
⬛ বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে
⬛ চাঁদা না পেয়ে হুমকি
⬛ রয়েছে সক্রিয় সিন্ডিকেট
⬛ দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন
⬛ স্থানীয় নেতাদের ক্ষোভ
⬛ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ কামনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা শ্যামনগরে ৩ যুবদল নেতা চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে বেপরোয়া হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোঃ শফিকুল ইসলাম (দুলু) এর নেতৃত্বে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর ও যুগ্ন আহ্বায়ক মোঃ শামছুদ্দোহা টুটুল জমি দখল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজিতে এখন সরব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ তুলে বলেন, শ্যামনগর উপজেলা ব্যাপি অবৈধ পন্থায় টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজিতে শফিকুল ইসলাম (দুলু), আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর, শামছুদ্দোহা টুটুল এলাকায় চিহ্নিত একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তাদের রয়েছে ভয়ংকর সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট। যেখানেই জমি সংক্রান্ত বিরোধ সেখানেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই গ্রুপটি জমি দখলের কাজ করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের নিকট থেকেও জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করে থাকে ভয়ংকর এই সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। এলাকার নিরীহ মানুষ তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায়। কেউ মুখ খুলতে চাইলে তাকে মারপিট সহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের ৩ নেতা অপকর্ম করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। শফিকুল ইসলাম (দুলু), আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর, শামছুদ্দোহা টুটুল এখন আতঙ্কের নাম। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে অতিষ্ঠ। এদিকে ৫ আগষ্টে সরকারের পটপরিবর্তনের পর বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতা- কর্মীরা চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জমি দখল সহ নানাবিধ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিমিত্তে দল থেকে অনেক নেতা কর্মীকে ইতিমধ্যে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে যা দৃশ্যমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা কর্মীদের চাঁদাবাজি ও দখলবাজির রাজনীতি ছেড়ে জনগণের ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এসব দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাঁদাবাজি আর দখলবাজিতে মেতেছে শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির ৩ নেতা শফিকুল ইসলাম (দুলু), আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর, শামছুদ্দোহা টুটুল।
শ্যামনগর উপজেলার ৩ নং সদর ইউনিয়নের নকিপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের আওতাধীন পরানপুর নিদয়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় চিংড়ি চাষের নিমিত্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫ নং পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে “মিনি ফ্লাসিং সুইস” নির্মানের জন্য মেসার্স কে,এম,চিংড়ী প্রকল্পের নামে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরা পওর বিভাগ -১ থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে সেখানে মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট নির্মান করা হয়। বিগত ২০০৪ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশনা এবং নীতিমালা অনুযায়ী মৎস্য ঘের পরিচালনা করে আসছি। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্ট থেকে মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট পরিচালনার জন্য পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্ত একটি মহল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আমার ভাইরার ছেলের মাধ্যমে আমার কাছে “মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট” এর জন্য ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি রাজি না হলে পরবর্তীতে চাঁদার পরিমান কমিয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তারা বলেন, আমাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট ভাংচুর চালানো হবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না। শুনেছি তাদের মধ্যে একজনের নাম শফিকুল ইসলাম, (দুলু), সে শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক। শ্যামনগর উপজেলার ০৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের শিপচন্দ্রপুর গ্রামের আলহাজ্ব ইদ্রিস মোড়ল জানান, আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (দুলু) সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর ও যুগ্ন আহ্বায়ক শামছুদ্দোহা টুটুল, পরানপুর নিদয়া “মিনি ফ্লাসিং সুইস গেটের জন্য প্রথমে তিন লক্ষ টাকা এরপর দেড় লক্ষ টাকা চাঁদার প্রস্তাব দেয়। তিনি বলেন, পরানপুর নিদয়া “মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট” আমি দেখভাল করায় এবং সেখানে আমার ৩০০ বিঘা জমির মৎস্য ঘের থাকায় তারা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট ভাংচুর করা সহ আমার মৎস্য ঘের জবর দখল করার হুমকি প্রদান করে। এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীর আশংকা এই গ্রুপটি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যে কোন সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা- কর্মী অভিযোগ করে বলেন, শফিকুল ইসলাম (দুলু), আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর, শামছুদ্দোহা টুটুল সহ একাধিক ব্যক্তি শ্যামনগর উপজেলা ব্যাপি অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন স্থানে জমি দখল, চাঁদাবাজি করছে। যা দলের ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাদের চাঁদাবাজি আর দখলবাজিতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ওই নেতারা আরও বলেন, এই গ্রুপের ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডবে এলাকার সাধারণ মানুষ এখন রীতিমতো আতঙ্কিত। তারা বলেন, এই গ্রুপের মূল হোতা শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম দুলু। খোজ নিয়ে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম (দুলু) ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের
বংশীপুর গ্রামের প্রয়াত গোলাপ আলীর ছেলে ও শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক। তার অপর সহযোগী আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর শ্যামনগর ০৩ নং সদর ইউনিয়নের আহাদ আলী গাজীর ছেলে ও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব। শামছুদ্দোহা টুটুল শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের নকিপুর মাজাট গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক। এদিকে শ্যামনগর উপজেলার ৫ নং কৈখালী ইউনিয়নের আওতাধীন “নিদয়া বিজিবি ক্যাম্প” সংলগ্ন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্টে সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত “মিনি ফ্লাসিং সুইস গেট” ভাংচুরের শিকার হলে হাজার অধিক জমির মৎস্য ঘের মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়ে জিরো পয়েন্টে থাকা নিদয়া বিজিবি ক্যাম্প প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। এছাড়া শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা করছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয় শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (দুলু) মুঠোফোনে আলাপকালে তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এ বিষয় শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয় শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক শামছুদ্দোহা টুটুল এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেউ আমাকে অহেতুক হয়রানি করার জন্য আপনাকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এদিকে বিএনপির স্থানীয় একাধিক নেতা কর্মীরা যুবদলের এই ৩ নেতার চাঁদাবাজি, দখলবাজির এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে দলের মহাসচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।