
নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে ১২ বছরের সংসার ভাঙল ফারুকের। বার বার সালিশে ক্ষমা করার পরও পরকীয়া থেকে স্ত্রীকে ফেরাতে না পেরে অবশেষে তালাক দেন ফারুক। বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোনে মামলা ও অপহণের হুমকি ধামকি সহ হয়রানি করার অভিযোগও করছেন ফারুক।
১মে ২০০৮ তারিখে শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকির সাপেরদুনে গ্রামের আব্দুর রশিদ সরদারের মেয়ে লিলি আক্তারের(৩১) সাথে একই উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের ইসলাম সানার ছেলে ফারুকে হোসেনের(৩৩) বিবাহ সম্পন্ন হয়। তাদের ছেলে-মেয়েসহ দুই সন্তান আছে। বিয়ের পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে ফারুক হোসেন জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকাকালীন তার স্ত্রী লিলি খাতুন পার্শ্ববর্তী গ্রামের মহাসিন গাজীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকীয়া থেকে বার বার ফেরাতে ব্যার্থ হয়ে অবশেষে চলতি মাসের ২রা জুলাই তালাক প্রদান করেন।
ঘটনা ১: সাত বছর পূর্বে একই এলাকার আব্দুল মাজেদ গাজীর বড় ছেলে মহাসিন গাজীর(৩৭) সাথে পূর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরে লিলি আক্তারের সাথে অনৈতি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফারুকের বড় বোন বাকপ্রতিবন্ধি শাহানারা খাতুন তাদের অসামাজিক কর্মে ধরে ফেললে মহাসিন পালিয়ে যায়। ঘটনার বিষয়ে কাউকে জানালে লিলি আক্তার শাহানারাকে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেয়। পরে ঘটনা জানাজানি হলে পদ্মপুকুরের মেম্বার আব্দুর গফুর ঢালী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ হয়। ওই সালিশে মেয়ের বাবার বাড়ির লোকজনও উপস্থিত ছিল। সালিশে মহাসিন ও লিলির অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহাসিন ও লিলি এহেন দুঃষ্কর্ম আর কোন দিন করবেনা মর্মে অঙ্গীকার করে।
ঘটনা ২: আনুমানিক তিন বছর আগে মহাসিন ও লিলি আবারও অনৈতিক কাজ করার সময় লিলির শ্বাশুড়ীর হাতে ধরা পরে। লিলির শ্বাশুড়ী লিলিকে এ পথ থেকে ফিরে আসার জন্য বারবার অনুরোধ করে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু লিলি তার কথায় কর্ণপাত না করায় আবার সালিশি বৈঠক হয়। এবার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহাসিনের এলাকা পাখিমারার মেম্বার আজিজুল ইসলাম সহ স্থানীয়রা। আবারও লিলি ও মহাসিন এরকম অপকর্ম করবেনা মর্মে অঙ্গীকার করে।
ঘটনা ৩: গত ১৭ই রমজান ফারুক কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ফিরে আসে। তিনি বাড়িতে থাকা কালীন সময়ে স্ত্রী লিলির কাজকর্মে সন্দেহ হয়। লিলির ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দেখে ফারুক লিলিকে না জানিয়ে লিলির ফোনে অটোকল রেকর্ড চালু করে রাখে। পরে অটোকল রেকর্ডের সুত্র ধরে ফারুক লিলি ও মহাসিনের ফোনালাপ (ভয়েস রেকর্ড সংরক্ষিত) সম্পর্কে জানতে পারে। সে সতর্ক থাকে। একদিন রাতে মহাসিন লিলিকে ডাকতে যেয়ে ভুলে ফারুককে ডেকে বসে। ফারুক ঘুম থেকে জেগে উঠলে মহসিন পালিয়ে যায়।
কি ছিল ভয়েস রেকর্ডে?
