়েকজন মিলে রইজুলকে মারধর করে এবং তাদের ৪টি মোটর সাইকেল আটকায়। আমি সাতক্ষীরায় থাকায় তারা আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বিষয়টি আমাকে মোবাইলে অবহিত করে। আমি সাতক্ষীরা থেকে ফিরে আমার নিজ ওয়ার্ডেও হাজী মার্কেটে বিষয়টি শুনা বোঝার সময় এটিএম কে সেখানে পেয়ে মেম্বর হিসেবে তার কাছে মারপিটের কারন জিজ্ঞাসা করি। তখন সে আমার সাথে উচ্চস্বওে কথা বলে এবং বলে মেরেছি বেশ করেছি। এখন খলিলকে খুঁজছি তাকে পেলে তাকেও দেখে নেব বলে হুশিয়ারি দেয়। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পক্ষের মেম্বর আলম, মেম্বও জিয়ারুল ও মেম্বও শওকত সহ চেয়ারম্যান লিটন তার আরও লোকজন নিয়ে হাজী মার্কেটে আসছে বলে খবর পাই। ঘটনা জেনে আমার পক্ষের কিছু লোকজনও সেখানে হাজির হয়। তবে এটিএম বাহিনী লাঠি শোটা নিয়ে প্রস্তুত থাকায় আমি যে কোন অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে সেখান থেকে আমার লোকজন নিয়ে সরে যাই এবং বিষয়টি আশাশুনি থানার ওসিকে জানাই।
মেম্বর শাহাবুদ্দীন আর বলেন, আমি বিষয়টি আমার মুরুব্বিদের সাথে আলোচনার জন্য একসরায় যাওয়ার পথে আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মেম্বর শওকাত ও মেম্বর আলম একসরা বৌ-বাজারে আমার গতিরোধ করে। আমি তাদেরকে এড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেরেও তারা আমার ৪টি মোটর সাইকেল আটকে রাখে। তিনি বলেন আমি পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সপার মহোদয়কের বিষয় সমুহ অবহিত করি।
এ বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সেখানে/ তার ইউনিয়নে এ জাতীয় কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম কবীরের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।