ফেরদৌস আহমেদ:
**বিএনপিকে সংগঠিত করতে মাঠে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেতা স.ম হেদায়েতুল ইসলাম, মশিউল হুদা তুহিন,যুবদলের আহবায়ক শরিফুল আহসান টোকন,সদস্য সচিব আবু জাহিদ সোহাগ ও ছাত্র দলের আহবায়ক ইয়াছিন আরাফাত পলাশ**
গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আশাশুনিতে গণ-চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। চলছে দখলবাজিও। চাঁদাবাজি ও দখলবাজির শিকার হচ্ছে বিগত সরকারের নেতা-কর্মীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তিন স্তরে বিভক্ত চাঁদা আদায়কারীরা। এর মধ্যে জুনিয়র গ্রুপ প্রথমে হামলে পড়ছে। যাদের বয়স-১৮-২৩ এর মধ্যে। এরা হানা দেওয়ার সাথে সাথে তাদেরকে নগদ একটা পেমেন্ট দিতে হচ্ছে। এদের মধ্যে ছাত্রদল এর কর্মীদের পাশাপাশি বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সাথে থাকা কিছু দুর্বৃত্তকেও দেখা যাচ্ছে। এই তালিকায় যাদের নাম আছে তারা হলো মাদক মোকলেছ, যুবরাজ, ছাকিব মোড়ল, নাজমুল, ওলিদুল, ওহিদুল, সাইদুল, মোহন, সজিব, নাছিম, সবুজ, ইব্রাহিম, কালাম, হাফিজুল ইসলাম, রুহুল আমিন, খুরশিদ, ফিরোজ হোসেন, ওহিদুল সরদার, জিয়া সরদার, আরসি সরদার, , ছট্টু, সুজন ও টিটু ।
নূরে আলম সরোয়ার লিটন (স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক) কোদন্ডার ১২ বিঘার মৎস্য ঘের দখল করেছে। আশিকুজ্জামান আশিক ( স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব), হাবিবুল্লাহ হাবীল (স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক) ও আব্দুল হাদী মোড়ল (স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা) ৩ জনে বলাবাড়িয়ার ২৫ বিঘার চিংড়ী ঘের দখল করেছে। ছাত্রদলের আহবায়ক ইয়াছিন আরাফাত পলাশ দক্ষিণ চাপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল মন্ডলের নিকট ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে স্থানীয়রা অনুনয় বিনয় করে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলে। চেউটিয়া গ্রামের ছাগল চোর মোস্তাজুলকে আটক করে মারপিটের ভয় দেখিয়ে ১৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে চোরের কাছ থেকে চুরি করা ছাগলটিও নিয়ে নেয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় দফাদারের কাছে ৪ দিন পরে ছাগলটি জমা দেয়।
এই জুনিয়র গ্রুপ হানা দিয়ে ফেরার সময় তারা ইঙ্গিত দেয় যুবদলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। আক্রান্ত ব্যক্তিরা যুবদলের নেতৃত্বদানকারীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা চাঁদার রেট বেধে দিচ্ছে এবং চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। পরে তা ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে যুবদল ও বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতাদের মধ্যে।
অপরদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতৃত্বে আছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আহবায়ক স.ম. হেদায়েতুল ইসলাম, সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আলিম, শেখ আব্দুর রশিদ ও রবিউল ইসলাম ছোট । সিনিয়র বিএনপি নেতাদের এই গ্রুপ জেলা বিএনপির আহবায়ক এড.সৈয়দ ইফতেখার আলীর অনুসারী।
চাঁদাবাজির শিকার যারা: এ, বি,এম মোস্তাকিম, ডাঃ বিক্রম, ম্যাকানিক মহিতুল ইসরাম, হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম, ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম, ইউসুফ, মঙ্গল মেম্বর, কালিবাড়ীর জয় বস্ত্রালয়, কোমলেশ বসু, শরীয়তউল্লাহ, বলাবাড়িয়ার তরুণের ২৩ বিঘা মৎস্য ঘের দখল করে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। প্রকাশের ২০ বিঘার খাল দখল করে ৫০ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। উমাপদ গাইনের ৬ বিঘা জমি দখল করে নেয়া হয়েছে। ঠাকুরাবাদ গ্রামের হিন্দুদের যজ্ঞর ৮ বিঘা মাঠ দখল করে নিয়েছে।
সাবেক মেম্বর দিলিপ মন্ডল ও তার ভাইয়ের ৬ বিঘার মৎস্যঘের দখল করে নেওয়া হয়েছে। মেম্বর তপন মন্ডল ও ঔষধ ব্যবসায়ী মৃন্ময় মন্ডলের কাছে চাঁদার টাকা না পেয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মোটর সাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ধান্যহাটি কালিমন্দিরের মাঠ গত ৬ আগস্ট দখল করে নেওয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান হোসেনকেও এক লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে ডেভিট ও পরেশ।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এই প্রতিবেদনে শুধুমাত্র আশাশুনি সদর ইউনিয়নের গণ-চাঁদাবাজির চিত্র তুলে ধরা হলো। চাঁদা গ্রহণকারীদের তালিকা আমাদের হাতে পৌঁছালেও তা আমরা সুনির্দিষ্ট করে তুলে ধরলাম না। চাঁদাবাজির শিকার ব্যক্তিদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে। একই কারণে চাঁদাবাজির শিকার ব্যক্তিদের ঠিকানা ও পদ পদবী এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা আশাশুনি উপজেলায় অপরাপর ইউনিয়ন গুলোতেও যে চাঁদাবাজি হয়েছে তার চিত্র তুলে ধরবো ধারাবাহিকভাবে। তথ্যদিন হোয়াটসএ্যাপে (০১৭১১-৪৫০০২৫)।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক প্রবীণ রাজনৈতিক স.ম হেদায়েতুল ইসলাম চাঁদাবাজির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ৫ হতে ৮ তারিখের মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা থানা প্রশাসন ও স্থানীয় আর্মি প্রশাসনের সহায়তা দমনের চেষ্টা চালিয়েছি। এখন নেই বললেও ভুল হবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭৭ বছর বয়সে ৬৫ বছরই রাজনীতির সাথে যুক্ত। সত্য এড়ানোর বয়সও নেই আসলে।
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আবু জাহিদ সোহাগ জানান, এ ধরণের ঘটনার জন্য দলের দুর্নাম হচ্ছে। আপনি তালিকাটা দেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মশিউল হুদা তুহিন সাতনদীকে জানান, গণ-চাঁদাবাজির বিষয়ে আমি অবগত নই। নিচের দিকে কিছু সমস্যা আছে। আমরা চেষ্টা করছি সেগুলো সমাধান করার।
উপজেলা জামায়াতের আমীর আবু মুছা তারিকুজ্জামন তুষার সাতনদীকে জানান, তার দলের লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বা দখলবাজির অভিযোগ থাকলে তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণ-চাঁদাবাজির এ অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ তরিকুল হাসান সাতনদীকে বলেন, এ ধরণের অভিযোগ ওঠা দুঃখজনক। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা আছে কোনভাবেই দখলবাজি চাঁদাবাজি চলবে না। যারা এ ধরণের ঘটনার সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।