মো: কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: এ যেন নতুন ঘাঁ এ পুরানো মলম লাগানোর ম্যারাথন। মেরামতের এক মাসে বেহাল দশা ও ৫৭ লক্ষ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর আবারও মেরামতের জন্য আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৫দিন) রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মেয়াদোর্ত্তীন কালুরঘাট রেলসেতু। এই সময়ের মধ্যে সকল যানবাহন এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় ও সাতনদী অনলাইনে গত ১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট রেলসেতুর বেহাল দশার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুন:রায় সেতু মেরামতের এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ৫দিন ১০ ঘণ্টা করে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই মেরামতে কি আগের মেরামতের চেয়ে কোন অংশে ভিন্ন হবে? নাকি মেরামতের কয়েক মাসের মাথায় পুন:রায় বেহাল দশায় ফিরে আসবে কালুরঘাট সেতু? গত ২৩ই জুলাই থেকে ১০ দিনব্যাপী ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু মেরামতের কাজ শেষ হলেও ১ মাসের মাথায় কালুরঘাট সেতুতে আবারও বড় বড় গর্ত সৃষ্টিসহ কাঠের পাটাতন ও ভাঙা রেলিং চোখে পড়ে। যেখানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে এখনও সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ হয়নি ও একবছরে যতবার ভেঙে যাবে ততবার সেতুর সংস্কার করার কথা জানিয়েছেন এবং পরিদর্শনে গিয়ে সেতুতে আবারও গর্ত সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বলেন দৈনিক সাতনদীকে জানান। এই সংস্কারের কাজ পেয়েছেন অনিমেশ বড়–য়া মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবি কনস্ট্রাকশন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দৈনিক সাতনদীতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদ প্রকাশের সত্যতা প্রমাণ হলেও মেরামতের এক মাস পর পুন:রায় মেরামতকৃত স্থানসমূহ আবারও মেরামত করতে হচ্ছে। সেতুর চলাচলকারী একাধিকজন মন্তব্য করেন যে, রেল কর্তৃপক্ষ নামে মাত্র সংস্কারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ঠিকাদারের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। টেকসই মেরামত ব্যতিত লোক দেখানে মেরামত করে যাচ্ছে এই জরাজির্ন রেলসেতুর।
প্রসঙ্গত, ৯০ বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে প্রতিবছর সেতুটি মেরামত করতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয় এ সেতু দিয়ে। বোয়ালখালী, পটিয়া ও সামপ্রতিক সময়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একটি অংশের মানুষ এই সেতুর উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী অংশে প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানার যানবাহন এই সেতুর উপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করে থাকে। এই সেতুর উপর ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মোটা অংকের টোলের বিনিময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার অতিরিক্ত বোঝায়কৃত যানবাহন চলাচল করে থাকে। যাতে যে কোন মূহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। সেতুর ইজারাদার আয়ুব আলী সেতুর উপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল ও মোটা অংকের টোল আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে গোপন সূত্রে জানা যায়।