
সাঈদুর রহমান রিমন, ঢাকা অফিস:
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী করোনার দুর্যোগ কবলিত দেশের ৫০ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর ‘বিপদের অবলম্বন’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)। করোনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোকে এ মুহূর্তে অভাবের করালগ্রাস থেকে বাঁচাতে নানারকম পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্টরা শর্তহীন সহজ প্রক্রিয়ায় দ্রুততার সঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে ঋণ বাবদ পুঁজি পৌঁছাতে চায় এবং লকডাউন কবলিত জনগোষ্ঠীকে পেশাগত ভাবে কর্মচঞ্চল করে তুলতে চায়। একইসঙ্গে দ্রুতগতিতে অন্তত পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিয়েছে পিডিবিএফ।
করোনা কবলিত দুর্যোগে পুঁজি সহায়তা ও কর্মসংস্থান গড়ে তোলার মাধ্যমে ৫০ লক্ষাধিক পরিবারের প্রায় দুই কোটি মানুষ উপকারভোগী হবেন। বিশেষ এ কর্মসূচির আওতায় আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৫৫টি জেলার ৩৫৭টি উপজেলায় যাবতীয় সুবিধা পৌঁছানোর টিম ওয়ার্ক ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে পিডিবিএফ। উদ্যোগটি করোনা দুর্যোগ লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আমিনুল ইসলাম দাবি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত সময়ে এ সংস্থার কর্মিরা আন্তরিক উদ্যোগ ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের এক কোটি জনগোষ্ঠীর দারিদ্রতা বিমোচনে সরাসরি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তারা নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৮১ ভাগ অর্জন করে সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সরকারি পর্যায়ের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির তুলনামূলক বিশ্লেষণে এগিয়ে পিডিবিএফ এর বর্তমান আর্থিক অবস্থা আরো সুদৃঢ় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগভুক্ত সংস্থাটির পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের ঘটনায় পিডিবিএফ রীতিমত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে ছিল। ওই সময় বিপন্ন পরিবেশের মুখোমুখি হয়ে পাঁচ হাজার জনবলের প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবরে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতেই পিডিবিএফকে গতশীল করতে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় কৃষিবিদ আমিনুল ইসলামকে। তিনি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় উদ্বুদ্ধমূলক বৈঠক করে, উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আরো বেশি সমন্বয় গড়ে তুলে সর্বোপরি মন্ত্রনালয় তথা সরকারের সহায়তামূলক মজবুত সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেন দ্রুতলয়ে। এক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিল ¯ানীয় সরকার পলী উনয়ন ও সমবায় মšণালয়ের সচিব মহোদয়ের। এসব উদ্যোগ আর নানা সফলতার পরিপ্রেক্ষিতেই পিডিবিএফ এখন সর্বোচ্চ গতিশীল প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। গত মার্চ মাস পর্যন্ত সংস্থাটি ১০৯ শতাংশ স্বয়ংম্ভরতা অর্জন করে সবাইকে অবাক করে দেন। কিন্তু এর পর পরই কোভিড-১৯ এর প্রাদুুর্ভাবে বিশ্ব পরিস্থিতির আদলে পিডিবিএফ’ও থমকে দাঁড়ায়, মুহূর্তেই আটকে পড়ে সকল সক্রিয়তা। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও স্বাস্থ্যবিধির আওতায় সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা স্থবির হয়ে যাওয়ায় পিডিবিএফ এর সুবিধাভোগীরাও কর্মহীন হয়ে পড়েন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থাও তথৈবচ হয়ে দাঁড়ায়। তবে তাদের উদ্যোম থেমে যায়নি পুরোপুরি, বিনষ্ট হয়নি কর্মস্পৃহা। পিডিবিএফ এর যুগ্ম পরিচালক ড. মনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, টানা ৭৬ দিন পর লকডাউন সিথিল হওয়ার সাথে সাথেই সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তৎপর হয়ে উঠেন, সীমিত পরিসরে নানা কার্যক্রমও শুরু হয়। করোনার ভয়াল বিস্তারকালীন সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংস্থাটির কর্মিরা ঘুরে দাঁড়ানোর কর্মযজ্ঞে মনোনিবেশ করেন। তিনি বলেন, চরম বিপর্যস্ত পরিবেশের সীমিত পরিসরেও দৈনন্দিন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮০% অর্জনের সক্ষমতা দেখিয়েও পিডিবিএফ নয়া রেকর্ড গড়েছে।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, করোনা মহামারী সারাবিশ্ব জুড়ে সীমাহীন বিপর্যয় চলছে, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি বেসরকারি সিংহভাগ প্রকল্প অচল হয়ে পড়েছে। কিছু প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়লেও অনেক প্রকল্প কার্যক্রম ইতিমধ্যে বাতিলও করা হয়েছে। এমডি বলেন, চরম প্রতিকুল সময়েও পিডিবিএফ কর্মিরা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সংস্থাটির সাধ্যাতীত সফলতা এনে দিয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী স্বপণ ভট্টাচার্যের দিকনির্দেশনায় দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যমাত্রার ৮০% অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এবং পিডিবিএফ বোর্ড অব গভর্ণর্স এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ রেজাউল আহসানের সার্বিক তত্বাবধান ও সর্বাত্মক সহায়তা পেয়েছি আমরা। শতভাগ সাফল্য অর্জন করাটাও সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সমগ্র দেশব্যাপী পিডিবিএফ এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আমিনুল ইসলাম এ মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্ববহ ও সময়োপযোগী বিশেষ প্রকল্প দাখিল করেছেন মন্ত্রনালয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারীতে বিপর্যস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় প্রকল্পটি মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন প্রাপ্তির চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুুর্ভাবজনিত ক্ষতি পুরণের জন্য বেতনভাতাদি খাতে ১০০ কোটি, ঋণকার্যক্রম জোরদারের জন্য ১০০০ কোটি টাকা প্রনোদনার আবেদনও দাখিল করেন সুযোগ্য এমডি। সংশ্লিষ্ট সচিব মহোদয়ের সদয় সুপারিশে আবেদিত প্রনোদনার টাকা পিডিবিএফ পাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করছি। চরম অচলাবস্থা কাটিয়ে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম নিজের মেধা-পরিশ্রমের সর্বোচ্চ সমন্বয় ঘটিয়ে পিডিবিএফকে মর্যাদার সঙ্গে সচল রেখেছেন, তিনিই পাঁচ হাজার কর্মিকে উজ্জীবিত মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সহকর্মীদের বেতনভাতাদি সহ যাবতীয় ন্যায্য পাওনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রদানের রীতিও তিনি অব্যহত রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে সবচেয়ে সক্রিয়ভাবে পরিচালিত হওয়া পিডিবিএফকে ঘিরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তারা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার ন্যাক্কারজনক চক্রান্তে কর্মচঞ্চল পাঁচ হাজার কর্মিকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিতে চায়, উপকারভোগী কোটি জনগোষ্ঠীকে বিপন্ন জীবনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। তারা বলেন, সততার বলে বলিয়ান, কর্মচঞ্চল কর্মিরা সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সচিব মহোদয়ের তত্বাবধানে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পিডিবিএফকে এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নির্ভরযোগ্য অবলম্বন হিসেবে গড়ে তুলতে প্রস্তুত রয়েছে।