
রেশমীর ক্যন্সার হয়েছে বলে সুযোগ নেয় রাসেল
৩ বছর স্ত্রীর মত ব্যবহার করেছে ভারত-বাংলাদেশে
বিয়ের চাপে নিজ বাহিনী দিয়ে বর্বর নির্যাতন
সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে রেশমী
আহাদুর রহমান জনি/ আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ: মিষ্টি মিষ্টি কথা। বিপদে পড়া নারীর পাশে ভাই হয়ে নিয়ে আসে সাহায্যের হাত। তারপর চিকিৎসার নামে বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো। আস্তে আস্তে কাছে আসা। সেখান থেকে সম্পর্ক গড়ায় একসাথে থাকার। এভাবেই বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রেশমীর (ছদ্মনাম) সংসার ভেঙে দেহভোগ করেছে গোলাম রসুল ওরফে রাসেল।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দিনের পর দিন দুই সন্তানের জননী রেশমীর দেহভোগ করে রাসেল। রেশমী বিয়ের জন্য চাপ দিলেই ঘটে বিপত্তি। গত ৮ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রেশমীকে গণধর্ষনের চেষ্টা করে রাসেল ও তার সহযোগীরা। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তারা ক্রিক্রেট স্ট্যাম দিয়ে পেটাতে থাকে রেশমীকে। একপর্যায়ে রেশমীর আর্তনাদে স্থানীয় মহিলারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। গোলাম রসুল ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে হামলায় জড়িত ছিলো, মইন, রনিসহ আরও ৭ থেকে ৮ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি।

এই রুমে রেশমার উপর চলে অকথ্য নির্যাতন
যা জানালেন নির্যাতিতা:
নির্যাতিতা রেশমী জানান, আমার দুটি সন্তান আছে একজন একাদশ শ্রেণীতে অন্যজন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরে থাকাকালীন ২০১৮ সালের মার্চ মাসে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন মুনজিতপুরের হোমিও চিকিৎসক শাহ আলমের কাছে যাওয়া আসা করতাম। তিনি আমাকে বলেন নিয়মিত ওষুধ সেবন করো তাহলে ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রতিদিন যেয়ে ওষুধ খেয়ে আসতাম। ওখানে কিছু লোক ওনার বন্ধু বান্ধব হিসেবে বসে থাকতেন। একদিন গোলাম রসুল ওরফে রাসেল আমাকে জিজ্ঞাসা করে আপনি এখানে কী করতে আসেন? তখন আমি বলি আমি এখানে ট্রিটমেন্ট হতে আসি। রাসেল বলে, শাহ আলম আমার বন্ধু তার সাথে কথা হয়েছে। সে বলল আপনার এ রোগ সারবে না। আপনি আরও ভাল ডাক্তার দেখান। পরে একদিন আমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আপু আপনি ডাক্তার দেখাইছেন। আমি বললাম না। আপনি ইমিডিয়েট ডাক্তার দেখান বলে ফোন রেখে দেন। এভাবে দুই একদিন ফোন দিতে দিতে আমাকে বলে আপনার কি টাকা পয়সার সমস্যা? সমস্য হলে ভাই হিসেবে আমাকে বলতে পারেন। কোন সমস্যা নেই। তখন আমি বললাম আমার একটু ক্রাইসিস আছে। তখন সে বলল আমার পরিচিত ডাক্তার আছে, আপনি সেখানে গিয়ে দেখিয়ে আসবেন। পরেরদিন আমাকে নিয়ে রাসেল ডাক্তারের কাছে যায়। সেখানে বিভিন্ন টেস্ট করে আমাকে জানায় আরও কয়েকদিন এভাবে চললে আমি মারা যাব। রাসেল বলে, আপনার ক্যন্সারের সমস্য। আপনাকে ইন্ডিয়ায় যেতে হবে। কিন্তু রাসেল আমাকে আমার টেস্টের রিপোর্ট গুলো বা প্রেসক্রিপশন দেখায়নি। রাসেল আমার মাকেও বিষয়টি জানায় এবং ভারতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে চায়। আমার মা বলে দেখ বাবা ভাই হয়ে ঢুকছ পরে যে কোন দাবি করবা তা হবেনা। তখন রাসেল জানায় চিন্তা করেন না আমি আপনাদের পাশে গার্ডিয়ান হিসেবে দাড়াতে চাই। এখন সাময়িক অসুবিধা দেখেন পরে না হয় আমাকে শোধ দিয়ে দেবেনে। আমার মারও সেরকম আর্থিক সক্ষমতা ছিলনা যে সেটা দিয়ে আমি কভার করতে পারবো।

প্রতারক রাসেলের অফিস এই ভবনে
যে ভাবে সুযোগ নিলো রাসেল:
রেশমী সাতনদীকে জানায়, আমি ওষুধ খেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। একসময়ে সে আমাকে পাসপোর্ট ভিসা করিয়ে ইন্ডিয়া নিয়ে যায়। দফায় দফায় বেশ কয়েকবার আমাকে ভারতে নিয়ে যায় রাসেল। প্রতি ১৫দিন পর পর চিকিৎসার জন্য আমাকে ভারতে নিয়ে যেত রাসেল। আমাকে ভারতে বসিরহাটের টাউন হোটেল, আরও একটি গেস্ট হাউজ এবং কলকাতার নিউমার্কেট মোড়ে সুপার গেস্ট হাউজে নিয়ে রাখত রাসেল। তবে বেশির ভাগ সময় টাউন হোটেলে আমরা উঠতাম।
