
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি থেকে: আশাশুনিতে জলবায়ুর পরিবর্তন, অবাধে পুকুর বা জলাশয় ভরাট, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং নকশা বা অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। ফলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এর কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, যানবাহনের কালো ধোয়া নির্গমন, যত্রতত্র ওয়েলডিং কারখানা, অবাধে বৃক্ষনিধন, আবাদি জমিতে অত্যাধিক সারের ব্যবহার এবং আবাসিক এলাকায় পরিকল্পনাবিহীন ক্ষুদ্রশিল্প ও বহুতল ভবন গড়ে উঠার কারনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আশাশুনির বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ওয়েলডিং কারখান ও অনুমোদন বিহিন বহুতল ভবন । এসব কারখানা ও নকশাবর্হিভুত বিল্ডিং অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে। ফলে পরিবেশের উপর দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। রস্তার ধারে সরকারি খাস সম্পত্তি দখল করে অনেকে গড়ে তুলেছেন ৪/৫ তলা বিল্ডিং আর এসব বিল্ডিং এর কোন বৈধ অনুমোদন নেই। পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন,পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা না করে বিল্ডিং তৈরি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন পানি নিষ্কাশন না হলে চর্ম রোগ সহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ হতে পারে। অপর দিকে ওয়েলডিং কারখানার বিচ্ছুরিত হলুদ আলোকরশ্মি মানবদেহের ক্ষতি সাধন করে। বিশেষ করে চোখের ক্ষতি করে বেশী। এ ব্যাপারে আরো গুরতর অভিযোগ, সিঙ্গেল পয়েন্টের বিদ্যুৎ লাইন দিয়েই অনেক কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। যদিও ডবল বিদুৎ লাইন দরকার। এর সঙ্গে জড়িত বিদুৎ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারি। আইন বহির্ভূত হলেও বেশ কিছু কারখানা এভাবে চলছে বলে জানা গেছে। আশাশুনিতে যানবাহনের মাত্রা বেড়ে গেছে। এগুলো মেনে চলছে না কোন নিয়ম। বিশেষ করে ট্রাক, পাওয়ার ট্রাক, ইঞ্জিন ভ্যান, এর বিকট শব্ধ কানে এসে বাজে। গাড়িগুলো চলার সময় ব্যাপক ভাবে কালো ধোয়া নির্গমন করে। এছাড়া সোনার দোকান থেকেও নাইট্রিক এসিডের ধোঁয়া পরিবেশ দূষন করছে। কোন কোন দোকানে চিমনি দেখা গেলেও অধিকাংশ দোকানে কালো চিমনি নেই। ডাক্তারি মতে এ ধোয়া জটিল রোগের সৃষ্টি করে। বাতাসে সালফেট জাতীয় পদার্থ প্রতি ঘনমিটারে ২৪ মাইক্রোগ্রাম বিদ্যমান থাকলেও এর প্রভাবে চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের জ্বালা যন্ত্রনা বাড়ে এবং ঝাপসা দেখায় ।
অন্যদিকে আশাশুনিতে আবাসিক এলাকায় বড় বড় পুকুর অবৈধ ভাবে বালি তুলে ভরাট, গাছপালা কেটে উজার করা হচ্ছে বন। আশাশুনিতে তেমন কোন বন নেই। জনগনের নিজস্ব গাছ কেটে নতুন নতুন বসতবাড়ি নির্মান করছে। নতুন করে গাছ না লাগানোর কারনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এলাকায় গোবর সার নেই বল্লেও চলে। ফলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। মাটির ১৬ টি উপাদানের মধ্যে গন্ধক ও দস্তার বিশেষ প্রয়োজন। এর ফলে মাটির গঠন প্রক্রিয়াসহ পানির ধারন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
এছাড়াও পরিবেশ দুষন হচ্ছে যত্রতত্র ময়লা আবজনা ফেলা এবং বাজার এলাকায় পানি নিষ্কাসনের সঠিক রাস্তা না থাকায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আর একারনে পরিবেশের উপর বিরুপ পভাব পড়ছে। ফলে এলাকার জনসাধারন আস্তে আস্তে বিভিন্ন রোগের দিকে ঝুকে পড়ছে সেই সাথে বিপর্যয় ঘটছে প্রাকৃতিক পরিবেশের।