আব্দুর রহিম, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জ উপজেলার বহুল বিতর্কিত দলিল লেখক জিএম শফিকুল ইসলাম ওরফে শফির বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ৩ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারুলগাছা গ্রামের মরহুম শুকচাঁদ হাজারীর ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী ইদ্রিস আলী, মরহুম গহর আলীর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জিএম কওছার আলী ও মরহুম অজিহার রহমানের ছেলে আকছেদুর রহমান বাদী হয়ে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আমলী ২নং আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। সিআর ৪৬৭/২৩ নং মামলার বাদী ইদ্রিস আলী হাজারী জানান, জিএম শফিকুল ইসলাম একজন প্রতারক দলিল লেখক। তিনি বর্তমানে লেখকের লাইসেন্স নিলেও এর আগে তিনি সেটেলমেন্টের মুহুরী ও বিভিন্ন ধরণের দালালী পেশায় জড়িত ছিলেন। সেটেলমেন্ট চলাকালে আমি প্রবাসে থাকার কারণে আমার এস,এ রেকর্ডিয় জমি হালজরিপে রেকর্ডভুক্ত করানোর জন্য বললে তিনি রেকর্ড করানোর জন্য বিভিন্ন খরচ বাবদ ৫৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু তিনি তঞ্চকতার মাধ্যমে নিজ ডিপি খতিয়ানে উক্ত জমি রেকর্ড করিয়ে নেয়। দেশে ফিরে বিষয়টি জানার পর তাকে ৩০/৩১ ধারায় আপিলের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধন করে দিতে বললে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে এবং জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে রেকর্ড বজায় রাখে। একপর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে এবং তার কাছে এহেন প্রতারণার কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তেজিত হয়ে আমাকে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে নাজেহাল করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। সর্বশেষ গত ২৩/০৬/২৩ তারিখে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উক্ত প্রতারণার বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারপিট করতে উদ্যত হয় এবং হাতে থাকা একটি মোবাইল ফোন ও পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পাঞ্জাবী ছিড়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, এলাকায় জাল শফিক নামে পরিচিত শফিকুল ইসলাম রাজস্ব অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে ৬৬৭/২০১৯ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে ওই দলিল হতে ৪৬৫৫/২০১৯ সৃষ্টি করে। এছাড়া গত ১০/০২/৮৮ তারিখে উক্ত শফিকুল ইসলাম ৫৮০নং রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রির পর প্রতারণা ও জালিয়াতি করে একই সম্পত্তি ০৯/০৭/৯৩ তারিখে ৩৭/২০১৯ নম্বর, ০৩/০৫/৯৮ তারিখে ২২৪৮/৯৮ নং, ৩০/১০/১৮ তারিখে ৪০৪৯/১৮নং জমি জালিয়াতির মাধ্যেম বিক্রয় করে। অথচ শফিকের জালজালিয়াতির প্রতিবাদ করায় তিনি ইতোমধ্যে আমাকেসহ আরও কয়েকজনের নামে সিআর ২৮২/২৩ নামে একটি হয়রানি মূলক মামলা করেছেন। আরেক মামলার বাদী জিএম কওছার আলী জানান, আমার নিজ নামে হাল রেকর্ডকৃত ২২ শতক জমি শফিকুল ইসলাম প্রথমে পারুলগাছা গ্রামের জিএম আবুল কাশেমের ছেলে কুয়েত প্রবাসী জাহিদুর রহমানের নামে ভূয়া রেকর্ড তৈরী করে দেয়। পরবর্তীতে ভূয়া খতিয়ান দেখিয়ে সেই জমি শফিকুল ইসলাম নিজ সেরেস্তা থেকে কুয়েত প্রবাসী জি এম জাহিদুর রহমানকে দিয়ে জনৈক আব্দুল বারীর নিকট বিক্রি করায়। কিন্তু জাহিদুর রহমান জানান, শফিকুল ইসলাম আমার কাছ থেকে খতিয়ান রেকর্ড করিয়ে দেয়ার নামে বড় অংকের টাকা গ্রহণ করে। আমি কুয়েত থেকে বাড়ি আসার পর শফিকুল ইসলাম আমাকে জাল রেকর্ড সরবরাহ করেছিল এজন্য আমি না বুঝে ৫ শতক জমি আব্দুল বারীর নিকট হস্তান্তর করেছি। শফিকুল ইসলাম ওই রেকর্ড যে জালিয়াতি করে আমাকে দিয়েছিল তা পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছি, তিনি আমাকে অনেক ঠকিয়েছে। এদিকে হাজী ইদ্রিস আলী হাজারী ও জিএম কওছার আলীর দায়েরকৃত দু’টি মামলার তদন্তভার কালিগঞ্জ সাব- রেজিস্ট্রারের উপর অর্পণ করেছেন বিজ্ঞ বিচারক। তবে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও অজ্ঞাত কারণে কালিগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুল ইসলাম তদন্তকাজে গড়িমসি করছেন বলে অভিয়োগ করেছেন হাজী ইদ্রিস আলী হাজারী ও জিএম কওছার আলী। অপর মামলার বাদী জি এম আকছেদুর রহমান জানান, শফিকুল ইসলাম তাদের রেকর্ড সংশোধনের নামে রেকর্ড সংশোধন করিয়ে দেয়ার নাম করে নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ভূয়া খতিয়ান সরবরাহ করেছে। এঘটনার প্রতিবাদ করলেও তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি এব্যাপারে প্রতিকারের জন্য বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হলে বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই, সাতক্ষীরা কে নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে পিবিআই সরেজমিন এ ঘটনার তদন্ত করেছে বলে জানান তিনি। দলিল লেখক জিএম শফিকুল ইসলাম ওরফে শফির নিকট জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তারা পারলে অভিযোগ প্রমাণ করুক। আমার যা করার তা ঠিক সময়ে করবো।
কালিগঞ্জের দলিল লেখক শফিকের বিরুদ্ধে তিন মামলা
পূর্ববর্তী পোস্ট