
আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মাসের শেষে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে বেশ কয়েকটি কালবৈশাখী ঝড়। তাপপ্রবাহের কারণে আকাশে মেঘমালা তৈরি হচ্ছে, আর এই মেঘমালা থেকেই নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপ শক্তিশালী হলেই হবে ঘূর্ণিঝড়। চলতি মাসে এমন ঝড়েরই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় হলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে উপকূলের সাধারণ মানুষ। অথচ করোনা প্রতিরোধের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এই সময়ে যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উপকূলবাসীর জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে নিতে হবে ব্যাপক উদ্যোগ। এমনিতে আগের চেয়ে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। সবশেষ দুইটি ঘূর্ণিঝড়ে উপকূল থেকে প্রায় সব মানুষ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া গেছে। কিন্তু এখন ঘূর্ণিঝড় হলে আগের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে করোনার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘চলতি মাসে স্বাভাবিক ঝড়বৃষ্টির পাশাপাশি একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। এ সময় সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়। সেটি বেশি শক্তিশালী হলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে অনেক সময় আবার ঝড়ে রূপ নেওয়ার আগেই দুর্বল হয়ে যায়।’
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশের ঋতুগুলোর পরিবর্তন ঘটছে। আগে যেখানে বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী ঝড় হতো। এখন তা হচ্ছে না। এখন প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই এই ঝড় শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আকাশে অনেক মেঘমালার সৃষ্টি হয়। এসব মেঘমালা যদি সাগরে তৈরি হয়, তাহলে তা সাগরে জ্বলীয় বাষ্প এবং পানি মিলে-মিশে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। এই নিম্ন চাপ বেশি শক্তিশালী হয়ে গেলেই মুশকিল। তখন সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এই ধরনের ঝড় হলে কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. আব্দুল মতিন বলেন, ‘এখন এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ হবে। প্রথমত আমরা চাই না করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে আবারও নতুন কোনও দুর্যোগের আবির্ভাব ঘটুক। কিন্তু তারপরও যদি ঘটে সেটা তো আমাদের কিছু করার নাই। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। তবে আমরা যা করতে পারি তা হলো, উপকূলবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া। তবে সেক্ষেত্রে আগের মতো গাদাগাদি করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সাইক্লোন শেল্টার বাড়াতে হবে। এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র বানাতে হবে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বেগ পেতে হবে। তাই এখন থেকেই সরকারের উচিত পরিকল্পনা করা, বিশেষ করে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের।’
এখন যদি ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, কীভাবে তা সামাল দেওয়া হবে, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো.মোহসীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই সময়ে এই ধরনের ঝড় আসলেই আতঙ্কোর বিষয়। কিন্তু আমরা আশা করি, সামাল দিতে পারবো। কারণ, গত দুইটি ঝড় বুলবুল এবং ফণীর সময়ে আমরা কিন্তু খুব পরিকল্পিতভাবে সব করতে পেরেছিলাম। আমাদের ৫৬ হাজার ভলান্টিয়ার আছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সবসময় রেডি আছে। চার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও আমরা স্কুল-কলেজগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এসব কেন্দ্রে মানুষকে নিয়ে আসা, খাবার দেওয়া এগুলোর ব্যবস্থাপনা সবই আমাদের রয়েছে। আগে আমরা আট ঘণ্টায় ২২ লাখ লোক শেল্টার সেন্টারে নিয়ে এসেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘এখন যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলে এবার একটু ভিন্নভাবে ব্যবস্থানা করতে হবে। আগে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেভাবে লোক রেখেছিলাম, এখন সেভাবে রাখা যাবে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমরা স্কুল-কলেজগুলোকে ব্যবহার করতে পারবো। এমনকি গ্রামের বড় বাড়িগুলো যেখানে মানুষের বসবাস কম, সেখানেও আশ্রয়কেন্দ্র করা যেতে পারে।’ মো.মোহসীন জানান, এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমাদের আলাদা কমিটি আছে। শিগগিরই বসে এই বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো এবং উদ্যোগগুলো নেওয়া হবে।’
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন