
হাফিজুর রহমান/হাবিবুল্লাহ বাহার: উপরি দোষ ভালো চিকিৎসা করার নাম করে সিরিয়াল রাপিস্ট কথিত কবিরাজ গুনিন বাবু মোড়ল (৩৮) ওরফে বাবু গুনিন মোটরসাইকেলে নিজ বাড়ীতে নিয়ে ২য় শ্রেণির এক শিশু কন্যাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে উপুর্যপরি ধর্ষন করার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অর্ধ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বানিজ্য করতে চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক তরুণকে ভুল তথ্য দিয়ে দফাদার তপন এবং ইউ.পি সদস্য আবু বক্কার এর নেতৃত্বে একটি প্রতারক চক্র থানার মামলার ভয় দেখিয়ে ধর্ষক কবিরাজ গুনিন বাবুর নিকট হতে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে হাতিয়ে নিয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ধর্ষিতার পিতা মাতাকে ভয় দেখিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ১২টার সময় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের ঘুষুড়ি গ্রামের ১০ শয্যা হাসপাতাল সংলগ্ন ঋষি পাড়া গ্রামে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৫শত গজ এমন ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানা পুলিশ কিছুই জানেন না বলে জানান। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে ঘুষুড়ি গ্রামের ঋষিপাড়ার ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর পিতা বীরেন্দ্র দাস, তার স্ত্রী ঝর্ণা দাস ও তার শাশুড়ি মালতি দাস সহ এলাকার একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, বরেয়া গ্রামের জমাত আলী মোড়ল ওরফে বয়ে গাজীর পুত্র সিরিয়াল রেপিস্ট কথিত কবিরাজ গুনিন বাবু মোড়ল ওরঠে বাবু এর সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে বাবু কবিরাজ তাদের বাড়িতে আসে। এসে বলে তোমাদের মেয়ের উপরি দোষ আছে, এক্ষুনি ভালো চিকিৎসা ঝাড়ফুঁক না করালে মেয়ে বাঁচবে না বলে ভয় দেখায়। তখন আমরা বলি গরিব মানুষ এত টাকা কোথা থেকে পাব তখন বাবু কবিরাজ আমাদের মন গলাতে বাজার হতে কিছু মাছ তরকারি কিনে আমাদের বাড়িতে দেয়। এরপর মেয়েকে চিকিৎসার নাম করে তার মোটরসাইকেল যোগে আমার এবং আমার ভাইয়ের কন্যাকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে যায়। তার বাড়িতে নিয়ে ভালো-মন্দ খাবারের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ ও চেতনা নাশক ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে বাবু কবিরাজ তার যৌন ক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য আমার কন্যাকে উলঙ্গ করে সমস্ত শরীরে তৈল লাগিয়ে এবং গোপন জায়গায় জেলি লাগিয়ে প্রথমে ধর্ষণ প্রচেষ্টায় রক্তাক্ত হলে পরে পায়ুুপথ দিয়ে বলৎকার করে রক্তাক্ত জখম করে। বিকাল ৪টায় আমার কন্যার ঘুম থেকে উঠে যন্ত্রনায় কান্নাকাটি শুরু করলে তার মোটরসাইকেলযোগে আমার বাড়িতে পৌছে দিয়ে দ্রæত চম্পট দেয়। ওই সময় বাড়িতে এসে আমার কন্যা অসুস্থ হয়ে পড়ে তার মাকে জানালে আমি সহ তার মা তাৎক্ষণিকভাবে তারালী বাজার গ্রাম্য ডাক্তার নাজমুছ শাহাদাৎ রাহান এর নিকটে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ঔষধ কিনে নিয়ে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসি। বাড়িতে এনে চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আবু বক্কর এর নিকট আমি সবকিছু খুলে বলি। তখন তিনি চেয়ারম্যান সাহেব কে না জানিয়ে দফাদার তপনকে সংবাদ দিয়ে তার পরদিন বাবুকে খবর দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে এনে মেম্বর, চৌকিদার সহ স্থানীয় একটি গ্রæপ কবিরাজ বাবুকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে ৫০ হাজার টাকা না দিলে তাকে থানায় দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে কবিরাজ বাবু তারপরের দিন ৫০ হাজার টাকা মেম্বর আবু বক্কার এবং দফাদার তপনের হাতে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ছাড়া পায়। এরপর মেম্বর এবং তপন দফাদার এসে আমাদের হাতে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে এবং কাউকে কিছু না জানাতে বলে। আমরা সেই ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অসুস্থ মেয়েকে বাড়িতে রেখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আমরা