অনলাইন ডেস্ক:
বিশ্বের সকল মাকে উৎসর্গ করা দিন আজ, দুনিয়াজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। অন্যসব দেশের মতো মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বেশ কয়েক বছর ধরে এ দেশেও বিশ্ব মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে করোনা দূর্যোগে পাল্টানো পরিস্থিতিতে এবার থাকছে না মা দিবসের তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা। তবে ভার্চুয়েলি কিছু আয়োজন আছে, আরও আছে সোশাল মিডিয়ায় মায়ের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট; আর মাকে নিয়ে হৃদয়ছোঁয়া অসংখ্য স্ট্যাটাস।
পৃথিবীর সবচেয়ে খাঁটি, পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। দুনিয়ার সব মাকে উৎসর্গ করা একটা দিন মা দিবস। কেউ বলেন, মাকে ভালোবাসতে আবার দিন লাগে? মা তো মা-ই।সারাবছরই অটুট থাকুক মায়ের প্রতি ভালোবাসা। কথা ঠিক আছে। তবে বছরের একটা দিন যদি মায়ের জন্য বরাদ্দ থাকে, মাকে উপহার দেওয়ার উপলক্ষ যদি দিনটি তৈরি করে দেয়, মা দিবসে যদি দূরে সরে যাওয়া কোনো সন্তান মায়ের কাছে আসে- দিবসটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই দিনে আমরা দেখতে চাই মায়ের মুখের হাসি। কারণ…মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে।
সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মা যাবতীয় মমতার আধার ও কেন্দ্রবিন্দু। সন্তানের প্রথম শেখা বুলিও হচ্ছে ‘মা’।পৃথিবীর ইতিহাসে সব ধর্মই মাকে দিয়েছে মর্যাদাপূর্ণ আসন। মানুষ ছাড়াও অবুঝ প্রাণীদের মধ্যেও প্রবল মাতৃত্ববোধ চোখে পড়ে। মায়ের ভালোবাসায় স্বার্থপরতার স্পর্শ নেই; নেই কোনো প্রত্যাশা-প্রাপ্তির সমীকরণ। মা সন্তানকে বুকভরা ভালোবাসা দিয়ে লালনপালন করেন। মায়ের আঁচল সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। তাই মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই, ক্ষণ নেই। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিদিনের, প্রতি মুহূর্তের, প্রতিক্ষণের। তারপরও বিশ্বের সব মানুষ যাতে একসঙ্গে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সেজন্য মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করা হয়।
মা দিবস উদযাপনের প্রথম ভাবনাটি আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের মাথা থেকে৷১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন। সে গানটা সে সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছিল কারণে বা অকারণে। এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিল অবলীলায়। এই সব হত্যাযজ্ঞ দেখে জুলিয়া খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে একসাথে করতে চাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন। দিবসটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রচুর লেখালেখি করেন।
মা দিবস পালনের রীতিকে সাংগঠনিক ভিত্তি দেন মারিয়া রিভস জারভিস নামের যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নারী। তার মা আনা জারভিস না দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে ছিলেন।১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে মেয়ে মারিয়া রিভস মায়ের স্মৃতি রক্ষা সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।
এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হলে একটি গানের কথা উল্লেখ করতেই হয়। ‘মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে,/মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।/তাঁর ললাটের সিঁদুর নিয়ে ভোরের রবি ওঠে,/ও তাঁর আলতা পরা পায়ের ছোয়ায়, রক্তকমল ফোঁটে।/প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে, কে জেগে রয় দুঃখের ভরে/সেই যে আমার মা,/বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নাই কো তুলনা, সেই যে আমার মা।’
প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। মাকে বাদ দিয়ে সন্তান হয় না, মানুষ হয় না। মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করার শিক্ষা পুরো মানবজাতিকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করারই নামান্তর। মানব সম্পদের যথার্থ বিকাশ এবং মানব সমাজের সার্বিক অগ্রগতির জন্য মাতৃজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্বশীলতার মানসিকতা সৃষ্টির জন্য গোটা সমাজকে সক্রিয় হতে হবে-এই শপথগ্রহণ হোক আজকের সকলের পবিত্র কর্তব্য।