
প্রতিদিন লাখ টাকা আদায়;
উপজেলা প্রতি ১০ থেকে ২০জন দালাল;
সদর নিয়ন্ত্রন করে রিপন;
আহাদুর রহমান জনি: সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক সাহাজান কবির। জেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া দালালদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কখনো সরাসরি, কখনো বিকাশ বা কখনো অফিসের কর্মচারীদের মাধ্যমে এ টাকা তোলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক সাহাজান কবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তারা ও ট্রাভেল এজেন্সি নামধারী অনলাইনে আবেদন ফরম প‚রণ করার দোকানের নামে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সদর উপজেলার পাসপোর্টের দালালদের দলনেতা রিপন। এছাড়াও কাটিয়া লষ্কর পড়া শান্ত, কদমতলা রফিকুল, মোস্তাফিজ ও ডালিম, মাদ্রাসা সহকারি সুপার সোনা সহ আরও অনেকে।
শুধু এরা নয় পাসপোর্ট অফিসের পার্শ্বে অবস্থিত সবকটি কম্পিউটারের দোকানেই এ অবৈধ সুবিধা নেয়া যায়। এছাড়াও পৌরসভার সামনে, পোস্ট অফিস সহ বিভিন্ন স্থানে কম্পোজের দোকানের নামে পাসপোর্টের দালালি ব্যবসা করছে তারা। আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট কম্পিউটার বিল পরিশোধের পর অতিরিক্ত ১৫০০ টাতা হাতে দিলেই হবে। এসব কম্পিউটারের দোকানের আবেদন সব জমা হয় রিপনের কাছে। সেই সবাইকে স্লিপ ও কাগজ তুলে দেয়। সে একটি বিশেষ চিহ্ন দিয়ে দিলেই তা পাসপোর্ট অফিসে পাঠানো হয়। অনেক সময় পাসপোর্ট অফিসের কেরানী বা অন্য কোন কর্মকর্তা এসে তার কাছ থেকে টাকা ও আবেদনের কাগজ নিয়ে যায়। আবার কখনো সে নিজেই গিয়ে দিয়ে আসে।
শ্যামনগর উপজেলার দালাল প্রধান হিসেবে কাজ করে উৎপল মন্ডল। জালিয়াতির ও হয়রানীতে সবার শীর্ষে। ১০০ পাসপোর্ট করলে ৯০% ইচ্ছাকৃত ভুল করে হয়রানীমূলকভাবে পাসপোর্টধারীদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে এবং ভারতীয় বিভিন ভিসায় হয়রানী করে থাকে। এ শ্যামনগর উপজেলার পাসপোর্ট ও ভিসা জগতের চাঁদাবাজির শীর্ষে অবস্থান করছে। মোহনা ডিজিটাল স্টুডিও এন্ড ফটোষ্ট্যাট এর মিঠু; রংধনু ডিজিটাল স্টুডিওর প্রোঃ বাসুদেব মন্ডল; বিসমিল্লাহ কম্পিউটারের রবিউল ইসলাম; রশিদ কম্পিউটার এন্ড ফটোষ্ট্যাটের মোঃ আব্দুর রশিদ; মা-মনি কম্পিউটার এন্ড ডিজিটাল স্টুডিওর সুমন তরফদার; রহমান গ্যাস হাউসের গোলাম রহমান; মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এর ইউডিসি প্রবীর কুমারসহ শ্যমনগরের বিভিন্ন ফটো স্টুডিও, কম্পিউটার কম্পোজের দোকান সহ অনেকেই ভ্রাম্যমান ভাবে পাসপোর্টের দালালি করে। শুধু শ্যমনগর উপজেলায় নয় এরকম সিন্ডিকেট প্রত্যেকটি উপজেলায় নিয়োগ দেয়া আছে।
কালিগঞ্জের ঢাকা স্টুডিওর মালিক রশিদ ছাড়াও জাহাঙ্গীর, সঞ্জয়, বিশ্বজিৎ, শফিক, মিলন এরা পাসপোর্ট অফিসের চিহ্নিত দালাল। এদের প্রত্যেকেরই আছে ফটো স্টুডিও, কম্পিউটার কম্পোজের দোকান।
উপজেলার দালালরা অফিসের বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে থাকে। অনেক সময় সরাসরি দিয়ে যায়। আবার সেবাগ্রহীতাদের হাতে করেও পৌছে দেয় অতিরিক্ত টাকা। এরপর কোন রকম হয়রানি ছাড়াই তৈরি হয় পাসপোর্ট। এভাবে জেলাব্যাপী প্রতিদিন ৪০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত পাসপোর্ট আবেদন করা হয়।
সিন্ডিকেটটি এতটাই শক্তিশালী যে আবেদনকারী যেই হোকনা কেন অবশ্যই তাকে উপরি দিয়েই পাসপোর্ট পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট প্রতি ব্যাংক ড্রাফটের পর অতিরিক্ত ১ হাজার ৫শ টাকা সালামি দিতে হয়। যদি ওই পাসেপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর হয় তাহলে সেই সালামি হয় ৩হাজার টাকা।
এখানেই শেষ নয় আরও আছে। পাসপোর্টের আবেদনের জন্য জমাকৃত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কোনটিতে যদি ভুল ধরা পড়ে তাহলে ওই ঘুষের পরিমান কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারেনা। পাসপোর্ট রিনিউয়ের ক্ষেত্রে হয়রানির গভীরতা আরও বেশি। তাই ঘুষের পরিমানও বেশি। রিনিউয়ের ক্ষেত্রে দালালরা সর্বপ্রথম পুরোনো পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্র দেখতে চায়। যদি কোন ভুল থাকে তাহলেই সে মোতাবেক হবে দরদাম। যদি কারও জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে পাসপোর্টের নামের বানান মিল না থাকে অথবা অন্য কোন তথ্য যদি ভুল থাকে সেক্ষেত্রে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষের টাকা গুনতে হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের ৬৯টি পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি নিয়ে একটি সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা তোলা হয়। সত্য হলো এটিই যে প্রতিদিন কমপক্ষে ১লাখ থেকে ২ লাখ টাকা আদায় করা হয়। কি পরিমান সেবা গ্রহীতা হয়রানির স্বীকার হয় তা পাসপোর্ট অফিসের সার্ভার খতিয়ে দেখলেই পাওয়া যাবে।