শেখ ইমরান হোসেন, তালা থেকে: দীর্ঘ ৪১ বছর পরে পাকিস্থান থেকে পরিবারের কাছে ফিরলো হারিয়ে যাওয়া একলিমা বেগম। বৃহস্পতিবার(১০ নভেম্বর) বেলা ১২ টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায় তিনি। পরবর্তীতে দুপুর ৩ টায় সাতক্ষীরার তালা গঙ্গারামপুর গ্রামে পৌঁছায় একলিমা। পাকিস্থানে যাওয়ার পরে সেখানে একলিমার দ্বিতীয় বিবাহ্ হয় । পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে একলিমার সাথে তার বড় ছেলে মোঃ আশরাফ এসেছেন।
দীর্ঘ ৪১ বছর পরে একলিমা বেগমকে কাছে পেয়ে আনন্দে আতœহারা হয়ে পড়েন একলিমার স্বজনরা। একলিমা বেগমের আগমনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। তাছাড়া সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন। ফিতা কেটে গ্রামের বাড়িতে প্রবেশ করেন একলিমা বেগম ও তার ছেলে আশরাফ।
একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকারিয়া শেখ বলেন, কিছু দিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফু একলিমার খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হয়। তিনি আমাদের এখানে আসার প্রবল আগ্রহ্ প্রকাশ করেন। এজন্য তাদের কাছে ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে পাকিস্থানে থাকা তার ছেলেদের সহযোগিতায় ভিসা প্রসেসিং করে ভিসা সম্পূর্ণ করা হয়। বৃহস্পতিবার পাকিস্থান থেকে বাংলাদেশ ফ্লাইট যোগে তিনি ঢাকাতে আসেন। পরবর্তীতে এয়ারপোর্ট এর কার্যক্রম মিটিয়ে গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলাতে রওনা হয়। দুপুর তিনটার দিকে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। দীর্ঘ ৪০ বছর পরে তাকে কাছে পেয়ে পরিবার পরিজন ও এলাকাবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমরা এভাবে আকস্মিক তার সন্ধান আমাদের চমকে দিয়েছে। আগামী চার মাসে ভিসা নিয়ে ফুফু বাংলাদেশে এসেছেন কতদিন গ্রামে থাকবে সেটা সঠিক এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে কাছে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত এই আনন্দের কোন সীমারেখা নেই।
একলিমার বাংলাদেশে থাকা ছেলে হেকমত আলী জানান, দীর্ঘ ৪১ বছর মাকে পেয়ে আনন্দে আতœহারা হয়ে পড়েছি। মাকে জীবনে আর কখনো ফিরে পাবো এই আশা ছিলোনা আমাদের। আমার মা কিভাবে পাকিস্তানে গিয়েছিলো সেটার কোন সঠিক মাধ্যম আমরা জানতে পারিনা। আমার মা দীর্ঘ ৪০ বছর পরে ফিরে এসেছে এটা জানতে পেরে এলাকাবাসী ও স্বজনরা সবাই এসেছে। মা সবাইকে চিনতে পারছেনা কারন সে এখন বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেনা।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের কোনো এক দিন হারিয়ে যান একলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি তার। অবশেষে চার মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান মেলে তার। একলিমা বেগম (৬৫) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে ও তিন সন্তানের জননী। স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর পর পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে খোঁজ মিলে তার। কিভাবে তিনি সেখানে পৌঁছালেন সেটি বলতে পারছেন না তিনিসহ কেউই। একলিমা শুধু মনে করতে পারছেন, তার বাবা-মাসহ ভাই ও তালার গঙ্গারামপুর গ্রামের নামটি। এমন সুত্রপাত থেকে একলিমার সন্ধান মেলে।