
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাথা, কোমর ও পায়ের প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে এখন আর স্বাভাবিক ভাবে চলাফেলা করতে পারিনা। অনেক কষ্টে চলাফেরা করলেও ডান পায়ে সমস্যা হয়। তবে বেশি সময় চলাফেরা করলে ডান পা ও মাথায় যন্ত্রনা করে। পুরানো কথা বেশি দিন মনে রাখতে পারিনা, ভুলে যায়। এছাড়া দিনে বা রাতে মাথার ডান পাশে ও কোমরের নীচ থেকে দুই পায়ে যন্ত্রনায় কারনে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। অধিকাংশ দিনই মাথার যন্ত্রনায় ঘুম না আসায় রাতভর জেগে থাকতে হয়। এসব কথা বলইে অজানা আতংকে কিছু সময় নিরব থাকেন সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজুলপুর কৃষক কাবে বসে এ ভাবেই নিজের শারিরিক অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার দৈনিক মানবজমিনের সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন।
২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর বিএনপি জামায়াত-শিবিরের হরতাল অবরোধ চলাকালীন সংবাদ সংগ্রহের সময় পূর্ব পরিকল্পিত বিএনপি- জামায়াত- শিবির ক্যাডারা হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন আরো বলেন, তুজুলপুর গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে সংবাদ সংগ্রহের কাজে সকাল ১০ টার দিকে মটরসাইকেলযোগে সাতক্ষীরা প্রেসকাবের উদ্দেশ্যে রওনা হলে আখড়াখোলা দেবনগর রাস্তার উপর আগে থেকে অবস্থান করা বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সস্বস্ত্র ক্যাডাররা আমার গতিরোধ করে এবং চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। এসময় সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা লোহার রড ও দেশীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। তিনি বলেন, হামলার সময় আমার বৃদ্ব মা আর সন্তানের কথা বলে তাদের কাছে দুই পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ছিলাম কিন্তু তারা আমার কোন কথা শোনেনি। একপর্যায়ে আমি রক্তাত্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এর পরের ঘটনা তিনি আর বলতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে থাকা ইয়ারবকে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা মৃত্য ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এসময় এলাকার কিছু মহিলারা তাকে উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও বাঁধা দেয় এবং মারপিটের হুমকি দেয়। তারা বলেন, পরে সংবাদ পেয়ে সাংবাদিকরা সাতক্ষীরা আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতায় হাত, পা ভাঙ্গা অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্থানীয় সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম জানান, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনকে আশংকাজনক অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৭ দিন অচেতন থাকার পর তার জ্ঞান ফেরে। পরে ১ মাস ৮ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে কিছুটা সুস্থ্য হলে তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও তিনি নানাভাবে শারিরিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে হামরার ঘটনার একদিন পর ইয়ারব হোসেন সেজভাই আবু সিদ্দিক বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় জামায়াত ক্যাডার হাবিবুর রহমান (রেইউ মাদরাসার শিক্ষক), তুজলপুর গ্রামের শিবির ক্যাডার আলম, বাশার, ইব্রাহিম, রায়হানসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ইতিমধ্যে এ জঘন্যতম সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনকে হত্যাপ্রচেষ্টার ঘটনার দীর্ঘ ৭ বছর পার হয়েছে।
অপরদিকে এ মামলায় কয়েকজন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকী আসামিরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। তবে এরইমধ্যে আবার গ্রেফতারকৃত অসামীরা জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার কারনে অসুস্থ্য সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন।