
দ্যুতিদীপন বিশ্বাস: ৭১ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে স্ত্রী আকলিমা বেগম। একমাত্র ছেলে রাগ করে বাড়ির থেকে বেরিয়ে স্ত্রীকে শশুর বাড়িতে রেখে নিজে থাকে ভাটায়। বাবা মায়ের খোজ খবর নেয় না বললেই চলে।বয়স হয়েছে কিন্তু নেই কোন সরকারি বয়স্ক ভাতার কার্ড। ওয়ার্ডের মেম্বর একাধিকবার বিভিন্ন সরকারি সহযোগিতা দেবে বলে বৃদ্ধ অসহায় দম্পতির কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং ছবি। কিন্তু দেয়নি কোন সরকারি সহযোগিতা। অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির সপ্তাহে লাগে ৩০০টাকার ঔষধ, টাকা জোগাড় করার জন্য পিচের রাস্তায় ঝাড়ু দেয়া কাজ করে কখনও আবার মৎস্য ঘেরে “মজুরী ” দিয়ে কষ্টের মধ্য দিয়ে খরচ বহন করে পার করছে দিন গুলো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্মক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে বিধায় কাজেও নিতে চাচ্ছে না কেউ। এবারের কনকনে শীতে বৃদ্ধ অসহায় দম্পতি পায়নি কোন শীত বস্ত্র। মেয়েরা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত দুরের থেকে এসে ইচ্ছা থাকলেও তারা ঠিকমতো খেয়াল করতে পারেনা। নিরুপায় হয়ে আকলিমা বেগম প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এমন করুন ও অমানবিক ঘটনা ঘটে চলেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ধুলিহর ইউনিয়ন এর বয়ারবাতান গ্রামে। দিনের পর দিন অসুস্থ ও বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছে অসুস্থ ও বৃদ্ধ মোঃ আব্দুল হামিদ মোড়লের স্ত্রী আকলিমা বেগম। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে আকলিমা বেগমের স্বামী আব্দুল হামিদ মোড়লের বয়স চলছে ৭১ বছর। আর সরকারি বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রাপ্তির বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে ৬৫ আর মহিলাদের ক্ষেেেত্র ৬২বছর। সরকারি নিয়ম অনুসারে বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রাপ্তির নির্দিষ্ট বয়স ছাড়া আরও ৬ বছর বেশি হলেও এখনও পায়নি সরকারি বয়স্ক ভাতার কার্ড। শুধুমাত্র বয়স্ক ভাতার কার্ড না সরকারি সাহায্য সহযোগিতার কোন অনুদানই পায়না এই বৃদ্ধ দম্পতি।
নিজেদের কোন জমি না থাকায় আকলিমা বেগমের স্বামী মোঃ আব্দুল হামিদ মোড়লের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে কাজ করে জমিয়ে রাখা অল্প কিছু টাকা দিয়ে সরকারি খাস জমির উপর ঝড়ের পরে টিন ও মাটির সমন্বয়ে বেধেছে মাথা গোজার মতো ছোট একখানা ঘর। এখন আর কোন টাকাই অবশিষ্ট নেই এই বৃদ্ধ অসহায় দম্পতির কাছে। যেকটাদিন বেচে আছে ভালো ভাবে বেচে থাকার জন্য চান প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা।