মহাসিন ও লিলির ভয়েস রেকর্ডে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। যার মধ্যে আছে কিভাবে ফারুকের মা-বাবা ও প্রতিবন্ধি বোনকে দিনের পর দিন ঘুমের ঔষুধ খাওয়ানো। যার জন্য ফারুকের বাবা ও মা একাধিকবার সাতক্ষীরা সদর ও ইসলামি হাসপাতালে শারিরিক দূর্বলতা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু কোন রোগের উপসর্গ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও আছে ফারুককেও ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে মেরে ফেলার মত চক্রান্তও। আর ছিল তাদের দু’জনের অশ্লীল কথা-বার্তা যা রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা সম্ভব নয়।
ঘটনা ৪: ফরুক হোসেন স্ত্রীর পরকীয়ার ব্যাপারে সমাধান চেয়ে গত জুন মাসের ৬ তারিখ শ্বশুর রশিদ সরদারকে তার বাড়ি আসতে বলেন। একই মাসের ৮ তারিখ বিকালে শ্বশুর রশিদ সরদার ফারুকের বাড়িতে যান। ফারুক হোসেন সবিস্তারে রশিদ সরদারকে জানান। রশিদ সরদার লিলি ও তার দুই সন্তানকে নিজের বাড়ি নিয়ে যান।
ঘটনা ৫: চলতি মাসের ১ তারিখে শ্বশুর আব্দুর রশিদ সরদার, শ্যালক ফারুক, আলমগীর, রুবেল, ও ভায়রা ভাই জালাল গাজী সহ পাখি মারা গ্রামের সাইফুল ও শফিকুল ইসলাম শফিসহ কয়েকজন ফারুকের বাড়িতে তার দুই সন্তানকে নিয়ে যায়। এ সময় ফারুক বাড়ি ছিলনা। তারা ফারুকের পিতাকে লিলিকে ফেরৎ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। ফারুকের পিতা রশিদকে জানান, আপনার মেয়ে বহুবার এমন অপকর্ম করেছে। যাতে আমাদের পারিবারিক সম্মান নষ্ট হয়েছে। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে আমাদের নিয়মিত ঘুমের ঔষুধ খাইয়েছে। আমার বড় ছেলে আপনাদের যেদিন আসতে বলেছে সেদিন না এসে এখন কাউকে না জানিয়ে এসেছেন। আমি কি করব। তাদের সাথে কথা বলেন। তারা বাড়ি না আসলে কোন সিদ্ধান্ত আমি দিতে পারবনা। এ কথা শোনার পর রশিদ সরদার ফারুকের দু’সন্তানকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। এসময় লিলির দুলাভাই জালাল গাজী ফারুক ও ফারুকের পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
বারবার স্ত্রীর পরকিয়া নিয়ে পরিবারের সম্মান নষ্ট ও পরিবারের সদস্যদের ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে অচেতন করার কারণে ফারুক ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। এরকম মানসিক চাপ সইতে না পেরে ফারুক আত্মহত্যা করতে চায়। কিন্তু সন্তানদের কথা ভেবে এরকম কাজ থেকে বিরত থাকে। নিজের, সন্তানের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে গত ২জুলাই ২০২০ ইং তারিখে লিলি আক্তারকে মোহরানার টাকা ও খোরপোষের টাকা পরিশোধ করে তালাক দেয়।
এখন ফারুককে বিভিন্ন নাম্বার থেকে সাংবাদিকসহ প্রভাবশালী পরিচয়ে ফোন দিয়ে জেল খাটানো, অপহরণ সহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিচ্ছে। গত ২১শে জুলাই বিকাল ৫টা ৫মিনিটে ০১৭২১ ০৪৬৪৭৩ নাম্বার থেকে সাইফুল ইসলাম ফারুক হোসেনকে ফোন দেয়। এসময় সাইফুল বলে, কোর্ট তোমাকে অর্ডার দিয়েছে লিলিকে প্রতিমাসে ১৮হজার মানে ৮ হাজার আর ১০ হাজার টাকা দিতে। তুমি কি করবা দেখ? এ ছাড়াও প্রায় প্রতি রাতে মহাসিন বিভিন্ন সময় বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হুমকি দেয়।