
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে:
সাংবাদিকরা যেমন সমাজের দর্পণ, তেমনি প্রেসক্লাব হচ্ছে সাংবাদিকদের একমাত্র আবাসস্থল। সেই প্রেসক্লাবে যদি প্রকৃত সাংবাদিকরা বসতে, ঢুকতে না পারে বা সদস্যপদ লাভ না করে অসংবাদিক, টাউট, বাটপার, নারী লোভী, সহিংস মামলার আসামি, রাজাকার পরিবারের সদস্যদের বিচরণ ক্ষেত্র হয় তাহলে তো বিতর্ক থেকেই যাবে।
দীর্ঘ বছর যাবত এই অবস্থায় পরিচালিত হওয়ায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ প্রেসক্লাব নিয়ে অন্ত:দ্ব›দ্ব সহ বিতর্ক আলোচনা, সমালোচনার অন্ত নাই। কালিগঞ্জ প্রেসক্লাব টি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর হতে দীর্ঘ ৩০ বছর পঞ্চপান্ডবের দখলে রয়ে গেছে। কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তমিজ উদ্দিন এর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানটি আজ অক্ষরজ্ঞানহীন, রাজাকার আল-বদর বিএনপি, জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক হত্যা সহ একাধিক সহিংস মামলার আসামি হয়েও এই সমস্ত পান্ডবের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়। প্রকৃত সাংবাদিকরা সেখানে স্থান পায় না অথচ ভাড়া মোটরসাইকেল চালক, ভ্যানচালক, ভাংরি ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী, মাদক সেবী, নারীলিপ্স, অক্ষর জ্ঞানহীন সহ নানান বিতর্কিত লোকদের নাম সর্বস্ব পত্রিকার কার্ড বানিয়ে সদস্যপদ লাভ করলেও প্রকৃত সাংবাদিকদের স্থান হয়নি।
সমিতির মতো সদস্য পদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের পথ পদবী ধরে রাখা এবং ব্যবহার করে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের নজর কাড়ার জন্য কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবটি বিতর্কিত করে আসছে। এতে করে একদিকে যেমন দেশ এবং অঞ্চলের উন্নয়ন বা প্রশাসনের সঙ্গে প্রকৃত সাংবাদিকদের যোগস‚ত্রের দ‚রত্ব বেড়েই চলেছে পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও পড়তে হচ্ছে নানান গ্যাঁড়াকলে। তাহা ছাড়াও বিভিন্ন মামলা, হামলা রাজনৈতিক ঝক্কি ঝামেলা হতে বাঁচার জন্য একমাত্র আশ্রয় দাতার ছত্রছায়ায় এসে নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে চলেছে। যার ফলে মৌলবাদী জামাত, বিএনপির মদদ পুষ্টরা সহজে সদস্য পদ নিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ানো সহজতর। এই সুবিধা নিয়ে সহজেই তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় এবং প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে চলেছে। কালিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ নিয়ে ২০০০ সাল হতে আন্দোলনের ফলস্বরপ২০০৪ সালে তৎকালীন জামাত জোটের রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক তত্ত¡াবধানে কিছু সাংবাদিক সদস্য পদ লাভ করেন। তারপর হতে সাংবাদিকরা আশা করেছিল এবারও অন্ততঃ প্রেসক্লাবের গতি কর্মকান্ড সঠিকভাবে ফিরে আসবে। কিন্তু ক্ষমতার নেশা যে মদের নেশার চেয়েও ভয়ংকর আজও অব্দি টের পাচ্ছে কালিগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ।
সমিতির মতো অসংবাদিক, গৃহপালিত পরিবার তন্ত্র সবাইকে সদস্যপদ দিয়ে নাম সর্বস্ব কথিত সাংবাদিকদের সদস্য পদ দিলেও প্রকৃত সাংবাদিকরা আজও কোনা ঠাসার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। কারণ ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কালিগঞ্জের শেখ আব্দুল বারীর দুই ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। সেই পরিবারের সদস্য ১৯৮৩ সাল হতে শেখ সাইফুল বারি সফু সভাপতি, কালিগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় পিয়ন বহুল আলোচিত সুকুমার দাশ বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক, অক্ষর জ্ঞানহীন শেখ আনোয়ার হোসেন সহ-সভাপতি এবং বিএনপি জামাতের ক্যাডার হত্যা সহ একাধিক সহিংস মামলার আসামি প্রেসক্লাবের পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন নেওয়া হাফিজুর রহমান শিমুলের নেতৃত্বে এবং ছত্রছায়ায় প্রেসক্লাবটি পরিচালিত হয়ে আসছে। যার জন্য ২০২২ সালে নতুন সদস্য পদ এবং নির্বাচন নিয়ে অন্ত:দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ বাহার সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করে যাহা বর্তমান সাতক্ষীরা জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রেসক্লাবটি গতিশীল করার জন্য প্রেসক্লাবের প্রকৃত সাংবাদিকদের নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
উক্ত আহ্বায়ক কমিটি সাধারণ সভার মাধ্যমে ক্লাবের গঠনতন্ত্র পন্থী কাজ করায় সাইফুল বারি সফু, সুকুমার দাশ বাচ্চু, হাফিজুর রহমান শিমুল, আনোয়ার হোসেন সহ ১০ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরও ওই বিতর্কিত নির্বাচন দেখিয়ে নিজেদেরকে কালিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও কমিটি দাবী করে বিভিন্ন সভা সমাবেশ, প্রশাসনের দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও নিজেদেরকে জাহির করার জন্য অভিষেক অনুষ্ঠান, কনসার্ট, বনভোজনের নামে অনুষ্ঠান আয়োজন করে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ এমপি ও বিভিন্ন রাজনীতি দলের নেতাদের দাওয়াত দিয়ে বিতর্কিত করার জন্য এবং সাংবাদিকদের রোশনালে ফেলানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের এই কর্মকান্ড নিয়ে এবং প্রতিবছর প্রেসক্লাবের উন্নয়ন এর নাম করে উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদ থেকে প্রকল্পের টাকা নিয়ে কোন কাজ না করে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিলেও ক্লাবের সাধারণ সদস্যদের কখনো অবগত করানো হয়নি যেটা নিয়ে রয়েছে নানান গুঞ্জন।