থানায় যেতে চাইলে দফাদার তপন এবং মেম্বর আবু বক্কার এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলে থানায় মামলা করতে গেলে তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না এবং তোমার মেয়েকে কাটা ছেড়া করবে। কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে চুপচাপ থাকো। কেউ আসলে কারো সাথে কথা বলবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে সে সরল মনে সমস্ত ঘটনা অকপটে বলে। একই বক্তব্য তার মা-বাবা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানায়। বর্তমান ওই স্কুলছাত্রী ভয়ে আতঙ্কে উন্নত চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতে আশাঙ্কাজনক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বাবু কবিরাজ দীর্ঘদিন যাবৎ অসহায়, নিন্ম শ্রেণির মেয়েদের টার্গেট করে তাদেরকে প্রলোভন এবং চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে রেপ করে আসায় সে এলাকায় সিরিয়াল রেপিস্ট হিসাবে পরিচিত।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য শুক্রবার রাত ৮টার সময় চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দফাদার তপনকে জিজ্ঞাসা করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলে, ছাত্রীর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল। পরে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক তরুণ বাবুকে জানিয়েছিলাম। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে আমি মেম্বরকে জানালে মেম্বর এসে মীমাংসা করে দেন। সে একজন দফাদার হয়ে থানায় না জানিয়ে মীমাংসা করতে পারেন কিনা এ প্রশ্নে সে কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি খবরের কাগজে না লেখার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে থাকেন।
ইউ.পি সদস্য আবু বক্কারে নিকট নিকট রাত আনুমানিক ৯ টার সময় ঘুষুড়ি বাজারে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দফাদার তপন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমার মাধ্যমে রবীন্দ্র এবং তার স্ত্রীর হাতে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা হয়ে গেছে বলে আমাকে জানান। বাকি থানা পুলিশ তপন দফাদার দেখবেন বলে কবিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি ধর্ষণের ঘটনা ইউ.পি সদস্য হয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে জরিমানা দিয়ে মিমাংসা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ইউপি সদস্য আবু বক্কার।
এ ব্যাপারে রাত ৮টার সময় চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন এর নিকট ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি প্রথম আপনাদের মুখ দিয়ে এই বিষয়টি জানলাম। তখন পাশে দাঁডানো তপনকে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এতবড় একটা ঘটনা আমাকে জানালে না কেন? এ বিষয়ে কোন জবাব না দিয়ে ভুল স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে থানার উপ-পরিদর্শক তরুণের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন একদিন তপন দফাদার ফোন করে বলে ছোট একটি নারী ঘটিত ব্যাপারে মিমাংশা করেছে বলে জানিয়েছিলো। এতবড় ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নাই।
কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের নিকট জিজ্ঞাসা করলে বিষটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। এব্যাপারে কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর গতকাল রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় হতে কথিত কবিরাজ বাবুর বাড়ীতে গেলে তার বাড়ী তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। তবে বাড়ীতে বাবু সহ তার পরিবারের কোনো সদস্য কে পাওয়া যাই নি।
বরেয়া গ্রামের ই¯্রাফিল, হানিফ, মুনছুর, মর্জিনা বেগম সহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, বাবু কবিরাজী ও গুনিনের কাজ করে। তার বাড়ীতে বিভিন্ন লোক ঝাড় ফুক নিতে আসে। মাঝে মধ্যে সে মটরসাইকেলে বিভিন্ন মেয়েদের রুগী বলে নিয়ে এসে রাত্রিযাপন করে। আমরা চিকিৎসার কথা ভেবে তেমন কিছু বলিনা। তার বিরুদ্ধে এই ধরনের আরো অনেক ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে।