
মোমিনুর রহমান, দেবহাটা: দেবহাটার বহুল আলোচিত সাপমারা খাল খননের ফলে একদিকে যেমন নাব্যতা হারানো খালটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসণ সহ মানুষ অবর্ণণীয় সুবিধা পাবে, অপরদিকে ঠিক তেমনি খাল খনন কাজের প্রায় প্রত্যেকটি পদক্ষেপে নিয়ম-অনিয়মের কষাঘাতে সৃষ্ট সমস্যায় তীব্র ক্ষতির মুখে পড়ছেন উচ্ছেদ অভিযানে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানো হাজারো মানুষ। শুধু ঘরবাড়ি বা গুটি কয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়, যুগ যুগ ধরে প্রবহমান পারুলিয়ার সাপমারা খালের দুটি ব্রীজের মধ্যবর্তী স্থানে খালের একপাড় দখল করে নির্মিত স্থানীয় দেব কুমার বিশ্বাস (দেবু) নামের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বিলাস বহুল বাড়ী, ঔষধের ফার্মেসী সহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা রাতারাতি রেকর্ডীয় সম্পত্তি বনে যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযানে চরম হুমকির মুখে পড়তে বসেছে খালের অপর পাড়ে থাকা একটি ঈদগাহ ও পারুলিয়া মৎস্য সেডের বিস্তৃর্ন পেরিফেরি এলাকার বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে করে তীব্র ক্ষতির শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পারুলিয়া মৎস্য সেডের পেরিফেরি এলাকার অভ্যন্তরীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যবসায়ীরা। দেব কুমার বিশ্বাস সখিপুরের মৃত রবীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে। পারুলিয়া প্রধান সড়কের মুল ব্রীজটি থেকে সখিপুর বাজারগামী সড়কের ওপর থাকা ব্রিজটির দুরত্ব মাত্র কয়েকশ গজ। দুটি ব্রীজই যুগ যুগ ধরে দাড়িয়ে রয়েছে প্রবহমান সাপমারা খালের ওপর। দুটি ব্রীজের মধ্যবর্তী সাপমারা খালের এক পাড়ে চলাচলের রাস্তা সহ রয়েছে পারুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী মৎস্য সেড, ঈদগাহ ময়দান ও পেরিফেরি এলাকা জুড়ে রয়েছে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অপর পাড়ে অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সরাসরি খালের ওপর পিলার দিয়ে সরকারী যায়গা দখল করে নির্মিত নুর হোসেনের রিয়া স্টুডিও, দেব কুমার বিশ্বাসের জনতা ফার্মেসী ও বিলাস বহুল বাড়ী। পাশেই রয়েছে দেবুর ভাই চিত্ত’র মুদিখানা ও কনফেকশনারী দোকান। ব্রীজের প্রায় উপরেই রয়েছে শুভ মেডিকেল হল ও মাংসের দোকান সহ আরো কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা। এদিকে পারুলিয়া মুল ব্রিজের একপাশে রয়েছে মুনসুরের কাঠগোলা, কৈলাশের কাঠ এবং কাচের ঘর এবং অপর পাশে রয়েছে সোনার বাংলা রেস্তরা, আবজাল আর্ট সহ খালপাড়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের ঘোষনা অনুযায়ী দীর্ঘদিনের প্রবাহমান খালটির মধ্যভাগ থেকে দুপাশে সমানভাবে খননের জন্য উভয় পাশেই উচ্ছেদ অভিযান জরুরী। দুপাশে সমানভাবে খননের জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলে খালটির এক পাশের যাতায়তের রাস্তা সহ ঈদগাহ ময়দান ও মৎস্য সেডের বিস্তৃর্ণ পেরিফেরি এলাকা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং একই সাথে অপর পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হওয়ায় দুটি ব্রীজের মধ্যবর্তী স্থানে খালের প্রয়োজন মতো নুন্যতম জায়গা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সরাসরি প্রবহমান খালের উপর নির্মিত দেব কুমার বিশ্বাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিলাস বহুল বাড়ী কয়েক লক্ষ টাকা ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে রাতারাতি রেকর্ডীয় সম্পত্তি বনে যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযানে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে কেবল মাত্র এক পাড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ময়দান ও মৎস্য সেড সহ পেরিফেরি এলাকা। অপরদিকে দীর্ঘদিনের প্রবহমান খালের জায়গা দখল করে নির্মিত দেব কুমার বিশ্বাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিলাসবহুল বাড়ী রাতারাতি কালো টাকার বিনিময়ে কিভাবে রেকর্ডীয় সম্পত্তি বনে গিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের আওতা থেকে সরে যাচ্ছে তা নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, রাতারাতি রেকর্ডীয় সম্পত্তি বনে যাওয়া খালেও ওপর নির্মিত দেব কুমার বিশ্বাসের অবৈধ স্থাপনা বিগত বছরেরও চল্লিশ দিনের কর্মসুচীর আওতায় খাল খননকালে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ। তাই যাতে করে জেলা প্রশাসকের ঘোষনা অনুযায়ী পারুলিয়া দুটি ব্রীজের মধ্যবর্তী মৎস্য সেডের পেরিফেরি এলাকা জুড়ে খালটির দুপাশে সমানভাবে খননের জন্য উভয় পাশে আংশিক ভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে অন্তত মৎস্য সেড সংলগ্ন পেরিফেরি এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমুহ তীব্র ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায় সেজন্য জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।