
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ভিজিএফ কার্ডের চাউল বিতরণকালে মাপে কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যানের নিকট থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে গনপিটুনি দিয়ে কথিত সাংবাদিক মামুনকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট হস্তান্তর। মঙ্গলবার বেলা ১২টার সময় কালিগঞ্জ উপজেলা ভাড়াশিমলা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। গণ টিভির কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী চাঁদাবাজ এবং আওয়ামী বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয় দিয়ে উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন ইটপাজা, ইটভাটা, চিংড়ীতে পুশ, আমের মৌসুমে রাসায়নিক মিশ্রন সহ উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অনিয়মের ধুয়া তুলে বছরের পর বছর চাঁদাবাজী করে আসছে বলে স্থানীয়রা জানান।
ভিজিএফ কার্ড বিতরণের সময় ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত মোহাম্মাদ আলী সাহাজির পুত্র যুবলীগ নেতা আব্দুল আলিম, ভগিরত বিশ্বাসের ছেলে সুশান্ত বিশ্বাস, আব্দুর রশিদের ছেলে জাহাঙ্গীর সহ একাধিক ব্যক্তি জানান পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া অসহায় মানুষের ১০ কেজি করে ভিজিএফএর চাউল বিতরণ করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে কথিত সাংবাদিক দুদলী গ্রামের মামুন সেখানে হাজির হয়ে চাউল কম দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় মেম্বরদের নিকট ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। ঐ সময় চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মাদ বিশ্বাসের নিকট চাউল কম দেওয়ার অজুহাতে চাঁদা দাবী করায় স্থানীয়রা চাউল বিতরণ বন্ধ করে তাকে আটকে রেখে গণধোলাই দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খবর দেয়। ঐ সময় বেলা ২টার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতার নিকট থেকে উদ্ধার করে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে আটকে রাখে। আটকে রাখার আগে চাঁদাবাজ মামুন চেয়ারম্যানের নিকট থেকে আগেই ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে স্থানীয়রা জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কথিত চাঁদাবাজ নামধারী সাংবাদিক মামুনকে সতর্ক করে এ যাত্রায় রেহাই দেয়।
ভাড়াশিমলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এবং ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মাদ বিশ্বাস জানান ১০ কেজি চাউল বিতরণের কথা থাকলেও অনেক অসহায় মানুষের চাহিদার কারণে জনপ্রতি ৮ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হচ্ছিল। এমন খবর পেয়ে আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্মলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও অনলাইন গণটিভির সাংবাদিক জিএম মামুন হোসেন উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ছবি উঠাতে থাকে। একপর্যায়ে কথিত সাংবাদিক জিএম মামুন চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ বিশ্বাসের কাছ থেকে ১ হাজর টাকা চাঁদা দাবী করে তা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি স্থানীয় জনতা দেখতে পেয়ে কতিথ সাংবাদিক মামুনকে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে আটকিয়ে রাখে।
এসব ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক রাসেল জানান, অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে সতর্ক করি যাতে এই ধরণের ভুল না করে। এছাড়াও ট্যাগ অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি আরও বিস্তার তদন্ত করার জন্য। এরপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মামুন রতনপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহসিলদার আশারাফ হোসেনের নিকট চাঁদাবাজী করতে গেলে তাকে ধরে তৎকালীন সহকারী কমিশনার ভুমি বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহার নিকট সোপর্দ করে। ঐ সময় স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের সুপারিশে সে যাত্রায় চাঁদাবাজীর মামলা থেকে রেহাই পায়। তারপরেও তার দৌরত্ব থামেনি। সকাল থেকে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে মটরসাইকেলে স্টিকার লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা, ইটপাজা, আমের মৌসুমে আমের আড়তে, মাছের সেটে পুশের অজুহাতে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ধরিয়ে দেওয়ার নাম করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন তার এ অপকর্ম চাঁদাবাজী চালিয়ে আসছিল। সে শুধু কালিগঞ্জ উপজেলা নয় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামীলীগ নেতা এবং সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজী করে আসলেও কথিত এই সাংবাদিক মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়াও বছরের অধিকাংশ সময় মোংলা বন্দরের জাহাজের শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। জাহারে মালামাল আনলোডের কাজ বন্ধ থাকায় সে বাড়িতে এসে নিজেকে বড় মাপের কথিত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উপজেলা জুড়ে গণটিভির স্টিকার লাগিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে সাংবাদিক সমাজকে বিষাদগার করে তুলেছে।