
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পরিচালক ডাঃ কুদরত ই খুদাকে সরাতে পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন সহকারি পরিচালক ডাঃ অজয় কুমার সাহা। যার নেপথ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন সেক্টর থেকে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা কামাই।
শ্যামনগরে টিএচও থাকাকালীন সময়ে ডাঃ অজয় কুমার সাহার বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের খাদ্য সরবহরাকারীর কাছ থেকে প্রতিমাসে টাকা আদায় করতো শতকরা ১০%হারে। এ ছাড়াও ল্যাব সহ অন্যান্য ব্যবস্থায়ও একই নিয়ম প্রজোয্য ছিলো। তাই শ্যমনগরে তার ডাক নাম হয়ে যায় ১০%। এছাড়াও শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের অন্তত ছয়টি বিশালাকারের মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করে দেয় অজয় কুমার সাহা। চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক ভবন সংলগ্ন অংশ থেকে দীর্ঘদিনের পুরানো এসব মেহগনি গাছ কাটা হয়। সে ঘটনায় তথ্য সংগ্রহে গেলে দুই সাংবাদিককে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পরে তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। শুধু এসবই নয় যে যে জায়গায় সুযোগ পেয়েছে সেসব যায়গায় দুর্নীতি করেছে অজয় সাহা। শ্যমনগর উপজেলার পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে নিজের পকেটের মেরামত করেছে সে। তবে এত দুর্নীতি করার পরও কোনরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে যখন চিকিৎসার কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হয়েও তিনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে সহকারি পরিচালক পদে বদলি হয়ে আসেন। রোগীদের কোন উপকারতো হয়নি। উপরন্তু পুরো কর্মদিবস নিজ চেম্বারে বসে টাকা কামাইর ধান্দায় কাটায়। হাসপাতালে তদারকির চেষ্টা না করে বিভিন্ন দপ্তরে চলতে থাকে কমিশন আদায়ের চেষ্টা। অন্যদিকে হাসপাতালের সহকারি পরিচালকের অফিস চেম্বারের জন্য সংস্থাপন করা দুইটি এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে একটি খুলে নিয়ে মেডিকেল কলেজের ডরমেটরিতে তার নিজের শয়ন কক্ষে স্থাপন করেছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই ল্যাব সহকারি সুব্রত’র কাছ থেকে প্রতি মাসে ২৫হাজার টাকা আদায় করে। এক্স-রে বিভাগের হালিমের কাছ থেকে ২৫হাজার টাকা ও ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার মুরাদের কাছ থেকে ২৫হাজার টাকা করে আদায় করে। কমিশন আদায়ের চেষ্টা করে হাসপাতালের আয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগ থেকেও। তবে সেসব বিভাগ থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় ক্ষেপে যান তিনি। ঘন ঘন নথিপত্র তলব, চেকিং সহ নানা ভাবে হয়রানি করতে থাকে তাদেরও। এরকম অনেক অনিয়ম তার নিত্য নৈমেত্যিক ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এত বড় পদে থেকে এত অল্পে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তার পথে কাঁটা হয়ে দাড়ায় সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক। তাই বহুদিন ধরে সুযোগ খুঁজতে থাকেন যেভাবেই হোক হাসপাতালের পরিচালকে সরানোর জন্য। কিন্তু কোন ভাবেই তা করে উঠতে পারেনি। অবশেষে লিফটে বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা কেন্দ্র করে পরিচালককে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হওয়ার সুযোগ পায় হাতের মুঠোয়। বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে তদ্বির করে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করান। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হাসপাতালে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হওয়ায় দায় সারা গোছের তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করে সে। উদ্দেশ্য পরিচালকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব নেয়া। তাহলেই দুর্নীতির পথ সুগম হয় তার। তবে তার ষড়যন্ত্রে সফল হলে ক্ষতিগ্রহস্থ হবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ক্ষতিগ্রস্থ হবে জেলার স্বাস্থ্য সেবা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারি পরিচালক ডাঃ অজয় কুমার সাহা সাতনদীকে জানান, ‘এসবই মিথ্যা অভিযোগ। টাকা নেওয়ার কোন ঘটনা আমার জানা নাই, পরিচালক আমার বস তার বিরুদ্ধে আমার ষড়যন্ত্রের কোন প্রশ্নই আসেনা। কোন দুষ্টচক্র জল ঘোলা করার জন্য এসব তথ্য আপনাদের দিয়েছেন। ’