
আশাশুনি ব্যুরো: সাতক্ষীরার আশাশুনিতে মাদকের ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার ও লেনদেন বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নতুন প্রজন্মের কাছে এটি আর নিষিদ্ধ বস্তু বলে মনে হচ্ছে না। হোরোইন, ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ হেন কোন মাদক দ্রব্য নেই যা হাত বাড়ালেই এ আশাশুনিতে পাওয়া যাচ্ছে না। সারা আশাশুনিতে দিনে-রাতে অনেকটা অঘোষিত প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ ও জীবন বিনাশকারি মাদকদ্রব্য। আর এসব নেশাদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় ও উঠতি বয়সের তরুনদের টোপ হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাজ করছে একটি সিন্ডিকেট ও নেটওয়ার্ক। মাদকের ভয়াবহ এ থাবায় শিশু থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সীরা আক্রান্ত। মাদকের এ থাবা বর্তমানে শহর থেকে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও ঢুকে পড়েছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে এমনকি আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনেই চলছে মাদকের জমজমমাট বাণিজ্য। মাঝে মধ্যে পুলিশ কিছু ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলেও রাঘব বোয়ালেরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মাদকের ব্যবসা করে রাতারাতি অগাধ অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি।
সাম্প্রতিক সময়ে আশাশুনির সর্বত্র মাদকের বিস্তার ঘটেছে আশংকাজনক হারে। একদিকে উঠতি বয়সের তরুণদের মাঝে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মাদকের ব্যবহার আর মাদকের থাবায় পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেকেই। অন্যদিকে বেড়ে গেছে চুরি, ছিনতাই ও ছোটখাটো অপরাধ। এই ব্যবসার ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বেশিরভাগের বয়স ১৬ থেকে ৩২-এর মধ্যে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও গডফাদারদের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সব জেনেও চোখ বন্ধ করে থাকার নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে মাদকের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে কাজ করা সরকারি প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন বলতে গেলে একেবারে অলস সময় কাটাচ্ছে। তাদের চোখের সামনে দিনে-দুপুরে চলছে মাদকের কেনাবেচা।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, দুর্দান্ড প্রতাপের সাথে চালিয়ে যাওয়া এই মাদক সিন্ডিকেটকে নানাভাবে ব্যাকআপ দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা । এই ব্যাকআপের জ্বালানী হিসেবে কাজ করছে নেতাদের বাড়তি পাওনা। মাদকের খুচরা বাজার মধ্যম বয়সী কিছু “বড় ভাই” এতোদিন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে তারা ব্যবহার করছে অল্প বয়সী কিশোরদের। আড়াল থেকে তাদের হাতে যারা মাদক পৌঁছে দিচ্ছে মাদক। আশাশুনিতে মাদক বিক্রির তালিকায় বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা। যাকে সেবনকারিরা “বাবা” বলে সম্বোধন করে। এই ইয়াবার প্রধান বাজার হলো বুধহাটা,বড়দল,আশাশুনি,আনুলিয়া,শ্রীউলা,কালীবাড়ি,কচুয়া,তেঁতুলিয়া,দরগাপুর।পরের অবস্থান হলো ফেনসিডিলের। এটার সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে “কাড” এটি সারা উপজেলা ব্যাপী পাওয়া যাচ্ছে। এরপরের স্থানে রয়েছে হেরোইন । তারপরের অবস্থান হলো গাঁজা, যাকে ব্যবহারকারিরা “ষ্টিক” ও কলকি বলেও ডাকে। এই গাজাঁর বিচারন সর্বত্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফেনসিডিল ও ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। ৩০জন ব্যবসায়ী পরিচালনা করেন ফেনসিডিল ও ইয়াবার ব্যবসা। ফেনসিডিলের চালান আনা হয় সীমান্ত ভোমরা পার হয়ে । ইয়াবা আনা হয় খুলনা হয়ে পাইকগাছা রাড়ুলি হয়ে।সাধারণতঃ সন্ধ্যার পর মোটর সাইকেল যোগে আশাশুনিতে ঢুকে মাদকের চালান। নির্ধারিত কমিশনের মাধ্যমে তিন থেকে ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট মাদকের চালান আশাশুনির বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে আসে। তাদের কাজ শুধু পৌঁছে দেওয়া। আরেকটি সিন্ডিকেট রয়েছে বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা মাদকগুলো এলাকাভিত্তিক পয়েন্টগুলোতে সরবরাহের জন্য। এরপর যায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। এসব এলাকাগুলোতে চায়ের দোকান, পানের দোকান, মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার, সিডির দোকান, লেদ এর আড়ালে অস্যংখ্য খুচরা মাদক বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অনেকটা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের মাদক। চলে অবিরাম বিক্রয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাঝে মাঝে দুয়েকজন আটক হলেও আইনের ফাকঁফোকর অথবা বড়ভাইদের তেলেসমাতিতে বেরিয়ে আসে ক’দিন বাদেই। আবারও শুরু হয় দেদারসে বাণিজ্য। এসব মাদক সিন্ডিকেটের পাতানো মাদকের জালে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে আশাশুনির যুব ও তরুণরা। মাদকের রাহু চক্রে আবদ্ধ হচ্ছে নতুন নতুন তরুণ ও ছাত্ররাও। এরই সুফল হিসেবে বৃদ্ধি পেয়েছে চুরি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং সহ বিভন্ন অপরাধ।
এদিকে বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপ মতে, শুধুমাত্র বুধহাটা সহ আশপাশ এলাকায় মাদকসেবী রয়েছে প্রায় কয়েকশ। পুলিশ মাঝে মধ্যে ইয়াবা ও ফেনসিডিল চালানসহ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলেও এদের গডফাদার কিংবা মূল ব্যবসায়ীদের আটক করতে সক্ষম হয়না। মাঝে মধ্যেই তারা অভিযান চালিয়ে আটক করে মাদক ব্যবসায়ীদের। যদিও আইনের ফাঁক গলে তারা মুক্তি পেয়ে ফের তাদের পুরনো পেশায় ফিরে যায়।