
= আজ শুনানী
= স্নায়ু চাপে উভয়পক্ষ
= প্রমাণ যোগাড়ে ব্যস্ত চেয়ারম্যান ও মেম্বররা
= মেম্বরদের দফায় দফায় শলাপরামর্শ
= চেয়ারম্যানকে ভিন্ন কায়দায় ঘায়েল করার প্রচেষ্টা।
= নিয়মিত অফিস করছেন চেয়ারম্যান
= তথ্য নিতে মেম্বরদের পরিষদে গমন
= দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা
= উৎসুখ ইউনিয়নবাসী
= তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক: (পূর্ব প্রকাশিতের পর) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৩নং কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপনের উপর শুনানী হবে আজ। শুনানী বিষয়ে ¯œায়ু চাপে রয়েছে উভয় পক্ষ। স্ব-স্ব পক্ষে প্রমাণ যোগাড়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বররা। ১২ মেম্বও নিজেদের মাঝে দফায় দফায় শলা পরামর্শ করেছেন গত কয়েকদিন। আর নিয়মিত অফিস করছেন ইউপি চেয়ারম্যান। প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে হঠাৎ ইউনিয়ন পরিষদে যান মেম্বররা। চেয়ারম্যানকে ভিন্ন কায়দায় ঘায়েল করার চেষ্টা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। শুনানী বিষয়ে উৎসুখ হয়ে আছে গোটা ইউনিয়নবাসী। আর তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ১ জুন জেলা প্রশাসক বরাবর দূর্নীতি ও অনিয়মের ৮ দফা অভিযোগ দাখিল করেন ঐ ইউনিয়নের মেম্বরবৃন্দ। এর ৩ দিন পর গত ৪ জুন ২০২০ তারিখে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নিকট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে তাদের অনাস্থা জ্ঞাপন করেন মেম্বররা। তবে জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করে থাকলেও সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে অনাস্থা পত্রে তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৪টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন।
উল্লেখিত ৪টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-
(১) চেয়ারম্যান একজন দূর্নীতিবাজ; তিনি ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ভরাটে বরাদ্ধ ৭ মে:টন চাউল আত্মসাৎ করেছেন এবং ইউডিসি উদ্যোক্তাকে অপসারন কওে তদস্থলে নিজের লোক বসাইয়া জন্ম নিবন্ধনের হাজার হাজার টাকা সংগ্রহ করে নামমাত্র কিছু টাকা সরকারি খাতে জমা রেখে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
(২) তিনি সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎকারী; করোনার কারনে বরাদ্ধকৃত ত্রানের অনুকূলে ২৩% টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবংবরাদ্ধকৃত ত্রানের অনুকুলে ২৩% টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। শিশুখাদ্য গুড়াদুধ বিতরণ করেন নাই এবং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধক উপকরণ বিতরণ না কওে আত্মসাৎ করেছেন।
(৩) তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারকারী; সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে তিনি নিজের লোক দ্বারা ত্রাণ বিতরণ করেন এবং গায়ের জোরে ইউডিসি উদ্যোক্তাকে অপসারণ করেছিলেন
(৪) সরকারি সম্পদ বন্টনে অনিয়মকারী; সুপেয় পানি সংরক্ষনের ট্যাংকির অনুকূলে সরকারি নীতির ৪ গুণ টাকা নিয়েছেন। সাথে ৬টি টিউবওয়েল বিতরনেও অনিয়ম করেছেন।
উক্ত ৪ দফা অনাস্থা জ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহি কমকর্তা মীর আলিফ রেজা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি আজ ২৫ জুন বেলা ১১ ঘটিকায় তার নিজ কার্যালয়ে শুনানীর দিন ধার্য করেন। উক্ত শুনানীতে উভয়পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও স্বাক্ষীসাবুদ সহ উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাস মহামারীর কারনে উভয়পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ জন করে ব্যক্তি শুনানী কার্যে অংশ নিতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুনানী উপলক্ষে ¯œায়ুচাপে আছে উভয়পক্ষই। নিজের/ নিজেদের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ও প্রমাণাদি যোগাড়ে গত কয়েকদিন ব্যস্ত সময় পার করেছেন সকলেই। চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করছেন এবং তার নিজের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করছেন বলে জানান তিনি। আর মেম্বররাও তাদের মধ্যে দফায় দফায় শলাপরামর্শ করছেন আর নিজেদের পক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমানাদি যোগাড় করতে ঘাম ঝরিয়েছেন।
