- সীমানা সংক্রান্ত মামলা সৃষ্টি করে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পায়তারা
- অভিযোগের তীর ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান ও কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপার দিকে
নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি সাতক্ষীরা পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি সাতক্ষীরা পৌরসভার ফেসবুক পেজে প্রকাশ হওয়ার পর শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। সাতক্ষীরা পৌসভা ১৮৬৯ সলে ৩১.১০ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তন বিশিষ্ট খুলনা বিভাগের প্রথম পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৮ সনে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়। বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভার জনসংখ্যা ২ লক্ষ। নাগরিক সেবার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নাগরিক যাতায়াতে রাস্তাঘাট। যার কোনটিতেই এখনও পর্যন্ত নাগরিকরা সন্তুষ্ট না। পৌরসভার এসব নাগরিক সেবা নিশ্চিত না করে ইতোমধ্যে একটি মহল পৌরসভার আয়তন বাড়ানোর পায়তারা চালাচ্ছে। যেটা করলে প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলরের লুটপাট ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পৌর পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র পদ শূন্য হওয়ায় এই মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পয়েছে। সম্প্রতি সীমানা বৃদ্ধির বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় সচেতন মহল মনে করছেন এসব বিষয়ে আইনী জটিলতা সৃষ্টি করে সাতক্ষীরা পৌরসভার আগামী উপ নির্বাচন স্থগিত রেখে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকার স্বপ্ন দেখছেন কাজী ফিরোজ হাসান। সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপার মদদে এসব হচ্ছে বলেও জানা গেছে। শুধু তাই নয়, সৈয়দ মাহমুদ পাপা পৌরসভার ৬টি দোকান ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্চছুক সাতক্ষীরা পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, কিছু পুরাতন কাউন্সিলর পৌরসভা লুটেপুটে খাচ্ছে। তারা নিজেদের নামে পৌরসভার জায়গায় মার্কেট বনিয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩তম পরিষদ সভায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ৪নং ধারার ৪নং উপ- ধারা অনুসারে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার নতুন সীমানা অন্তর্ভূক্ত করণ বা সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব গৃহিত হয়। সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, কাশেমপুর মৌজার (আংশিক), লাবসা মৌজা (সম্পূর্ন), মথুরাপুর মৌজা (আংশিক), বিনেরপোতা মৌজা (আংশিক), মাগুরা মৌজা (আংশিক), মাছখোলা মৌজা (আংশিক), ব্রহ্মরাজপুর মৌজা (সম্পূর্ণ), রামচন্দ্রপুর মৌজা (সম্পূর্ণ), দহকুলা মৌজা (আংশিক), বালিথা এল্লারচর মৌজা (সম্পূর্ণ) এবং হরিণখোলা মৌজা (আংশিক) নিয়ে পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক শামীমা পারভীন রত্না বলেন, সীমানা বাড়ানোর আগে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সক্ষমতা বাড়ানোর পর পরিধি বাড়াতে হবে।
জেলা গণফোরামের সভাপতি আলী নূর খান বাবলু বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা নাগরিক সুবিধা দিতে ব্যার্থ। নতুন করে সীমানা বর্ধিত করলে মুখ থুবড়ে পড়বে সাতক্ষীরা পৌরসভা। সামনে মেয়র পদে উপ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এখন এ ধরনের পদক্ষেপ এর কারণ কি সে অনুসন্ধান করা দরকার।
এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচীনতম সাতক্ষীরা পৌরসভার সীমানা বর্ধিত করণের খবর ভাল। প্রচীনতম এই পৌরসভার নগরায়ন প্রয়োজন। কিন্তু সেক্ষেত্রে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
সাতক্ষীরা জজকোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ বলেন, সীমানা বর্ধিত করণের সুফল-কুফল দুটিই আছে। সীমানা বাড়লো কিন্তু নাগরিক সেবা নিশ্চিত হলো না। সেটি বুমেরং হয়ে দাড়াবে। সক্ষমতা বাড়লে তখন বাড়ানো ঠিক হবে, নতুবা না।
সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান উদ্যোগ নিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে এ গ্রেডে উন্নীত করেন। নাগরিকরা যেখানে পৌরসভার নাগরিক সেবা ঠিকমত পায়না, সেখানে নতুন করে সীমানা বর্ধিত করার উদ্যোগ নিছক তামাছা মাত্র। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ সিদ্ধি হতে পারে কিন্তু পৌরসভার কোন শ্রীবৃদ্ধি হবেনা। এতে কোন সন্দেহ নেই।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌর সভার একটা আয়তন প্রয়োজন হয়। তিনি আরো বলেন, পৌরসভার বর্তমান নাগরিকরাই কাংখিত সেবা পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে নতুন সীমানা বৃদ্ধির পর কি পরিস্থিতি হবে সেটা ভেবে দেখতে হবে। খোঁজ খবর নিয়ে বলতে পারবো।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রচীনতম সাতক্ষীরা পৌরসভার কাংখিত উন্নয়ন হয়নি। নাগরিকদের নূন্যতম নাগরিক সেবাও যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে কিভাবে কর্তৃপক্ষ সীমানা বর্ধিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটি বোধগম্য নয়। আমরা চাইবো তারা এই অলিক ভাবনা থেকে সরে আসুক নতুবা আমরা উদ্যোগ নিয়ে এটি বন্ধ করার আইনগত ব্যবস্থা নিব।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, এখন নয়, আগামীকাল কথা বলবো।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিগত সময়ে আলোচনা হয়েছে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র মো: তজকিন আমমেদ এর দুদকের অনুসন্ধান একদম শেষ পর্যায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। অনুসন্ধান শেখ হলে একই সাথে ফেঁসে যেতে পারেন পুরাতন কাউন্সিলররা।