
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাগল চুরির অপরাধে গ্রাম্য সালীশের নামে সাতক্ষীরা পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর ফারহা দীবা খান সাথীর নেতৃত্বে ১৫ বছর বয়সী এক এতিম কিশোরকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে পা ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ দৌলা সাগরের বিরুদ্ধে। এসময় চুরির দায়ে গ্রাম্য সালীশে এতিম কিশোরকে অমানবিক ভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় মাসুদ রানা (১৭) নামে অপর এক কিশোরকে বেধড়ক ভাবে মারপিট করে গুরুত্বর ভাবে আহত করেন ফারহা দিবা খান সাথী ও শেখ শফিক উদ দৌলা সাগরের সন্ত্রাসী বাহিনী। শনিবার বিকালে পৌরসভার রসূলপুর এলাকার পূর্বপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন এঘটনা ঘটে। এঘটনায় ফারহা দিবা খান সাথী ও শেখ শফিক উদ দৌলা সাগরের বহিঃস্কার দাবি করে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।স্থানীয় রোজিনা খাতুন, কবির হোসেন, দৌলত আলী, রাশিদুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, পিতৃহীন এতিম কিশোর সজীব হোসেন রসূলপুর এলাকায় অবস্থিত তার নানা মোসলেম সরদারের বাড়িতে থাকেন। তার মা মহসিনা খাতুন পার্শ্বর্তী একটা হোটেলে কাজ করে সংসার চালান। মাস খানেক আগে রসূলপুর এলাকার মরিয়ম খাতুনের একটি গৃহপালিত পশু (ছাগল) চুরি করে সজিব। তবে স¤প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে সালিশ ডাকে মরিয়মের পরিবার। সালীশের আগে চুরিকৃত ছাগল ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন সজীব হোসেন। স্থানীয় গ্রাম্য সালীশের বিচারে তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটিও মানতে রাজি ছিলো সে। তবে সালিশে উপস্থিত হওয়ার পরে মহিলা কাউন্সিলর সাথী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন বলে জানান তারা। এসময় তারা আরো জানান, কিশোর সজীব হোসেন তাদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও সাথীর নেতৃত্বে পৌর কাউন্সিলর সাগর সজিবকে এলোপাথাড়ি ভাবে জি,আই পাইপ দিয়ে মারপিট করতে থাকে। এসময় সজীব হোসেন মাটিতে পড়ে গেলেও কাউন্সিলর সাগর তাকে জি,আই পাইপ দিয়ে পিটাতে থাকে। ঘটনার একপর্যায়ে এতিম কিশোর সজীব হোসেনের উপরে অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে এলে স্থানীয় মাসুদ হোসেন নামে অপর এক কিশোরকেও মারপিট করে গুরুত্বরভাবে আহত করে সাথী ও সাগরের সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় মাসুদ হোসেনের মাথা ফেটে রক্তপাত বের হতে থাকলে এঘটনার কোন প্রতিবাদ করেননি কাউন্সিলরা। বরং থানা পুলিশকে জানালে তাদের নির্যাতনের শিকার ভূক্তভোগি পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে ছাগল চুরির অপরাধে সজিব হোসেনকে ৬হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে সজীব তার নানার বাসায় থাকতে পারবেন না। বরং তার পৌর এলাকা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা জানান তারা (কাউন্সিলরা)। তবে সে যদি জরিমানার টাকা না দেয় তাহলে তাকে সহ তার পরিবারের সকলকে দেখে নেওয়ার হুমকীও দেন কাউন্সিলরা। এসময় কাউন্সিলরা চুরির অপরাধে সজীব হোসেনের মামী রোজিনা খাতুনকে অভিযুক্ত করে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হার্ট স্ট্রোক করেন রোজিনা খাতুন। এখন তিনি (রোজিনা খাতুন) সহ মাসুদ হোসেন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান ভূক্তভোগি পরিবার।
এবিষয়ে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ দৌলা সাগর বলেন, ছাগল চুরি করার অপরাধে তাকে আমি মারধর করেছি। তবে মারধর গুরুতর ছিলোনা জানিয়ে তিনি বলেন, সজীবের পা ভাঙ্গার কোন প্রশ্নই আসেনা। কেননা, আমি তাকে তিনবার লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছিলাম। দুইবার লাঠি দিয়ে তার দেহে আঘাত করলেও অপরটা লাগেনি বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সজীব হোসেনের বয়স ১৫ বছর হলে সে কিশোর না। কেননা সে বিবাহিত। তবে সে দেখতে ছোট হলেও তার কাজগুলো অনেক বড় বলে দাবি করেন তিনি। এসময় তিনি আরো জানান, তাকে পিটানোর সময় সে তার মামামামিকে দোষারোপ করেছিলো যে তার মামামামির ইন্ধনে সে ছাগলটি চুরি করেছিলো। তারপরে কিশোর সজীব হোসেনকে আর মারধর করেননি বলে জানান তিনি। সজীব হোসেনকে অমানবিক ভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় মাসুদ হোসেনের মারধরের কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সালিশ শুরু হওয়ার আগে দু’পক্ষের ভিতরে বিরোধ বেধেঁছিলো। আমরা কোনকিছুর বুঝে ওঠার আগে স্থানীয় এরশাদ, কবির হোসেনসহ আরো কয়েকজন মাসুদ হোসেনকে মারধর করে। এসময় আহত মাসুদ হোসেনের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছেন বলে জানান তিনি। তবে তার (কাউন্সিলর সাগর) আঘাতে যদি সজীব হোসেনের পা ভেঙ্গে যায় সেক্ষেত্রে তিনি অনুতপ্ত বোধ নয় জানিয়ে বলেন প্রয়োজনে তাকেও চিকিৎসাসেবার জন্য আর্থিক সহযোগীতা করা হবে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর ফারহা দিবা খান সাথী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমার নেতৃত্বে সজীব হোসেন ও মাসুদ হোসেনকে কোন মারধর করা হয়নি। তবে কাউন্সিলর সাগর ভাই সজিব হোসেনকে অল্প একটু মারধর করছিলো। তবে সে মারধরে সজীব হোসেনের পা ভেঙ্গে যাবেনা বলে জানান তিনি। এসময় তিনি দাবি করেন তাঁদেরকে ফাঁসাতে সজীব হোসেন পা ভাঙ্গার অভিনয় করেছে। তবে এক্সরে তে পা ভেঙ্গে যাওয়া স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাছাড়া সজিব হোসেন নিজের দোষ স্বীকার করলেও কেন তাকে গ্রাম্য সালিশে অমানবিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে? এবং তারা (কাউন্সিলর) উপস্থিত থাকা সত্তে¡ও কীভাবে মাসুদ হোসেনকে মারধর করা হলো এসম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার বিস্তারিত জানার থাকলে পৌরসভায় আসুন। আমি, সাগর ভাইসহ অত্র এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসম্পর্কে আপনার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দীন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন তিনি। তবে গ্রাম্য সালীশে জনপ্রতিনিধিরা কোন শিশু কিশোরকে মারধর করতে পারেননা। কিন্তুু, ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে জানান তিনি।