স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত কসাই খ্যাত ডাঃ তানিয়ার ভুল অপারেশনে সঙ্গীতা মণ্ডল নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় জনরোষ থেকে পালিয়ে রক্ষা পেয়ে দেড় লক্ষ টাকায় রফা দফা করে আবারো উপজেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। অনুমোদন বিহীন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বাস টার্মিনাল সংলগ্ন শহীদ সামাদ স্মৃতি মাঠের পাশে অবস্থিত ডাঃ হযরত আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সিরাজুল ইসলামের অপারেশন টেবিলে গত ২৫ নভেম্বরের। এ ঘটনা নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর বুধবার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল বিষয়টি উত্থাপন করলে থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি তার জানা থাকলেও ভুক্ত ভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে মোটা অংকের টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। টাকা নেওয়ার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে নিহত প্রসূতির ভাই সঞ্চিত মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, তার বাবার মাধ্যমে টাকা দিয়ে মীমাংসা করে নিয়েছে। তবে কত টাকা দিয়ে মীমাংসা করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিষয়টি নিয়ে কসাই খ্যাত ডাঃ তানিয়া নিজের অপকর্ম ঢাকতে পত্রিকায় হার্ট অ্যাটাকের কথা বলে প্রতিবাদ দিয়ে দায়মুক্তি পায় । গত ২৫ নভেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার গোলখালী গ্রামের প্রসেনজিৎ মন্ডল এর স্ত্রী সংগীতা মন্ডল এর প্রসব বেদনা শুরু হলে মোটা অংকের টাকায় বেলা ১১ টার দিকে কালিগঞ্জ হযরত আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করলে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ডাঃ তানিয়ার ভুল অপারেশনে প্রসূতি সংগীতিতা মন্ডলের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজিত জনতা অবরুদ্ধ করে আটকে রাখে। ওই সময় একটি চক্রকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে কৌশলে তার স্থানীয়দের সহযোগীতায় মোটরসাইকেলে পালিয়ে এ যাত্রায় রেহাই পায়। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এর আগেও একাধিক হত্যা ও ভুল চিকিৎসা অপারেশনে মৃত্যু নিয়ে তার চিকিৎসা বন্ধের দাবিতে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসকের নিকট একাধিক অভিযোগ হলেও ডাঃ তানিয়া অভিযোগকারীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়াদে অপকর্ম। অপচিকিৎসা চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নাই।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমার নিকট কেউ অভিযোগ করেননি। অনুমোদন বিহীন ডাক্তার, নার্স ছাড়া ক্লিনিক পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সিভিল সার্জনের নিকট কথা বলতে বলেন। ডাঃ তানিয়ার বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিভিল সার্জন এর নিকট অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
গত ১০ মে দেবহাটা থানার কামটা গ্রামের শাহিন আলম নামে এক ব্যক্তি পায়ের ফোড়া নিয়ে নলতা শেরেবাংলা ক্লিনিকে ভর্তি হলে পাইলসের ডাক্তার ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম এবং ডাঃ তানিয়া অপারেশনের জন্য ৬ লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে নিয়ে বিনা পয়সায় অপারেশন করে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা নিয়ে সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ করে। পরে ওই ভুক্তভোগি শাহিন আলমের হাতে পায়ে ধরে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করে। একই দিনে পাইকাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে টনসিল অপারেশনের নামে শ্বাসনালী কেটে হত্যা করে। সে বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদেরকে অভিযোগ থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।
দেবহাটা থানার সুশীলগাতি গ্রামের শরিফুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী বেগমকে সিজারের নামে জরায়ুকেটে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেয়ে রক্ষা পাওয়ার ঘটনার অভিযোগে হাতে পায়ে ধরে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করে।
এ ধরনের বহু অপচিকিৎসা এবং মৃত্যুর ঘটনায় সিভিল সার্জন বরাবর ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও কসাই ডাঃ তানিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়য় দিন দিন তার হাতে রোগী মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের ক্লিনিকে যেতে বাধ্যবাধকতা থাকায় সে একাই সাতক্ষীরা জুড়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে যেয়ে নিজে এনেস্তেসিয়া ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সব ধরনের অপারেশন করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও শ্যামনগরের সুন্দরবন ক্লিনিক, কালীগঞ্জের এ,আলী ক্লিনিক, হযরত আলী ক্লিনিক, সখিপুরের গাজী সার্জিক্যাল সহ একাধিক ক্লিনিকের সে নিজেই মালিক পার্টনার। যে কারণে কোন অভিযোগ হলেই মোটা অংকের টাকায় জেলা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তেই তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।