আব্রাহাম লিংকন, শ্যামনগর থেকে: বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত শ্যামনগর উপজেলার গাঁ ঘেসে বিস্তীর্ণ সুন্দরবন অবস্থিত। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। জোয়ারে ভাঙ্গা, ভাটায় গড়া নদীর চরে বসাবস জেলেরা প্রতি নিয়ত সুন্দরবনের বাঘের আক্রমন, নদীতে কুমিরের আক্রমন, ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস্ সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
গত ২৫ মে ২০০৯ সালের আইলার কবলে এই সব জেলেরা সব কিছু হারিয়ে সর্ব শান্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে পর পর কয়েকটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসলেও তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত ২৬ এপ্রিল ২০১৯ প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ফনি, গত ৯ নভেম্বর ২০১৯ প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এবং গত ২০ মে ২০২০ তারিখের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পান বিলিন করে দিয়ে যায় নদীর চরে বসাবস জেলেদের ঘর বাড়ী। এমনকি চরম বিপদগ্রস্থ্য হয়ে পড়ে নদী ভাঙ্গনে। এরই রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হলো বিশ^মহামারি করোনা ভাইরাস্। একদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে বিলিন ঘরবাড়ী অন্যদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস্। উপজেলার স্ব-স্ব পরিষদ থেকে সামান্য অনুদান দিলেও কারোর মাথাব্যাথা নেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে কোথায় থাকবে? নেই কোন মাথাগোজার ঠাই। এই বৃষ্টির দিনে পরিবার পরিজনদের নিয়ে বসে বসে কাটছে তাদের রাত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু জেলেরা জানান, সম্প্রতি কয়েকটি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে ঘরবাড়ী লন্ডভন্ড হয়ে গেলেও ইউপি পরিষদ থেকে শুধুমাত্র চাউল ছাড়া আর কিছুই পাইনি। আবার কারোর কাছে অভিযোগ করলে এই চাউলটুকুও হারাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরীবদের জন্য এতো কিছু অনুদান দিচ্ছে কিন্তু যারা টাকা দিতে পারছে মেম্বাররা তাদের নাম তালিকায় তুলছে। আমরা টাকা দিতে না পারায় আমাদের নাম তালিকাতে নেই। আমরা সব কিছু থেকে বঞ্চিত। আবার যাদের নাম তালিকাতে আছে, তারা সরকারী বা বে-সরকারী সবকিছুই সুযোগ পাচ্ছে।
রমজাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আল-মামুন বলেন, আমার ইউনিয়নে মোট-২০০৯ জন জেলে কার্ড আছে, তার মধ্যে মৃত্যুবরন করেছে-৩৯, বর্তমান-১৯৭০জনের নামে কার্ড আছে। বছরে ২ বার মাথা পিছু ৫৬ কেজি করে চাউল পাচ্ছে। তবে এই ছাড়া সরকারী ভাবে আর কোন বরাদ্দ পাইনি।
কৈখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, ২৫০০ জন জেলে কার্ড আছে, বছরে ২ বার মাথা পিছু ৫৬ কেজি করে চাউল পাচ্ছে। আমরা মঙ্গলবার থেকে চাউল দেওয়া শুরু করবো।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাশেম মোড়ল বলেন, আমার ইউনিয়নে মোট-৩১৮২জনের নামে কার্ড আছে। বছরে ২ বার মাথা পিছু ৫৬ কেজি করে চাউল পাচ্ছে। তবে আমরা শুধু জেলে বাউয়ালীদের না, সরকারী বরাদ্দ আসলে সবাইকে সমান ভাবে প্রদান করে থাকি।
গাবুরা ইউনিয়নের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৫০০০ জন জেলে কার্ড আছে, মাথা পিছু ৫৬ কেজি করে চাউল পাচ্ছে। তবে বৃষ্টি কারনে এখনো পর্যন্ত চাউল উঠাতে পারিনি।
তবে নদীর চরে বসবাস করা জেলেরা মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বা কেউ কেউ মাথার উপর পলিথিন দিয়ে কোন রকমে দিন যাপন করছে। যদিও সরকার কর্তৃক জমি আছে ঘর নাই বা ভূমিহীন ব্যক্তির ঘরের তালিকায় কিছু জেলেদের নাম আছে ? এই নিয়ে বিভিন্ন সমলোচনায় মুখর জেলেপাড়া। তাদেও প্রশ্ন- আদৌও কি জেলেরা চাউল ছাড়া আর কিছু পাবে ?