হাফিজুর রহমান: কালিগঞ্জে সম্পত্তি হাতাতে হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধ পাগল চাচাকে শিকলবন্দী করে রাখার অভিযোগ ভাইপো হাতেম আলীর বিরুদ্ধে। শনিবার বেলা ১১টার সময় ঘটনার সত্যতা জানার জন্য সরেজমিনে কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দমধুসুধূনপুর গ্রামের নুর ইসলাম ওরফে ঠুৃনু পাগলের বাড়ীতে গেলে এমন ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া যায়।
৫৬ বছর বয়সের বৃদ্ধা নুর ইসলাম ওরফে ঠুনু পাগল জন্মগত ভাবে পাগল প্রতিবন্দী হলেও আজও পযন্ত তার ভাগ্যে কোন প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ভাতা সহ কোন সরকারি ভাতা বা সাহায্য জোটেনি। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া ত্রাণ সহায়তার ১টি প্যাকেট তার ভাগ্যে জুটলেও মেম্বর চেয়ারম্যানরা আর কোন সহায়তার হাত বাড়ায়নি। তবে সম্পত্তি লোভীরা হত্যা না করতে পারলেও ভাঙ্গা পা নিয়ে ভ্যানে তুলে বাড়ী বাড়ী নিয়ে সাহায্যের নামে ভিক্ষার টাকা আদায় নিয়ে ও ভাগাভাগি করাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদের বিচারে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে নুরুল ইসলাম ওরফে ঠুনু পাগলের আশ্রয়দাতা নেছারুদ্দীনকে।
শনিবার বেলার ১১টার সময় মুকুন্দমুধুসুধূনপুর গ্রামে গেলে নেছারুদ্দীন, ফতেমা খাতুন, আফসার সানা, ফজিলা খাতুন, আবুল কালাম, ফজলুল হক, সাকের বিশ্বাস সহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, আমাদের গ্রামের মৃত সেফাতুল্লাহ মিস্ত্রীর পুত্র নুরুল ইসলাম ওরফে ঠুনু পাগল জন্মগত ভাবে পাগল। তার বাবা-মার মৃত্যুতে ১০ কাটা জমির উপর বসবাস করত। তার জমির উপরে সৎ ভাইপো মৃত ইমান গাজীর পুত্র হাতেম আলী গাজী এবং ছেলে মাহমুদুল হাসানের নজর পড়ে। কেউ ঠাই না দেওয়ার লোক না থাকায় প্রতিবেশী ওসমান গাজীর পুত্র নেছারউদ্দীন এবং তার স্ত্রী ফতেমা খাতুন ওরফে ঝেনি বেগমের বাড়ীতে আশ্রয় থেকে র্দীঘ ৪০ বছর মুক্ত জীবন-যাপন করে আসছে। হাতেম আলী বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে না পেরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় সম্পত্তি লোভে নুরুল ইসলাম পাগলকে হত্যার জন্য সাকেরের বাড়ীর পাশে তার পুত্র ভাড়া মোটরসাইকেল চালক মাহমুদুল হাসান চাপা দিলেও সে যাত্রায় রেহাই পায়। পরে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আব্দুল কাদেরের নিকট দেখালে তিনি পা ভেঙ্গে যাওযায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে নেছারুদ্দীন তাকে ২৭ মার্চ নলতা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
পরে গত ৫/৬দিন আগে স্থানীয় মেম্বরের ঘনিষ্টভাজন শফিকুল ইসলাম জোর পূর্বক নুরুল ইসলামকে ভ্যানে তুলে গ্রামে গ্রামে সাহায্যের জন্য ভিক্ষা করে টাকা ভাগাভাগি করতে থাকে। বিষয়টির প্রতিবাদ করায় নেছারুদ্দীন এবং শফিকুল গং এর মধ্যে মারামারিতে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও থানায় অভিযোগ হয়। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীন বিচার করে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করে নেছারুদ্দীনকে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়।
এ সুযোগে সম্পত্তি লোভী সৎ ভাইপো হাতেম আলী তার পুত্র মাহমুদুল হাসান ৪/৫ দিন আগে পাগল প্রতিবন্দী নুরুল ইসলাম ওরফে ঠুনু পাগলকে ধরে বাড়ীতে এনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। রাত হলে ঘরের বাহিরে খোলা আকাশের নিচে বেঁধে রাখা নিয়ে এলকার সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে হাতেম আলী এবং তার পুত্র মাহমুদুল বাড়ীতে না থাকায় তার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন স্বীকার করে বলে আমরা তার মশারির ব্যবস্থা করবো। তার সম্পত্তিতে বসবাস করে তাকে শিকল বন্দী করা এবং চিকিৎসা না করা প্রসঙ্গে ও সরকারি হাসপাতালের ভর্তি না করার ব্যাপারে বলেন মেম্বর সাহেব যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবেই করেছি।
ঘটনার সত্যতা জানান জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য নিরাঞ্জন কুমার পাল ওরফে বাচ্চু পাল এর কাছে জিজ্ঞাসা করতে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিষয়টি আমি মিমাংসা করে দিয়েছি।
চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীন বলেন, জমি আতসাৎ এবং হত্যা প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে কেউ আমার নিকট কোন অভিযোগ না করলে আমি কিভাবে বিচার করব। তবে একজন পাগল প্রতিবন্দী এতিমের অভিযোগ করা প্রসঙ্গে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
তাই প্করোনার মধ্যে প্রতিবন্দ্বী পাগলকে বাঁচাতে এবং শিকল মুক্ত করতে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এবং থানার অফিসার্স ইনচার্জের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।