
তালা প্রতিবেদক: দেশে গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। তৈরিকৃত বজ্য পদার্থ মানবসহ প্রাণীকুলের উপর বিরট ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এদিকে, দেশের মোট উৎপাদিত বর্জ্যরে ৮ শতাংশই তৈরি হয় প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে। গ্রামের তুলনায় শহরে বেশির প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরী হয়। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য শেষ পর্যন্ত নদী ও সাগরে গিয়ে পড়ে, যা জলজ প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কিন্তু এই প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ বা রিসাইকেল করার কোনো উপায় না থাকায় এমনটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। তবে পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক এখন আর আবর্জনা পদার্থ নয়।
প্লাস্টিকের কোন জিনিসই মাটিতে নষ্ট হয় না যার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ হয় তেমনি মাটি হারায় উর্বরতা। তবে বর্তমানে সে চিত্র পাল্টে গেছে। প্লাস্টিকের পরিত্যাক্ত বর্জ্য পদার্থ মেশিনের মাধ্যমে রিসাইক্লিং করে তৈরী করা হচ্ছে প্লাস্টিকের কুচি বা কাচামাল। প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতলসহ অন্যান্য ভাংড়িকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার সদরের বিনেরপোতা এলাকায় গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিনিং কারখানা। ভাংড়ি মেশিনে রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে প্লাস্টিকের ছোট ছোট কুচি। সেই প্লাস্টিক কুচি দিয়ে দেশে তৈরী হচ্ছে জাহাজের রশি, ব্যবহার্য তুলাসহ নানাবিধ সরঞ্জাম। তাছাড়া এই প্লাস্টিকের কুচি প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। এছাড়াও দেশের কাচামালের চাহিদা মিটছে।
সাতক্ষীরা শহরের বিনেরপোতা এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে এমনই একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন মাফিজুর রহমান। তার সমস্ত কারখানা জুড়েই রয়েছে প্লাস্টিকের বিরাট বিরাট স্তুপ। কোন রকম কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া এখানে তৈরি হয়েছে পার্শ্ববর্তী নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান।
কারখানার কর্মচারী রোকেয়া বেগম জানান, তার অভাবের সংসার অন্যদিকে, স্বামী অসুস্থ হওয়ায় কাজ করতে পারেনা তাই বাধ্য হয়ে নোংরা কাজ করতে হয় তাকে। পরিত্যক্ত বোতল পরিষ্কার করে লেভেল তুলে দিলে কেজি প্রতি দুই টাকা দেয়। প্রতিদিন গড়ে ২০০ টাকার মত মুজুরী পায় তিনি। অন্য কোন কাজ করতে না পেরে এই পেশায় থেকে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রখর রোদ্রের মধ্যে কাজ করতে হয় তবে পারিশ্রমিক সন্তোষজনক না। তবুও এলাকায় এমন একটি কাজের সুযোগ পেয়ে খুশি তিনি।
নিপা নামের অপর একজন কর্মচারী জানান, সংসারের কাজের শেষে এখানে কাজ করেন তিনি। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলের লেভেল তোলা ও পরিষ্কার করা তার কাজ। বোতল পরিষ্কার করলে প্রতি কেজি বোতলের জন্য তিনি পারিশ্রমিক পান ২ টাকা। দিনে তার যে আয় হয় তাতে কোন রকমের সংসার চলে যায়। অন্য কাজ না জানায় বাধ্য হয়ে এই পেশাতে রয়েছেন তিনি।
এএমএন প্লাস্টিক রিসাইক্লিনিং ফ্যাক্টরির মালিক মফিজুর রহমান জানান, গত দুই বছর যাবত এই ফ্যাক্টরি তৈরী করাছেন তিনি। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে সেগুলো রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে প্লাস্টিকের কুচিতে রুপান্তর করা হয়। পরবর্তীতে প্লাস্টিকের কুচি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ঢাকাতে পাঠানো হয়। ঢাকা থেকে সেগুলো ভারত, চায়না, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানী হয়।
তিনি আরও জানান, জেলাকে প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত করতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। তাছাড়া, সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যম।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, এই বিষয়টি অবশ্যই সম্ভবনাময়। শুধু বিদেশ নয় দেশের চাহিদা এই কুচি প্লাস্টিকের প্রক্রিয়া থেকে মেটানো হচ্ছে। আগে বাইরে দেশ থেকে প্লাস্টিকের কাচামাল আসতো আর এখন সেটা মোটামুভাবে দেশ থেকে চাহিদা মিটে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিকভাবে এই খাতটি অবশ্যই অবদান রাখবে। কারন বহিঃবিশ্ব থেকে আগে কাঁচামাল আসতো আর এখন দেশের মাঝেই তৈরি কাঁচামাল দ্বারা সেই চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এতে করে বিদেশের প্রতি যে নির্ভরতা সেটা কমে যাচ্ছে। আবার দেশের পণ্য থেকেই দেশে কাঁচামাল তৈরি হচ্ছে এতে দেশের মুদ্রা কিছুটা হলেও সংরক্ষণ হবে। তাছাড়া আগে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকগুলো পরিবেশ ও মাটির মারাত্মক ক্ষতি করতো কিন্তু এই প্রক্রিয়াকরণের ফলে সেই ক্ষতি হচ্ছে না।