সচ্চিদানন্দদেসদয়: আশাশুনিতে রোদ বৃষ্টি গরম শীত উপেক্ষা করে কাক ডাকা ভোরে পত্রিকা বিক্রেতা নুরইসলাম ছুটে আসেন পত্রিকা দপ্তরে কিংবা এজেন্টের কাছে। সেখান থেকে দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে আবার ছুটতে শুরু করেন গ্রাহকদের দরজায়। দেশ সমাজ বিশ্বের খবর মানুষের মাঝে পৌছে দেওয়া যেন তাদের ব্রত। দেশ জনপদের সমস্যা সম্ভাবনার খবর বিলি করলেও তারা থেকে যান মানুষের অগচোরে। তাদের মাঝেও লুকিয়ে আছে সুখ দুুঃখের গল্প। আশাশুনি সদরের কয়েক জন পত্রিকা বিক্রেতার সাথে কথা বলে সেই তথ্য মিলেছে। তেমনই একজন নুর ইসলাম ২৫ বছর আছেন পত্রিকা বিক্রির পেশায়। বাড়ি তার আশাশুনির সদরের মহিলা কলেজের পাশে। দীর্ঘ সময়ে পত্রিকা বিক্রির পেশাতে থেকে এক খন্ড জমি কিনে বাড়ি করেছেন। নুর ইসলাম বলেন মাসে মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করেন। এত অল্প আয়েও তার পথ চলা থেমে থাকেনি। এক ছেলে এক মেয়েকে লেখা পড়া শেখাচ্ছেন। ছেলে এখন আশাশুনি সরকারী কলেজে বিএ অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। মেয়ে ৬ষ্ট শ্র্রেনীতে পড়ালেখা করছে। তার আশা তাদের মানুষের মত মানুষ করতে চান তিনি। অল্প বেতনে সংসার চলে কেমন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৎ পথে অর্থ উপার্জন করে কোন রকমে দিন চলছে। দ্রব্যমুুল্যের যে উর্ধ্বগতি তাতে জীবন চালানো কঠিন। বর্তমান সময়ে আয় খুব কম। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন অন্য পেশায় যেতে চান না। জীবনের বেশির ভাগ সময় আছি এই পেশায় অন্য পেশায় যাওয়া আর সম্ভব না। এই পেশাকে ভালোবেসে ফেলেছি, এতেই আমি আনান্দ পাই। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই পেশায় থাকব। বর্তমান সময়ে পত্রিকার চাহিদা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন মানুষ আগের মতই পত্রিকা পড়ে। বর্তমান ইন্টারনেটের যুগ হলেও পত্রিকার পাঠকরা পত্রিকা পড়া বন্ধ করে নি পত্রিকার চাহিদা আগের মতই। পত্রিকা বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন ৮ বছর পত্রিকা বিক্রয়ের সাথে জড়িত বাড়ি আশাশুনির সদরে। তিনি বলেন সন্তানদের নিয়ে সৎ পথে অর্থ আয় করে জীবন চলছে কোন রকমে। এই পেশা থেকে ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি। বর্তমানে আয় রোজগার খুবই কম। কোন রকম চলছে জীবন। নুর ইসলামের মত তিনি ও বলেন অন্য কোন পেশায় যেতে ইচ্ছে হয় না। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই পেশায় থাকবেন। ইন্টারনেটের যুগেও তার পত্রিকা বিক্রি তেমন কমেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।পত্রিকা বিক্রেতা বুধহাটার রেজাদুল ইসলাম,আশাশুনির কালী কিংকর সোদকনা পত্রিকা বিক্রি করছেন ৩ বছর। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি। অনেক কষ্টে সংসার চলে তার। তবুও এ পেশা থেকে অন্য পেশায় যেতে চান না তিনি। সব মিলিয়ে তারা বলছে খবরের কাগজ ও পাঠক উভয়ের মাঝে সেতু বন্ধন তৈরীতে ভূমিকা রাখব আমরা। সমাজে আর পাঁচটি পেশার চেয়ে তাদের পেশা ভিন্ন। অন্য পেশার লোকদের বেতন বাড়ার সুযোগ থাকে কিন্তু আমাদের জীবন জীবিকা পত্রিকা বিক্রির উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে দিন দিন জীবন যাপন কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে তারা দাবী করেন।
আশাশুনিতে পত্রিকা পরিবেশকদের খবর কেউ রাখে না
পূর্ববর্তী পোস্ট