
সাতনদী ডেস্ক রিপোর্ট:
বেশ ভূষা দেখে চেনার উপায় নেই তিনি একজন বড় মাপের প্রতারক। ইসলামী কায়দায় বাহারি পোশাক দেখে মনে হবে তিনি একজন বড় মানের আলেম। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন ৩০ পারা কোরআনের হাফেজ আবার কখনো পরিচয় দেন মাওলানা। অথচ তিনি হাফেজও নন আবার মাওলানাও নন। দিব্যি সবাইকে বোকা বানিয়ে হাফেজ ও মাওলানা সেজে ওয়াজ মাহফিলে বক্তার পরিচয়ে ওয়াজ করে বেড়াচ্ছেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
এই প্রতারকের নাম শামসুর রহমান। বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের বড়খামার গ্রামে। পেশায় ছিলেন ভাড়াটিয়া মোটর সাইকেল চালক।
আরবী পড়তে জানলেও বাংলায় তার কোন শিক্ষা নেই।
মোবাইলের মেমোরী কার্ডে দেশের প্রখ্যাত আলেম ওলামাদের ওয়াজের অলোচনা নিয়ে বাড়িতে বসে রপ্ত করতেন। রেকর্ড শুনে শুনে কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন পয়েন্ট মুখস্থসহ আলোচনার প্রাকটিস করতেন। এটা নিয়ে প্রথম দিকে গ্রামের বিভিন্ন জনের বাড়ীতে মিলাদের অনুষ্ঠানে হুজুর সেজে আলোচনা করতেন। এক সময় এলাকার মানুষের মন জয় করে সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বক্তা সেজে ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিতে থাকে। শুধু দেশে নয় ভারতেও গিয়েছেন ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিতে কয়েকবার। এসব করে কামিয়েছেন অঢেল টাকা। কিনেছেন মূল্যবান কয়েক বিঘা জমি ও মোটর সাইকেল। আয়ের উৎস বলতে শুধু ওয়াজ মাহফিল। অল্প দিনে বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক।
সব মাহফিলের আয়োজক কমিটির কাছে তিনি নিজেকে পরিচয় দেন হাফেজ ও মাওলানা। নামের আগে-পরে কিছু আছাড়ও লাগিয়েছেন। মাহফিলের প্রচারে এই প্রতারকের নাম বলা হচ্ছে আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা শামসুর রহমান আজাদী, আবার কোথাও বলা হচ্ছে আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা শামসুর রহমান জিহাদী। এসব পদবী লাগিয়ে জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
শামসুর রহমানের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলে সরকার বিরোধী বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্যের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ইউটিউব চ্যানেলেও রয়েছে তার মাহফিলের আলোচনার অংশ বিশেষ। সেটা থেকে বুঝতে পারবেন তার প্রতারণা ও ব্যবসার আসল রহস্য। বিষয় ভিত্তিক আলোচনার কোন বালাই নেই। জোড়াতালি ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কিছু নিয়ম-কানুন ও পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ৩০ পারা কুরআন যাদের মুখস্থ থাকে তাদেরকে পাগড়ী ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে হাফেজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
অপরদিকে কওমী ও মাদ্রাসা দু’টি শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দাওরা বা কামিল পাশ করলেই তাকে মাওলানা স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
শামসুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, আমি কিছুদিন হেফজখানায় পড়েছিলাম। তবে পূর্নাঙ্গ হাফেজ হতে পারিনি। লোক আমাকে ভালবেসে হাফেজ ডাকে। তিনি মাওলানাও নন বলে স্বীকার করেন। এর বাইরে তিনি কথা বলতে রাজী হননি।
শামসুর রহমানের প্রতারণার ফলে সাতক্ষীরার আলেম সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। নানাবিধ প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়িত তাদেরকে। তার প্রতারণায় বে-কায়দায় পড়ছে প্রকৃত আলেম।
শামসুর রহমানের প্রতারণা বন্ধ করতে সাতক্ষীরার প্রশাসনের প্রতি সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন আলেম সমাজ।