
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর ব্যুরো: ১১ ডিসেম্বর বৃহষ্পতিবার পশ্চিম সুন্দরবনের অভারণ্য এলাকায় অবৈধভাবে মাছ শিকারের দায়ে ৩৩জেলেকে মুন্সীগঞ্জের নৌ-পুলিশ আটককরে জেল হাজতে প্রেরণ করে। খবরটি নানা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় এই ঘটনায় গা-ঝাড়া দিয়েছে বনবিভাগের উর্দ্ধত্মন কর্তৃপক্ষ। বনবিভাগের একটি দ্বায়ীত্বশীল সুত্রে জানাগেছে পশ্চিম সুন্দরবনে স্মার্টটিম চলমান রয়েছে। তাছাড়া স্টেশন ও টহলফাঁড়ি অতিক্রম করে কিভাবে এতগুলো অবৈধ্য মাছ কাঁকড়া আহরণকারীরা সুন্দরবনের অভায়ারণ্য এলকায় প্রবেশ করল? তা জানতে চেয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ ৪ স্টেশন, ৬ টহল ফাঁড়ি এবং স্মার্ট টিমকে কৈফিয়ত তলব করেছে বন বিভাগের উর্দ্ধত্মন কর্তৃপক্ষ। সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা গাবুরার ডুমুরিয়া গ্রামের বাবলু শেখ, ছাত্তার ঢালী, আনছার গাজী, মোজাম্মেল হক ও বুড়িগোয়ালীনী ইউনিয়নের কাঁকড়া আহারণকারী এনছার আলী, মালেক সানা, মোন্তেজ মোল্যা ও গফ্ফার জানান, বন বিভাগের বনরক্ষীদের উৎকোচ দিলেই সব যায়েজ। বন রক্ষীদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে পারলে পাশ-পারমিট আছেকিনা তা দেখার কোন প্রশ্নই আসে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বন বিভাগের স্টেশন কর্মকর্তা জানান, স্মার্ট টিমের টিম লিডার নাসির উদ্দিন ও কামরুল ইসলাম জমিয়েছে কালো টাকার পাহাড়। এই এক বছরে স্মার্ট টিমের নামে সরকারি বরাদ্দের কোটি টাকা ব্যয় করে নিজেরা গুছিয়েছে তাদের আখের। বনজীবিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ট্যাংরাখালী গ্রামের নজরুল ও আরিফুল জানান, স্মার্ট ধরলেই পাশ আছে কি না জিজ্ঞাসা না করে কথা বলার আগেই ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে। ঘুষের টাকা যারা পরিশোধ করতে পারে তারা ঠিকঠাকমত বাড়ীতে আসে। আর যারা টাকা দিতে অপারাগতা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বনমামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। গত তিন বছরে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট কর্তৃক প্রায় ২শতাধিক বন মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি মামলার দায় হতে আসামীরা অব্যহতি পেয়েছে। কারণ, স্মার্ট টিমের বনরক্ষীরা আদালতে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রামানাদী পেশ করতে বর্থ্য হয়েছে। উল্লেখ্য, সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অভয়ারণ্য এলাকা থেকে ট্রলার নৌকা, জাল, আটনসহ জেলে আটক। জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মুন্সীগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ও বুড়িগোয়ালীনি বনবিভাগ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সুন্দরবনে বিশেষ অভিযান কালে ১১ ডিসেম্বর সুন্দরবনের নিষিদ্ধ অভায়ারন্য এলাকার বেহালা, কয়লা খাল নামক স্থান থেকে ভোর ৫.০টার দিকে ১৩টি নৌকা, ২৪টি চরপাটা জাল, ১৫০টি আটন ও ১টি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারসহ ৩৩ জন মাছ ধরা জেলেকে আটক করে। তবে ২০ নভেম্বর উক্ত জেলেরা সাতক্ষীরা রেঞ্জের কোবাদক স্টেশন থেকে পাশ পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। জেলেদের মধ্যে ইব্রাহিম ঢালী, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, ইমান আলি, শফিকুলসহ ৩৩জন আটককৃত জেলে জাল নৌকাসহ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খুলনা এডিশনার নৌ-এসপি জিয়া উদ্দীন আহমেদের উপস্থিতিতে বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনী স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, জব্দকৃত মালামালসহ জেলেদের বন আইনে মামলা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ধৃত জেলে ট্রলার মালিক হাসান জানায়, আমার ট্রলারের বৈধ পারমিট আছে। যে কারনে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছি। নিষিদ্ধ অভায়ারন্য এলাকায় প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সাগরের কিনারায় কুয়াশার কারণে বাহির মান্দারবেড়ে স্থানে ঢুকে পড়লে বন বিভাগ তথা নৌ-পুলিশ আমাদেরকে আটক করে নিয়ে আসে। তবে নিষিদ্ধ বেহালা, কয়লা খালের নাম বলানো হয়েছে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার স্বার্থে। কিন্তু, বিষয়টি এখন অন্যরকম হয়েছে।