এদিকে চেয়ারম্যানকে ভিন্ন কায়দায় ঘায়েল করার জন্যও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরী বলেন, আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে বিশ^স্থ একটি সূত্রে জানতে পেরেছি। এর পর থেকে আমি সাবধানে চলফেরা করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমাকে যদি কাগজপত্রে পরাজিত করতে না পারেন তাহলে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পরাস্ত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ দাখিল ও অনাস্থা জ্ঞাপনের পর ইউনিয়ন পরিষদে আসা যাওয়া থেকে নিজেদের অনেকটা বিরত রাখলেও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে গত মঙ্গলবার পরিষদে যান মেম্বররা। সেখানে তারা ইউপি সচীবের কাছে কিছু তথ্য উপাত্ত চান। চেয়ারম্যান অনুমোতি দিলে তিনি (সচীব) যেকোন তথ্য দিতে রাজি বলে জানালে মেম্বরদের মাঝে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া উইডিসি উদ্যোক্তর কাছেও অনুরুপ কিছু তথ্য দাবী করলে তিনিও অনুরুপ বলায় ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায় তাদের মাঝে।
গতকাল বুধবারও এক মেম্বরকে লু্িঙ্গ পরে দু’জন লোক সহ পরিষদে ঘোরা ফেরা দেখা গেছে। বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, ঐ মেম্বর বিকালে ইউডিসি উদ্যেক্তাকে কিছু তথ্য দেয়ার জন্য চাপ দেন। তবে ইউডিসি উদ্যেক্তা পূর্বের ন্যায় বিনীত জবাব দিলে তিনি উদ্যোক্তার নিজস্ব রুমে যেয়ে অবস্থান নেন এবং একটু গরম সুরে বলেন আরও মেম্বররা আসছে। তবে শেষ পর্যন্ত অন্য মেম্বররা আসেননি। তবে জনৈক মেম্বর চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কাউকে কোন তথ্য না দেয়ার জন্য উদ্যেক্তাকে বলেন।
উক্ত মেম্বরের গরম সুরের ঐ কথা চেয়ারম্যানের কানে গেলে তিনি গ্রাম পুলিশকে ডেকে পাঠান। এ সময় পরিষদে সেবা নিতে আসা কয়েক ব্যক্তির মাধ্যমে মেম্বরের ঐ গরম সুরের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যানের অনুসারী কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে হাজির হলে পরিষদ ত্যাগ করেন ঐ মেম্বর।
অপরদিকে আজকের শুনানী নিয়ে আগ্রহ আকাঙ্খা লক্ষ্য করা গেছে ঐ ইউনয়বাসীর মাঝে। অধিকাংশ সাধারন মানুষ চেয়ারম্যানের পক্ষে স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন বলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে। তবে মেম্বরদের পক্ষেও অল্প স্বল্প কিছু লোককে কথা বলতে শুনা গেছে।
এদিকে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশাশুনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিপক্ষে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর যে অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়েছে তার অভিযোগ সমুহের বিষয়ে (৪টি বিষয়ে) বৃহস্পতিবার শুনানী হবে। জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়ে আজ কোন শুনানী হবে না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। সরেজমিনে কোন তদন্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ উভয় পক্ষকে নিয়ে শুনানী হবে, প্রয়োজন হলে নিয়মানুযায়ী পরবর্তীতে সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। তদন্ত অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেও তিনি জানান।
তাই অভিযোগের শুনানী, তদন্ত, তদন্ত শেষে ফলাফল আর কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের অজানা আরও তথ্য জানতে আগামী ৫ম পর্বে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আর চোখ রাখুন দৈনিক সাতনদী পত্রিকার পাতায় ও অনলাইন মিডিয়ায়।