
হাবিবুর রহমান : আসন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন মেরুকরন শুরু হয়েছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের স্লোগানের আদলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করার আগ্রহ মাঠ পর্যায়ের কাউন্সিলরদের। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন এড়িয়ে সমঝোতার কমিটির নামে যেন দূর্ণীতিবাজ অনুপ্রবেশকারী ও ক্যাডার শোষকরা ঢুকে না যায় সেজন্য দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ চায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা।
বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য সাবেক সফল মন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস.এম কামাল হোসেন।
সভায় ঘোষনা দেওয়া হয়, আসন্ন উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহীরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে আশাশুনি উপজেলা, কালিগজ্ঞ উপজেলা ও কলারোয়া উপজেলাতে আওয়ামী লীগের ৩ জন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কোন পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য ঘোষিতরা হলেন, কালিগজ্ঞ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু, কলারোয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টু। ওই তিনজনই ছিল হেভিওয়েট প্রার্থী।
তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য ঘোষনার পর পরই নতুন মুখ খোজা শুরু হয়ে গেছে।
আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ ঃ আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আগামী ২৫ নভেম্বর। এখানে বর্তমান সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম সভাপতি পদের প্রার্থী। তার সঙ্গে প্যানেল নিয়ে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চায় শুম্ভুজিত মন্ডল ও শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল। আবু হেনা সাকিল বিগত দুটি সম্মেলনে সম্মানজনক ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এবার এ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু প্রতিদ্বন্দি¦তা করতে না পারায় আবু হেনা সাকিলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
তারা আশা করেন, আগামী সম্মেলনে ভোটাভুটি নয় নেতৃত্ব নির্বাচন হবে সমঝোতার ভিত্তিতে। তবে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি পক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু সাতনদীকে বলেন, চমক আছে। নিশ্চয় সমঝোতার আশা ভঙ্গ হবে।
এখানে মোস্তাকিম-শুম্ভজিত মন্ডল প্যানেল দিলে বিপরীত গ্রুপে সভাপতি প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সাংসদ সৎ রাজনৈতিক ডা. এস.এম মোকলেছুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে তার রানিং মেট হওয়ার দৌড়ে আছেন আশাশুনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও আশাশুনি সদর চেয়ারম্যান স.ম সেলিম রেজা মিলন, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম, আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৎ যুব নেতা হিসেবে খ্যাত হুমায়ুন কবির সুমন। সুমন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান এর ছেলে ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টুর ভাতিজা।
উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, আমি চাই স্বচ্ছভাবে কাউন্সিলরদের ব্যালটের মাধ্যমে উপজেলা আ.লীগের কমিটি হোক। আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। ব্যালটে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত যাই হোক আমি মেনে নেব।
তিনি বলেন, অতীতে নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে সকল সময় আমি পাশে থেকেছি। সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আমাদের সকলে মিলে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। দলকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। রাজপথে থেকে অতীতে কিভাবে বিএনপি জামায়াতের তা-ব মোকাবেলা করেছি সেটি আশাশুনি উপজেলার মানুষ সকলেই জানেন।
উল্লেখ্য, অতীতে বিভিন্ন সময় উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হকের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বাঁধাগ্রস্থ করলে শাহনেওয়াজ ডালিম সাবেক সফল এই মন্ত্রীর পাশে থেকে রাজনৈতিক বাঁধা বিপত্তির বিরুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন রাজপথে। তরুণ উদীয়মান এই রাজনৈতিক নেতা শাহনেওয়াজ ডালিমকেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দূরদর্শীতার কারনে ছাত্র রাজনীতি থেকে বার বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে উপজেলা আ.লীগের সাংগঠণিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
কালিগজ্ঞ উপজেলা আওয়ামী লীগ ঃ কালিগজ্ঞ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ সাঈদ মেহেদীর প্রার্থীতা নিষিদ্ধ করার নতুন মেরুকরন শুরু হয়েছে।
নিজে প্রার্থী হতে না পারলেও তার পক্ষে প্যানেল আসছে এটা নিশ্চিত করেছেন সাঈদ মেহেদী। তার সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী হলেন, মাস্টার নরিম আলী মুন্সি, শেখ মোজাহার হোসেন কান্টু। সম্পাদক পদে প্রার্থী হবেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শেখ নাজমুল ইসলাম, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠণিক সম্পাদক ডিএম সিরাজুল ইসলাম। তবে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সম্মেলন হলেও বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত কাউন্সিলর লিস্ট চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী।
তবে জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সম্মেলনের উদ্বোধক মুনসুর আহম্মেদ জানান, কাউন্সিলর লিস্ট নিয়ে সমস্যা নেই। কাউন্সিলররা চাইলে সমঝোতা না চাইলে ভোট হবে।
কালিগজ্ঞ উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে তারালী ইউপি চেয়ার¤্রান মো. ইনামুল হোসেন ছোট সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন তার রানিং মেট সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে পারেন শ্যামনগরের সংসদ সদসস্যের অনুসারি ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি সজ্ঞয় মুখার্জী অথবা প্রয়াত উপদেষ্টা আ.লীগের সভাপতি শেখ আব্দুল অহেদ এর ছোট ছেলে আবুল কাশেম। আব্দুল কাশেম স্থানীয়ভাবে মাছের আড়ৎদারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
কালিগজ্ঞ উপজেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় আ.লীগের সদস্য এস.এম কামাল হোসেন, প্রধান বক্তা হিসেবে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ঃ কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ৩০ নভেম্বর। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা আ.লীগের সাধালণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা সম্মেলনে প্রার্থী হতে না পারলেও তার নেতৃত্বে প্যানেল আসছে। এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন বর্ষিয়ান রাজনীতিক সাবেক সাংসদ সদস্য বিএম নজরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী না হতে পারলে আলোচনা করে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী করা হবে।
অপরদিকে, উপজেলা আ.লীগের বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন জানিয়েছেন, তার প্যানেলে কে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবে সেটি আলোচনা করে ঠিক করা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম চাইলে তিনি জানান, অপেক্ষা করেন বিষয়টি সেনসেটিভ।
জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম জানান, সময়ের স্বল্পতার জন্য ওয়ার্ড ও ইউনয়িন আ.লীগের পূর্বের কমিটিকে বহাল রেখেই সম্মেলন হবে। এ ক্ষেত্রে ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক, ইউনিয়ন সভাপতি-সম্পাদক ইউনিয়নের ১০ ত্যাগী নেতাকর্মীকে কাউন্সিলর করবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান থাকলে তিনি কাউন্সিলর হবেন।