
সেলিম চৌধুরী: দুর্নীতির অভিযোগে ১৭ মাস আগে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে বদলি করা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফোরকানকে। অফিসের ওই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন কর্মস্থলে একদিনের জন্যও যোগ দেননি তিনি। কোন কাজ নেই তবু রয়ে গেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই। বিগত ১৭ মাসে এক দিনেও অফিস করেননি তিনি। তবে এখন বেতন ভাতার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানাগেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, করোনাকালে ৪৩ লাখ টাকা এবং যন্ত্রপাতি কেনার নামে আরও ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ফোরকান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরনো কর্মস্থলেই (জেনারেল হাসপাতালে) যোগদানের জন্য ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন ফোরকান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলি আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন দাবি করে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের এ আবেদন করেন তিনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক তাঁর আবেদন পত্র ফরোয়ার্ড করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) বরাবর প্রেরণ করেছিলেন। প্রশাসনিক কারণে (দুর্নীতি) বদলী হওয়াতে পরিচালক তার যোগদানপত্র গ্রহণ না করে মহাপরিচালক বরাবর প্রেরণ করেন। এই বিষয়ে একাধিক আইনজীবী বলেন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা চলাকালীন একই বিষয়ে নিম্ন আদালতের আদেশ গ্রহণ করার সুযোগ নেই। তাই মহাপরিচালক তার বদলী আদেশ বহাল রাখেন বা বদলী আদেশ বাতিল করেননি। ফলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের থানা হাসপাতালের এখনও কর্মচারি হিসেবে থাকবেন। তাঁরা বলেন, ফোরকান আইনীভাবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে বেতন ভাতা পাবেন না। জানা যায়, ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের জন্য ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও একটি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর ক্রয় করে। মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কেনা এসব মালামালের দাম ধরা হয় ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে এসব মাল কেনার অভিযোগে দুদক মামলা দায়ের করে। দুদকের মামলা চলাকালেই ২০২২ সালের ২৮ জুন মোহাম্মদ ফোরকান ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিলটি উত্তোলনের জন্য নগরীর নাসিরাবাদস্থ বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে একটি বিল দাখিল করেন। তাতে দেখানো হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিলটির ব্যয় মঞ্জুরি করা হয়েছে। ফলে বিলটি পরিশোধে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কর্মকর্তারা নীরিক্ষাকালে নিশ্চিত হন, বিলটির ব্যয় মঞ্জুরি ভুয়া। কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ফোরকানকে আটক করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। ফোরকানকে পুলিশ আটক করার কথা শোনে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। করোনাকালে ৫৮ লাক ৯৭ হাজার টাকা ডাক্তারদের পরিশোধের কথা বলা হলেও ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি মোহাম্মদ ফোরকান। তাকে বদলির ক্ষেত্রে এই অপরাধও গণ্য করা হয়। তবে এসব অপরাধের কারণে শাস্তি না পেয়ে উল্টো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আইনি যুদ্ধে নেমেছেন ফোরকান।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ডা. পরিমল কুমার পাল বলেন, ‘আমি তাকে (ফোরকান) তিনটি সুযোগ দিয়েছি। সব মামলা প্রত্যাহার করে পূর্বের বদলি করা জায়গা মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দিতে বলেছি। সেখানে যোগ দিয়ে পরে আবেদন করলে প্রশাসন বিবেচনা করবে।’
এদিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফোরকানের কাছ থেকে এখনো তার অফিস কক্ষের চাবিটা পর্যন্ত বুঝে নেয়নি। ফলে ফোরকান তার অফিস কক্ষে বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে ক্লাব ঘরের মতো হৈ-হুল্লোড় ও আড্ডায় মেতে উঠেন।
বদলীকৃত স্থানে যোদদান না করা ও বেতন ভাতার আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ফোরকান বলেন, আমার বদলী আদেশ স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন আদালত, তাই বদলীকৃত জায়গায় যোগদান করিনি।
এ ব্যপারে কথা বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসার ডা. সামিউল ইসলামের মোবাইলে কল ও বার্তা দিয়ে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।