সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে:
আশাশুনিসহ দক্ষিণাঞ্চালের সাগর মোহনায় প্রাকৃতিক বাগদা পোনার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সাতক্ষীরা সহ অন্যান্য জেলায় চিংড়ী চাষ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাগদা পোনা আহরনের সাঙ্গে জড়িত জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়ছে। সাধারনত জো কালীন সময়ে উপকুলীয় এলাকায় বেশী পরিমান চিংড়ী পোনা পাওয়া যায়। ফলে উক্ত এলাকায় জনসাধারনের একটি বিরাট অংশ পোনা আহরন পেশার সাথে জড়িত।এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে গড়ে উঠেছে মাহাজনী ব্যবসা। সাতক্ষীরা সুন্দরবন নদী সংলগ্ন সাগরের বৃহত্তর এলাকা জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে বাগদা আহরনের বিরাট ক্ষেত্র।
এসব এলাকার জনসাধারন ৬/৭ মাস ধরে কম বেশী বাগদা পোনা আহরন করে জীবন ধারন করে।প্রতি বছর অগ্রহায়ন থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে পোনা আহরনের কাজ।এ সময় সাগর মোহনা থেকে চিংড়ীর ফুটান্ত ডিম ঢেউয়ের তোড়ে ক্রমশ মাছের আকার ধারন করে । এ ভাবে পোনার আকৃতি ধারন করে ঝাঁকে ঝাকে গভীর সমুদ্র থেকে নদী এবং খালে বিলে এসে পড়ে।তখন এসব এলাকার শিশু কিশোর থেকে আরম্ভ করে বয়স্করা পর্যন্ত ছাড়াও পোনা ধরার কাজে এ সব এলাকার অভাবী পরিবারের এবং স্বামী পরিত্যাক্ত মহিলারাও এ পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে।সাতক্ষীরা আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,ঐ সব এলাকায় বাগদা চিংড়ী পোনা আহরনের ওপর নির্ভরশীল প্রতিটি পরিবারের ৭/৮ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ধ বয়সের লোকজন পর্যন্ত এক ধরনের নিছিদ্র লাইলনের মশারি জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরছে।চলতি বছর নদীতে তেমন কোন পোনা না থাকায় এ পেশায় নির্ভরশীল এসব পরিবার গুলো চরম অভাব অনাটনের মধ্যে দিনাপাত করছে।
প্রাকৃতিক বাগদা পোনার ওপর নির্ভর করে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় শত শত চিংড়ী ঘের গড়ে উঠেছে।সাতক্ষীরা,খুলনা,বাগের হাট এলাকায় ১৯৮৫ সালের দিকে ঘের শুরু হয়।পরবত্তীতে চিংড়ী চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় ঘেরের সংখ্যা বাড়তে থাকে।ইদানিং বিদেশ থেকে ডিম এনে বাগদা উৎপাদন শুরু হলেও এখনো প্রকৃতি হতে আহরন কৃত পোনার উপর অনেকেই নির্ভরশীল্।বর্তমানে জলাবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তীব্র পোনার সংকট দেখা গেছে।যদিও সরকারি ভাবে পোনা ধরা নিষিদ্ধ।আড়তদার ও পোনা ধরার কাজে জড়িত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে পূর্বে একজন জেলে এক দিনে চারশ থেকে পাঁচশ একহাজার পর্যন্ত পোনা ধরতে পারতো।এখন তারা দৈনিক ৩০/৩৫ টির বেশী পোনা ধরতে পারছে না।কেউ কেউ সারা দিন চেষ্টা করে ও বিফল হচ্ছে।তবে এ বছর পোনার দাম চড়া দ্বিগুন।
অপরদিকে পোনাসংকটের কারনে অনেক স্থানের ঘের মালিকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।প্রাকৃতিক চিংড়ী পোনা সংকটের কারনে অনেক স্থানে এ বছর চিংড়ী চাষ বন্ধ হওয়ার আশাঙ্কা করা হচ্ছে।অবিলম্বে পরিকল্পিত উপায়ে এর কারন অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় উদ্যেগ নিতে হবে। পাশাপাশি সামুদ্রিক জলজ সম্পদ ও চিংড়ী পোনা বিচারনের ক্ষেত্র রক্ষনাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়ার একান্ত দরকার বলে মৎস্য চাষীরা জানান।