
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া বহুমূখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবৈধ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণীর তিন কর্মচারী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান নেপথ্যে থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ইতিমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে ত্রিশ লক্ষাধিক টাকা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। এদিকে কমিটির বৈধতা জানতে চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে আদালতে মামলা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য সহ স্থানীয়রা। শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোপনে তিন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ভূয়া নিবন্ধনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল হামিদ নামে দুই সহকারী শিক্ষক বছরের পর বছর চাকুরি করে আসছেন। এছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষক মাওলানা রফিকুল ইসলাম ১৫টি রাষ্ট্রবিরোধী মামলার আসামী হয়েও বেতন ভাতা তুলে আসছেন দেদারছে। কয়েকমাস আগে তাদের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত ও বেতন ফেরত চেয়ে শিক্ষা দপ্তরে থেকে একাধিক বার স্কুলে চিঠি আসলেও অদৃশ্য কারনে থেমে যায় তদন্ত কার্যক্রম। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম মিলন জানান, চলতি বছরে বিদ্যালয়ে কোন প্রকার অভিভাবক সদস্যের মতমত ছাড়াই গোপনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ঘোষনা করা হয়। এরপর অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সভাপতি ঘোষনা করলে তার বৈধতা জানতে চেয়ে সাতক্ষীরা দেওয়ানী আদালতে একটি মামলা করি। মামলা নং-৭৪/(২২)। এরপর প্রতিকারসহ সুষ্ঠ তদন্তের দাবীতে খুলনা বিভাগীয় শিক্ষাকর্মকর্তা সহ জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং যশোর মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিভাগীয় কর্মকর্তা অভিযোগের তদন্তের নির্দেশনা জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাকে দিলে অদৃশ্য কারনে তার প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর ঘটনাটি আড়াল করে চলতি বছরের ১৬ জুলাই দৈনিক পত্রদুত ও আজকের পত্রিকায় বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি গোপনে তালা উপজেলার দূর্নীতিবাজ শিক্ষাকর্মকর্তা আতিয়ার রহমানকে ম্যানেজ করে গোপন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মী পদে নাহিদ হাসান আয়া পদে শরিফা বেগম ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে আব্দুর রহিম নামে নামের ফলাফল ঘোষনা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ধানদিয়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য আবুল খায়ের জানান, বর্তমানে সভাপতি পদত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ সহ মামলা চলমান। কেনভাবেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনা। গোপনে ৩পদে ত্রিশ লক্ষাধিক টাকায় নিয়োগ বাণিজ্যের কথা শুনেছেন। এবিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। আমজেদ সরদার নামে এক স্থানীয় জনতা জানান, তার ছেলেকে চাকুরি দেওয়ার জন্য স্থানীয় ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা সলেমানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে ১২ লক্ষ টাকায় চুক্তি হয়। এরপরে দাবীমত টাকা দিতে না পারার কারনে সভাপতির কাছে পুনরায় গেলে তিনি নিয়োগ বাতিল হয়েছে বলে জানান। কয়েকদিন হল আমি জানতে পারি যে বিদ্যালয়ে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে তিনি তার ছেলে কোন প্রবেশ পত্র পাননি বলে অভিযোগ করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ধানদিয়া বহুমূখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছামাদ জানান, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির দুটি মামলা আদালতে রয়েছে বলে শুনেছেন। তার কাছে কোন প্রকার নিয়োগ বন্ধের জন্য চিঠি বা তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি। তাকে বিরক্ত না করেই বিষয়টি নিয়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান ওই প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির গাজী রহমউদ্দীন জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপস্থিতে বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে মামলা ও তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মামলার কারনে কোন নিয়োগ জটিলতা হয়নি। কোনপ্রকার অর্থ বাণিজ্য ছাড়াই সুষ্ঠভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
এবিষয়ে তালা উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, বিদ্যালয়ের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি অবগত নন। এবিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ বা বন্ধের কোন নির্দেশনা না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তা এস এম মালেকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এবিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন সেটি তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষাকর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।