আমার স্বামী অন্য জেলায় বসবাস করে। ব্যবসায় ক্ষতির সম্মখীন হয়ে সে সাতক্ষীরায় একটু কম আসতো। এই সুযোগে রাসেল আমাকে বিয়ের কথা বলে ইমোশনালি দূর্বল করে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। যা পরে শারিরীক সম্পর্কে গড়ায়। আমার স্বামী সাতক্ষীরায় আসলে তাকে মানুষ দ্বারা মারপিট করিয়ে তাড়িয়ে দেয় রাসেল। তাকে আমাদের বাড়ির পাশে ঘেঁষতে দেয় না।
নির্যাতিতা জানান, আমার স্বামী আসলে আমাকে ফোন দিয়ে ইমোশনালি কথা বলত। রাসেল কান্নাকাটি করে বলত যেন আমি স্বামির কাছে না যাই। আমার স্বামীর সাথে যেন খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেই। এসব মন্ত্রনা রাসেল আমাকে দিত।
পরে এক সময় আমি আমার টেস্টের রিপোর্ট গুলো হাতে পাই। তখন রিপোর্টগুলো নিয়ে ডাঃ আসাদুজ্জামান স্যারকে দেখালে তিনি জানান আমার কিছু হয় নাই। তিনি জানান আমার হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এটা প্রত্যেক নারীর হয়। এটা এমন বড় কোন সমস্যা নয়। আমি তখন আরও কয়েকজন ডাক্তারকে রিপোর্ট গুলো দেখাই। তারাও একই কথা জানায়। অথচ রাসেল আমাকে বলে আমার কিডনির সমস্য, আমার ক্যন্সার হয়েছে। আসলে সে আমাকে ভোগ করার উপায় হিসেবে আমার অসুস্থতাকে বেছে নেয়।
সাতনদীকে রেশমী বলেন, এভাবে যখন আমার সংসার পুরোপুরি ভেঙে যায়, তখন আমি রাসেলকে বিয়ের কথা বলি। কিন্তু রাসেল বিয়ে করতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তখন আমি রাসেলকে বললাম আমাকে যদি বিয়ে না করবা তাহলে আমার সংসারটা ভাঙলা কেন? আমি না হয় ক্যান্সারে মারা যেতাম। কিন্তু এখন সব শেষ করে দিয়ে বিয়ে করবেনা কেন?
বিরোধের সুত্রপাত:
রেশমী আর দেরি না করে গোলাম রসুলের স্ত্রীর কাছে তাদের কিছু ভিডিও পাঠান। রাসেলের বাবা-মার কাছেও জানান তার কীর্তির কথা। এবং বলেন এসব রাসেল আমার সাথে ঘটিয়ে এখন বলছে বিয়ে করবেনা। আমি স্বামী সংসার সব হারিয়ে এখন কোথায় যাব? পরে আমি জানতে পারি গোলাম রসূল ওরফে রাসেল এভাবে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।
যা ঘটে মঙ্গলবার:
এসব ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল রেশমীকে অপহরন করে। রেশমী সাতনদীকে জানায়, গত মঙ্গলবার (৮মার্চ) আসমানী শিশু নিকেতনের ওই রাস্তা দিয়ে আমি আমার মামার বাসায় যাচ্ছিলাম। রাসেলের অফিসে সামনে দিয়েই যেতে হয়। রাসেলের অফিসের কাজ করা ছোট একটি ছেলেকে দিয়ে আমাকে দাড় করায় রাসেল। তৎক্ষনাত কয়েকজন ছুটে এসে আমাকে টেনে হিচড়ে রাসেলের মাছের ওষুধের গোডাউনের মধ্যে নিয়ে যায় সেখানে আমার হাতপা বেঁধে ফেলা হয়। তার বন্ধু ৭ থেকে ৮ জনের মধ্যে মইন, রনি উপস্থিত ছিলো তাদের আমি চিনতাম। তারা সাত থেকে আটজন মিলে আমাকে গনধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার বাধার মুখে ধর্ষণ করতে না পেরে তারা আমাকে উকেট (ক্রিকেট স্টাম) দিয়ে আমাকে পেটাতে থাকে। এমন ভাবে মারতে থাকে যেন আমি মরে যাই। ওখানে কিছু মহিলা আমার চিৎকার শুনতে পেয়ে আমাকে উদ্ধার করে। নির্যতন সহ্য করতে না পেরে আমি জ্ঞান হারাই।
গোলাম রসুল ওরফে রাসেলের অপকীর্তি:
রেশমা সাতনদীকে জানান, রাসেলের সাথে সম্পর্কের সময় তার বিভিন্ন বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি সে প্রতিদিন তার অফিসে মদের আসর বসায়। আরাধনা একাডেমী নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান আছে তার। সেখানের শিক্ষক মইন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ওখানকার মেয়েদের নিয়ে তার ওই অফিসে বসে ফ‚র্তি করে।
এসব বিষয় নিয়ে মোবাইলে গোলাম রসুল ওরফে রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা বা অসত্যতা নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
গোলাম রসূল রাসেলের বিচার চেয়ে রেশমী সাতনদীকে জানান, আমার সাথে প্রতারণা করে আমার সংসার ভেঙেছে। আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তার বিচার চাই, যেন এভাবে আর কোন নারীর সাথে প্রতারণা করতে না পারে।