এসব নিয়ে আকলিমা বেগমের স্বামী আব্দুল হামিদ মোড়লের সাথে কথা বলতে চাইলে অসুস্থ ও বৃদ্ধ আব্দুল হামিদ মোড়ল তার ভাঙা গলায় ছোট ছোট করে বলেন, শরীর খুব একটা ভালো না,বয়স হয়ে গেছে, গলা বসে গেছে, চলতে পারিনা ঠিকমতো, ভাত খেতে পারিনা, ভাত খেতে গেলে বুকে ভাত বাধে, বুকে ভাত বেধে একদিন মরে যাচ্ছিলাম। ধুলিহরের তপন ডাক্তারকে দেখাচ্ছি গলার জন্য। এম,বি,বিএস ডাক্তার দেখানোর পুজি নাই। ছেলের কথা জিজ্ঞা জিজ্ঞাসা করলে আব্দুল হামিদ মোড়ল বলেন, ঝড় বৃষ্টি হয়ে গেলো ছেলে কোন খোঁজ খবর নেয়নি।বৌমাকে শশুর বাড়ি রেখে ছেলে ভাটায় থাকে। ভাটার থেকে ফিরে দীর্ঘদিন পরে এসে, গত ২৭ তারিখ শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি এসেছিলো। শনিবার সকালে চলে গেছে।
কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পান নাকি? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল হামিদ মোড়ল বলেন, আমরা সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনে। অন্যের বাড়ি মাইনে খেটে বাড়ি আসার পরে মেম্বর কে বললাম একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দাও। কিন্তু মেম্বর আসতেছে, আসতেছে, হবেনে, হবেনে করে কয়েকবার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং ছবি নিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। হঠাৎ পাশথেকে আব্দুল হামিদ মোড়লের স্ত্রী আকলিমা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ৩/৪ মেম্বর এর আমল গড়ায় গেলো কিন্তু আমাদের কেউ কিছু দেয়নি। যেসময় ১০ টাকার চাউলের কার্ড করে দিচ্ছিলো সবাইকে সেই সময় মেম্বরকে বার বার বলার সত্ত্বেও আমাদের ১০ টাকার চাউলের কার্ড করে দেয়নি। এই পর্যন্ত দুই ঈদে দেওয়া চাউল ছাড়া সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনে আজ পর্যন্ত। তবে চ্যেয়ারমান এর সাথে এব্যাপারে কখনো আমি কথা বলিনি।তবে ওয়ার্ডের মেম্বর মহিলা মেম্বর এর সাথে এসব নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি।
এদিকে একমাত্র ছেলে বাবুল বলে আমার যা কিছু আছে আমি তোমাদের খেতে দিতে পারবো না। মেয়েদের কথা জিজ্ঞাসা করলে আকলিমা বেগম বলেন, মেয়েদেরতো খুব ভালো আর্থিক অবস্থা নাই যে তারা আমাদের দেখাশোনা করবে। তাদেরও তো সংসার আছে। বড় মেয়েটা নিকটে বিয়ে দেয়া এজন্য বড় মেয়ে জামাই একটু দেখাশোনা করে। আর ছোট মেয়ে তো অনেক দূরে বিয়ে দেয়া ইচ্ছা থাকলেও দেখাশোনা করবে কিভাবে ?
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে কিনা জানতে চাইলে আকলিমা বেগম প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি কোন অনুদান আমারা পাইনে।আর আমার স্বামী ও কোনো কাজ কাম করতে পারেনা।এজন্য প্রশাসন যদি আমাদের জন্য কোনো সরকারি সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করতো তাহলে যে কয়টা দিন কাটাতাম একটু ভালো ভাবে দিন গুলো কাটাতে পারতাম।
অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির একমাত্র ছেলে মোঃ বাবুল আক্তার জানান, আব্বা – আম্মার সাথে একটু রাগারাগি করে বাড়ির থেকে স্ত্রীকে নিয়ে চলে এসেছিলাম। আর আব্বা- আম্মাকে কথা বলেছি সেগুলো রাগের মাথায়।আমাদের গোলযোগ মিটে গেছে। আমি আব্বুর আম্মুর একটা ছেলে তাদের দ্বায়িত্ব অবশ্যই আমাকে নিতে হবে।
ইউপি সদস্য তপন কুমার শীল বলেন, আমার ওয়ার্ডে বয়স্ক ভাতার কার্ড আমি সুষ্ঠু ভাবে বন্টন করেছি।যদি মোঃ আব্দুল হামিদ মোড়লের বয়স ৬৫ এর উপরে হয় তাহলে সে কার্ড পাওয়ার যোগ্য।