
আকবর হোসেন,তালা: সাতক্ষীরার তালার খেশরায় এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে স্কুলের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে অভিযোগকারীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে আস্তা রাখছেন না বলে পূর্ণ তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
অভিযোগকারীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক এম মোবারক হোসেন এর দূণীতি বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি। বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ১৩ জুন শনিবার সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল্লাহ্ আল মামুন উক্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেন। প্রধান শিক্ষক ভুল স্বীকার করলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ১০ দিনের সময় দিয়ে চলে যান। তার এমন তদন্তে অভিযোগকারীরা আস্তা হারিয়েছেন বলে জানান। অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা গফুর মোড়ল বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্তে আমরা সন্তষ্ট হতে পারছি না। আমরা মনে করি তিনি প্রধান শিক্ষকের নিকট হতে উৎকোচ গ্রহন করে নাম মাত্র তদন্ত করছেন। তদন্তের সময় উপস্থিত ছিলেন,জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজু, প্রতিষ্ঠাতা মোঃ শাহাদাৎ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গফুর গোলদার, ম্যানিজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি মইনুল ইসলাম, শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ।
ম্যানেজিং কমিটির লোকজন জানান, এম মোবারক হোসেন ২০০৯ সালে এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যোগদানের পর থেকে সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোসহ নিয়মশৃংখলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ৮জন শিক্ষক নিয়োগ, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ইজারা প্রদান, অবৈধ গাইড বই বিক্রি, পুরাতন বই খাতা বিক্রি, উপবৃত্তির টাকা, শ্রেণী পরিবর্তনের সময় অবৈধ ফিস আদায়সহ এস এস সি ও জে এস সি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফিস আদায় করে লক্ষ লক্ষ আতœস্বাৎ করেছেন ।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা গফুর গোলদার জানান, প্রধান শিক্ষক এম মোবারক হোসেন এ পর্যন্ত ৮ জন শিক্ষক নিয়োগে দিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কল্পে ৩২ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন। বিদ্যালয়ের জমি ইজারা দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের কোন কাজে আসেনি এসব উন্নয়ন ফান্ডের টাকা । এছাড়া নিষিদ্ধ অবৈধ গাইড বই বিক্রি করে, লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ মইনুল ইসলাম বলেন, আমি বিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সদস্য হলেও আমাকে কিছু জানানো হয় না। বিদ্যালয়ের কোনো হিসাবের নথিপত্র রাখা হয় না, নেই কোনো রেজুলেশনও। আজ তদন্ত কমিটির কাছেও কোনো হিসাব দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। এস এস সি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় মানবিক বিভাগে ১৪৫০ টাকার স্থলে নেয়া হয়েছে ২১০০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে ১৫০০ টাকার স্থলে নেয়া হয়েছে ২২০০ টাকা এমনকি নম্বরপত্র ও প্রশাংসা পত্র দেয়ার সময় জোর টাকা আদায় করা হয়। ২০১০ সাল হতে অদ্যাবধি বিনা রশিদে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করেন, যাতে কেউ হিসাব না নিতে পারে। তার কথার কেউ বিরোধীতা করলে তাকে অসম্মান করেন তিনি। প্রধান শিক্ষক মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগে আমরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করি। তিনি আরও বলেন, আমরা জেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব না দেওয়ার আবেদন করলেও গ্রহণ না করে তাকে বহাল রাখা হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার ১০ দিনের সময় দিয়ে প্রধান শিক্ষককে সহযোগীতা করে গেলেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম মোবারক হোসেন ভুল স্বীকার করেছেন। তাকে ১০ দিনের মধ্যে সকল তথ্য সরজমিনে দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এম মোবারক হোসেন অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন অনিয়ম করেনী, সঠিক কাগজ পত্র না থাকলেও দূণীতি সাথে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।