
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সফল হয়েছে। এ টিকা পরীক্ষামূলকভাবে যাদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের সবার মধেই অ্যান্টবডি সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে ভ্যাকসিনটির প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম ধাপে ১ হাজার ৭৭ জনের শরীরে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, এই ভ্যাকসিনটি যাদের প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং শ্বেত রক্তকণিকা (হোয়াইট ব্লাড সেল) তৈরি করে; যা শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের এই ভ্যাকসিনকে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতিশীল উদ্ভাবন হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে এ ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সুরক্ষা দেবে কিনা; সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ও সুরক্ষার ব্যাপারে জানতে বৃহৎ পরিসরে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা চলমান।
আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে দেয়ার জন্য ভ্যাকসিনটি যথেষ্ট নিরাপদ কিনা সেটি জানাই ছিল প্রথম ধাপের পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগে শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে পারে বলে প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলে জানানো হয়েছে।
প্রথম ধাপের ফল সোমবার প্রকাশিত হলেও অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটির তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে ৪২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে পরীক্ষার ফল পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার মানুষের দেহে তা প্রয়োগ করবে অক্সফোর্ড। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার ও ব্রাজিলে ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে।
ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অক্সফোর্ড। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্ত পাবেন বলে আশা করছেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিকে ‘দ্বৈত প্রতিরক্ষা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনটি মহামারি ঠেকাতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরও অনেক কাজ বাকি আছে। কিন্তু প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল আশাব্যঞ্জক।
গত ছয় মাসে ছয় লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে একটি ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় ছিল সারা বিশ্ব। কয়েক মাসের অবিরাম চেষ্টা ও গবেষণার পর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ফলাফল বিশ্ববাসীকে আশার আলো দেখালো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অন্তত ১৪০টি টিকা আবিষ্কারের প্রকল্প চলছে সারা বিশ্বে। তার মধ্যে অন্তত ১৩টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।