আহাদুর রহমান জনি: নাশকতাকারী, খুনী, ডাকাত, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী এমন লোক সব মিলিয়েও ১ ভাগও নয়। মুষ্টিমেয় অপরাধীর কাছে ২২লক্ষ লোককে জিম্মি করতে দেয়া যাবে না। আমরা পুলিশরা তা হতে দেব না। ২৪ আগস্ট বুধবার জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল সেডে সাতক্ষীরা জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাগুলো বলেন সাতক্ষীরা জেলার নব নিযুক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসময় উপস্থিত ছিলেন, কালেরচিত্র সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম, চ্যানেল আই’র জেল প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াজেদ কচি আরটিভির জেলা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। সভায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সজীব খান(প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান (সদর সার্কেল), অন্যান্য অফিসারগন এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পর্যায়ক্রমে পুলিশ সুপার মহোদয় উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি, কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন।
বক্তব্যের শুরুতে স্মরণ করেন মহান স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্য,স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধাদের, পাশাপাশি সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন জেলা পুলিশ সুপার
নব নিযুক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ঐতিহ্যবাহী সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন বেষ্টিত একটি জেলা। যার দক্ষিণে বঙ্গপসাগর ও পশ্চিমে সুদীর্ঘ ১০২ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত। সাতক্ষীরা জেলার স্বাধীনতাত্তোর সব থেকে কঠিন সময় ২০১৩-১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। দেশ মাতৃকার সেবায় আমি কখনো পিছপা হইনি। নিজের জীবন বাজি রেখে শুধু কাজ করেছি সাতক্ষীরা জেলাবাসীর জন্য। সাতক্ষীরাবাসীর জানমাল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করণীয় আমি ২০১৩-১৪সালে করেছিলাম। সাতক্ষীরাকে আমি মন থেকে আমি অনেক ভালবাসি। যার কারণে বাংলাদেশ সরকার আমাকে সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে মনোনিত করেছেন। আমি সে জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আপনারা সমাজের দর্পন। এই সাতক্ষীরা জেলাবাসীকে সর্বপ্রকার আইনগত সহায়তা দিতে আপনাদের সহযোগীতার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলাকে সমুন্নত রাখবার জন্য যা যা প্রয়োজন সকল প্রায়শ আমি গ্রহণ করবো। আমি অবশ্যই এটুকু বলতে পারি আপনাদের সাথে শুধু সু-সম্পর্ক বজায়ই রাখবো না, আপনাদের কাছ থেকে আমি শিখবো জানবো আমাদের সাতক্ষীরার খেটে খাওয়া অসহায় নিরন্ন মানুষ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ভাইরা তথাপি আমার প্রাণের সাতক্ষীরা ২২ লক্ষ মানুষের জন্য আমি কাজ করে যাব।
পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়েছে আম্ফান, করোনা, ইক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এত কিছুর পরও বাংলাদেশ কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে উন্নত সমৃদ্ধিশীল দেশে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জার্মানির মত উন্নত দেশগুলোতে দেখা দিয়েছে জ্বালানির অভাব। আমাদের বাংলাদেশে এখনও তার তাপ লাগেনাই। আমি আশা করি বর্তমান সরকারের ভিশন ২০৩০ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যে কোন দেশের শান্তিশৃঙ্খলা দেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় এবং পূর্বশর্ত বলে আমরা জানি। দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা তখনই সফল ভাবে সম্পন্ন হয় যখন একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত ও স্থিতিশীল থাকে।
অতীতের সাতক্ষীরার ইতিহাস আমরা কোন ভাবেই সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই না। সাতক্ষীরা জেলার শাস্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা যে কোন মূল্যেই আমি বজায় রাখবো।
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহনে তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বলেন, মাদক সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আজ দেশে মাদক ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারী ব্যপকভাবে কমেছে বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা সবচেয়ে অগ্রগামী। এই ভূমিকা আপনারা অব্যাহত রাখবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পুলিশ ও জনতা যেই মাদকের সাথে জড়িত হোক তার সঠিক তথ্য আপনারা আমাকে জানাবেন। এটা আমার অনুরোধ।
পুলিশের বিষয়ে অনেক খবর অতিরঞ্জিত হয়। সেগুলোর দিকেও আপনারা খেয়াল রাখবেন। সাতক্ষীরা জেলায় ২২ লক্ষ জনগন। আমরা জনবান্ধব পুলিশিং করতে বদ্ধপরিকর। জনবান্ধব পুলিশিংয়ের পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাষ্ট্রের তৃতীয় নয়ন সাংবাদিকদের সহযোগীতা। আপনাদের সহযোগীতায় জনবান্ধব পুলিশিংয়েল অন্যন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করবো বলে আমি মনে করি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমি এক বিন্দুও ছাড় দিবনা।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, সাতক্ষীরা ২০১৩ সালের মত সহিংসতা হতে দেয়া হবে না। আপনাদের জন্য আমার দরজা ২৪ ঘন্টা খোলা। আপনাদের চোখ দিয়ে আমি দেখবো। অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাজের প্রত্যেকটি ধাপ ভাল খারপ মিলেই হয়। চেষ্টা সবাই করেছেন। আমিও চেষ্টা করবো। সকলে মিলে সহায়তা করলে সফলতা আসবেই। মানুষ মহামানব নয়। কথা দিচ্ছি মাদকের বিরুদ্ধে দূর্বার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবো।
এছাড়াও জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, যানজট নিরসন, জঙ্গিবাদ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ, সাইবার বুলিং, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ, যানজট নিরসন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও আস্থা অর্জন করে আইজিপি নির্দেশিত পুলিশি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।