
ওমর ফারুক মুকুল: দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ভোটের প্রচার। মাঠে-ঘাটে, চায়ের দোকানে, বাজারে, দোকানে বইছে সম্ভাব্য প্রাথীদের নিয়ে আলোচনা। তবে বিএনপি প্রাথীদের কোন নড়াচড়া নেই। প্রচার-প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমান তালে চলছে। এখনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও ইতোমধ্যে নির্বাচন ঘিরে কুলিয়া ইউনিয়নে প্রাথীদের ব্যাপক দৌড় ঝাঁপ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রাথীদের কেউ কেউ এলাকার ভোটারদের মাঝে গিয়ে দিচ্ছেন আগাম প্রতিশ্রুতি। নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে কুলিয়া ইউনিয়নের বর্তমানে ২৫হাজার ৬শত ৮৬ ভোটার। এদিকে সম্ভাব্য ৩ প্রাথী শুরু করেছেন গনসংযোগ। ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন প্রাথীরা। নৌকার মাঝি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে গনসংযোগ করছেন কুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো: আছাদুল হক, সাতক্ষীরা জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বাবু প্রাণনাথ দাশ, কুলিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল ইসলাম। নির্বাচনের মাঠে দেখা যাচ্ছে না কুলিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইমাদুল ইসলামের। এছাড়াও নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে ভোটের মাঠে নিজেদের অনুকূলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রাথীরা। দলীয় সমর্থন পেতে অনেকের পক্ষ থেকে চলছে নানারকম তদবির, রাজনৈতিক কার্যালয়গুলোও সরগরম হয়েছে উঠেছে। দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রাথীরা। জানা গেছে, আগামী মার্চে দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগ অধীন ইউনিয়ন পরিষদগুলোর তথ্য জানতে চেয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ২৯ (৩) ধারা অনুযায়ী, পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ইউনিয়ন পরিষদসমূহের পর্যায়ক্রমে মেয়াদ পূর্তি হবে। নির্বাচন উপযোগী ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নামের তালিকা ১০ কার্য দিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে কুলিয়া ইউনিয়নের ২৮বছর দায়িত্ব পালন করা সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো: আছাদুল হক। তিনি বর্তমানে মাঠে নেমে জনসংযোগ ও কর্মী সমাবেশও শুরু করে দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে, হাট- বাজার সহ বিভিন্ন জনঘনত্বপূর্ণ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের শুভেচ্ছা বার্তা দিচ্ছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার নেতা কর্মীরা ছুটে আসছেন। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে শত ভাগ নিশ্চিত যে, আমি নৌকার টিকিট পাব। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করে আসছি তাছাড়া আমি নেতাকর্মীদের মনে আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। জনগন আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেই এবং আমি আশাবাদী নৌকা প্রতীক পাব। পাশাপাশি কুলিয়ার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রাথী বাবু প্রাণনাথ দাশ প্রচারনায় পিছিয়ে নেই। তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক। ২বছর আগে থেকেই তিনি মাঠে নেমে গেছেন। ইতোমধ্যে তিনি জনসংযোগ শুরু করেছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে, হাটে-ঘাটে হাজির হয়ে চা-পান, বিড়ি খাওয়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জনঘনত্বপূর্ণ স্থানে বা বাজার-হাটে তার শুভেচ্ছা বার্তাসহ আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার আবেদন জানিয়ে ব্যানার ফেস্টুনও টাঙিয়েছেন। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে উঠান বৈঠকও করছেন তিনি। তেমনি খেলাধুলা, স্কুল, কলেজ-মাদ্রাসার কোনো অনুষ্ঠানেও এসব সম্ভাব্য প্রাথী পুরস্কার বিতরন করছেন প্রধান বা বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন এমন চিত্র এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। এবিষয়ে তার সাথে কথা বললে তিনি আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রাথী হিসাবে নির্বাচন করবেন। তাছাড়া তিনি সকলের দোয়া আর্শিবাদ ও সমর্থন কামনা করছেন। অন্যদিকে বসে নেই কুলিয়া ইউনিয়নের আর এক প্রাথী আসাদুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে কুলিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ভাই আলহাজ্ব ইমাদুল ইসলাম কুলিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আগামী নির্বাচনে তার না দাড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। তার ছোট ভাই আসাদুল ইসলাম আগামী ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, জনগণের ভালোবাসার কারণেই আজ আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর সেই দায়িত্ব পেয়ে আমি কুলিয়া ইউনিয়নকে আধুনিকায়নের চেষ্টা করেছি। ইউনিয়নের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, রাস্তা-ঘাট, স্কুল সহ বিভিন্ন স্তরে আমার ও আমার ভাইয়ের অবদান আছে। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ নিয়ে একটি ইউনিয়ন গড়ে তুলতে চাই। জনগনের সেবা করা আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমি নিজেকে কুলিয়াবাসীর জন্য বিলিয়ে দিতে চাই। যদি নৌকা প্রতীক পায় তবে বিপুল ভোটে জয়ী হব এবং কুলিয়া ইউনিয়নকে সন্ত্রাস দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত ইউনিয়ন গড়ে তুলবো। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ ভোটযুদ্ধে বিএনপি অংশগ্রহন করতে চায় কিনা বিষয়টি জানা যায়নি। হইতো মামলা জট বা পলাতক থাকায় কারো কোন নড়াচড়া নেই। ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যাচ্ছে প্রাথীরা যেখানে, সেখানে জনগণের ঢল। তবে জনগন চাই একটি সুস্থ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।