
সচ্চিদানন্দদে সদয়,আশাশুনি : সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ আনোয়ার হোসেনের নামে গড়ে উঠেনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থগার, কলেজ বা কোন স্মৃতি চিহ্ন। জানা যায় যে স্কুলে পড়াশুনা করতেন সেখানে স্মৃতি চিহ্ন স্বরুপ বিরল প্রজাতির গাছ সহ বিভিন্ন গাছগুলো ধ্বংসের পায়তারা চলছে। বিভিন্ন ইতিহাস, এলাকার লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করে তিনি খুলনা জেলা স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্র্তি হন। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৪৮ সালে খুলনা বিএল কলেজে ভর্তি হন। ওই সময় তিনি খুলনার অধ্যক্ষ মানিক আতাহারের বাড়ীতে থাকতেন। অধ্যক্ষ মরহুম মানিক আতাহার ছাত্র ফেডারেশনের একজন প্রভাব শালী নেতা ছিলেন। সেখান থেকে আনোয়ার হোসেন ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। যখন রাষ্ট্র ভাষা বাংলা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় তখন খুলনায় এর প্রভাব পড়ে। ওই সময় আনোয়ার হোসেন বাংলাভাষার জন্য নিজের জীবনকে বাজী রেখে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন এবং ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর প্রথম তাকে কোতয়ালী থানায় রাখা হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী জেলে। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি খাপড়া ওয়ার্ডে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বুধাটায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় আনোয়ার হোসেনের ভিটের কোন চিহ্ন নেই। আনোয়ার হোসেনের মামাতো ভাই এরশাদ সরদার (৭৫) বলেন, আমার পিতা মরহুম বাবর আলীর কাছে যেটুকু শুনেছি আনোয়ার হোসেনের আদি বাড়ি আশাশুনি উপজেলার শোভনালী গ্রামে হলেও সে বুধহাটা গ্রামে মানুষ হয়। তাঁর মা ছিলেন বাক প্রতিবন্ধী। তারঁ বাবার নাম পুনাই গাজী আর মায়ের নাম পাচী বিবি। আনোয়ার হোসেন সরদার যখন জেলে ছিলেন তখন আমার বাবা বাবর আলী সরদার মাঝে মাঝে দেখা করতে যেতেন। বুধহাটা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর বলেন আনোয়ার হোসেন আমাদের গর্ব। তার স্মৃতি ধরে রাখার মতো তেমন কিছু করা হয়নি অন্তত গাছ গুলো বাচিয়ে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করা হোক। এলাকাবাসী বলেন, তৎকালীন ভাষা শহীদ আনোয়ার হোসেন বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা নেন। সেই সময় দুটি বিরল প্রজাতির গাছ সেখানে রোপন করা হয়।বর্তমানে ২২ নং বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহু গাছ কেটে, খেলার মাঠ বন্ধ করে পশ্চিম দুয়ারী নতুন বিল্ডিং নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রতিকারের জন্য আবেদন করে জেলা প্রশাসক বরাবর। জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাশুনিকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের নির্দেশের কপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ও শিক্ষা অফিসারের কাছে দেওয়া হলেও সোিট ধামাচাপা দিয়ে গাছ কর্তনের তোড়জোড় চলছে। এমনকি সংসদ সদস্যের সুপারিশকৃত আবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দেওয়া হলেও এাকই ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানাগেছে। এব্যাপারে এলাকার মানুষ ফুসে উঠতে শুরু করেছে।বিদ্যালয়ের নামীয় ৫০ শতক জমির উপর বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট দক্ষিণ দুয়ারীভাবে পুরাতন ভবন রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসের স্থানসংকুলান না হওয়ায় সরকারিভাবে আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মানের প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের সামনে কোন রকমে খেলা করার মত একটি ছোট মাঠ রয়েছে। এ মারে পশ্চিম পাশে ফোরকানিয়া মাদরাসা অবস্থিত। মাদরাসার সামনে ঈদগাহ ময়দান। দক্ষিণ পাশে সরকারি সড়ক। মাঠের একটি বড় অংশ দখলে নিয়ে মাঠের পূর্ব পাশে পশ্চিম দুয়ারীভাবে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী প্রতিকারের আবেদন করলে ২ জুলাই ডিইও’কে জরুরী ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে আদেশ করেন। কিন্তু তদন্ত না করে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে মাঠ নষ্ট করে এবং সাথে সাথে ১৩/১৪টি বৃক্ষ নিধন ও শতাধিক বছরের দু’টি সবার প্রিয় বিরল প্রজাতির গাছ নিধন করে বিল্ডিং নির্মাণের জন্য লে-আউট ও কাজের জন্য বালু আনা হয়েছে তাতে এলাকার মানুষ ফুসে উঠেছে। এখানে ভবন নির্মাণ হলে মাঠে খেলাধূলার সুযোগ নষ্ট হবে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ঈদগাহ ময়দানও জৌলুস হারিয়ে মুসল্লি ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে। বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের স্থানসংকুলান অসম্ভব হবে। মানুষ মারা গেলে এ মাঠেই জানাযা হয়ে থাকে সেটিও কষ্টকর হবে। এলাকাবাসীর দাবী পশ্চিমমুখো সদর করে বিল্ডিং নির্মান করে সকল ব্যাপারে ক্ষতি না করে স্কুলের পুরাতন ভবনের পূর্বপাশে অবস্থিত ওয়াশ বøক ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে বিল্ডিং করলে সবদিক দিয়ে ভাল হবে। স্কুলের জন্য পশ্চিম পাশে ল্যাট্রিন ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনে যেকোন সুবিধামত স্থানে আবারও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা যাবে। এলাকাবাসীর দাবি আনোয়ার হোসেনের স্মৃতি বিজড়িত গাছ দু’টি সহ অন্যান্য গাছ রক্ষা করে বিøডিং নির্মাণ করা হোক। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন,আমরা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। গাছ ও খেলার মাঠ বজায় রাখা হবে।